এম. বেলাল হোসাইন : পত্রিকায় আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভূয়া নিয়োগপত্র প্রদান করে একটি চক্র হাতিয়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে র্যাব ও গোয়েন্দা বিভাগের সহযোগিতা কামনা করেছেন। বেকার এসব নারী পুরুষরা জানান, সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক দৃষ্টিপাত পত্রিকায় গত ১০ আগস্ট তারিখে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার অনুমোদিত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে উপজেলা মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, যশোর, বাগেরহাট, নড়াইল ও খুলনা জেলার প্রতিটি থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পুষ্টি, মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কৃষি, নার্সারী ও বনায়ন, পরিবার পরিকল্পনা ডেনমার্কের আর্থিক ও কারিগরী সহযোগিতায় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপজেলা মা ও শিশু স্বাস্থ্য কাজ করতে আগ্রহী বাংলাদেশী পুরুষ ও মহিলাদের নিকট দরখাস্ত আহ্বান করা যাচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে থানা ব্যবস্থাপক পদে ১৯ জন (বেতন ১৯ হাজার টাকা মাসে) অফিস সহকারী পদে ৫২জন (বেতন মাসে ১২ হাজার টাকা), ইউনিয়ন পরিদর্শক পদে ৭৮জন (বেতন ১৪হাজার টাকা), প্রোগ্রাম অফিসার পদে ৩৯জন (বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা) এবং স্বাস্থ্যকর্মী পদে ১২০ জন (বেতন প্রতিমাসে ১০হাজার ৫০০টাকা) নিয়োগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে ২০আগস্টের মধ্যে ১৬৬, মজিদপুর, সাভার, ঢাকা-১৩৪০ এই ঠিকানায় বিধি মোতাবেক ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের ফটোকপি ও নাগরিক সনদ/ জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি সহ আবেদন করতে বলা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে একটি ফোন নং ও দেওয়া হয়। নাম্বার হলো ০১৮২৯৮৮৬৭৭৯। আবেদনের সময় উত্তীর্ণ হবার পর ঢাকার সাভারের ওই অফিস থেকে নিজকে রিয়া পরিচয় দিয়ে ০১৭৯০৭৩৩২৪১ নং মোবাইল ফোন থেকে প্রত্যেক আবেদনকারীর কাছে কথা বলে তাদের চাকরি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন। তিনি আবেদনকারীদের বলেন দু’এক দিনের মধ্যে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে নিয়োগপত্র পাবেন। নিয়োগপত্র পাবার আগে অফিস খরচ বাবদ ০১৭১৫৯৯০৬০৯ নং মোবাইল ফোনে বিকাশে ৬৫০ টাকা পাঠাতে বলা হয়। চাকরি প্রার্থী প্রত্যেকেই ওই নাম্বারে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পাঠিয়ে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে নিয়োগপত্র উত্তোলন করেন। নিয়োগ পত্রে ১০সেপ্টেম্বর যোগদানের কথা উল্লেখ থাকলেও কোথায় কোন অফিসে যোগদান করতে হবে তার কোনো উল্লেখ নেই। ৯ সেপ্টেম্বর নিয়োগপত্র নিয়ে প্রার্থীরা মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঠিকানা জানার জন্য সাংবাদিকদের কাছে ফোন করেন। তারা সরকারি মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়েও ঠিকানা ম্যানেজ করতে না পেরে ঢাকার সাভারের ওই অফিসের নাম্বারে ফোন করলে বিকাশ নাম্বারটি ছাড়া অন্য দুটি নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার ৮টি থানা ও ৭৮টি ইউনিয়ন, যশোর জেলার ৮টি উপজেলা ও ৯২টি ইউনিয়ন, বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলা ও ৭৭টি ইউনিয়ন, নড়াইলের ৩টি উপজেলা ও ৩৭টি ইউনিয়ন এবং খুলনার ৯টি উপজেলা, ৫টি মেট্রোপলিটন থানা, ৩১টি সিটি কর্পোরেশন ওয়ার্ড ও ৭৪টি ইউনিয়ন থেকে ৫টি পদে কয়েক হাজার বেকার ব্যক্তি আবেদন করেন। প্রত্যেক আবেদনকারির নিকট থেকে বিকাশের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে ৬৫০টাকা করে। সূত্র জানায়, ৩৫৮টি ইউনিয়ন, ৩৬টি উপজেলা ও ৫টি মেট্রোপলিটন থানা থেকে কমপক্ষে ৪হাজার বেকার যুবক আবেদন করে। প্রত্যেকের নিকট নিয়োগপত্র পাঠিয়ে চক্রটি হাতিয়েছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। এদিকে ঢাকার সাভারের সেই অফিসে হিসাব বিভাগের ০১৭১৫৯৯০৬০৯নং মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে কেউ ফোন রিসিভ করেননি। কথিত রিয়া ম্যাডামের ০১৭৯০৭৩৩২৪১ এবং অফিসের ০১৮২৯৮৮৬৭৭৯ নাম্বারের ফোন দুটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে রিয়া ম্যাডামের মোবাইল ফোন শুক্রবার রাত থেকে বন্ধ রয়েছে। এর আগে তার নাম্বারটি খোলা ছিলো বলে জানান ভুক্তভোগীরা। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো নিয়োগ সম্পর্কে তার জানা নেই। সাতক্ষীরায় ওই ধরনের কোনো অফিস আছে কি না সেটিও তার জানার বাইরে। বেসরকারি সংস্থা আরা’র নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম বলেন, পত্রিকায় লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে একটি চক্র এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি এব্যাপারে আইন প্রয়োগ সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।