আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির কারণে সেখান থেকে এই অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর ঢলে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ভারত। রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ করে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার ওপর ভারত জোর দিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয় শনিবার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের চলমান সহিংসতা নিয়ে এই প্রতিক্রিয়া জানায়। রাতে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমারের টুইটে এই বিবৃতি প্রচার করা হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী শনিবার ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করেছেন। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের অন্তহীন স্রোত বাংলাদেশকে কী দুঃসহ পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করিয়েছে, হাইকমিশনার তা জয়শঙ্করকে জানান। বাংলাদেশ চায়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারত তাদের পাশে থাকুক। উদ্বেগ জানিয়ে ভারতের বিবৃতি: ভারতের পররাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির কারণে সেখান থেকে এই অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর ঢলে ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা এর আগে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছিলাম। দুই দেশ এরই মধ্যে সন্ত্রাসবাদ দমনে তাদের কঠোর অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছে এবং কোনো যুক্তিতেই সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেবে না।’ সম্প্রতি মিয়ানমার সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও নিরপরাধ লোকজনের মৃত্যুতে উদ্বেগ জানিয়েছেন। শান্তি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ন্যায়বিচার, মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তিনি সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে রাখাইন রাজ্যের উন্নয়ন কর্মসূচিতে সহায়তা দেবে ভারত। রবীশ কুমার বলেন, ‘আমরা সংযতভাবে এবং পরিপক্বতার সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি বেসামরিক লোকজনের কল্যাণের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে রাখাইনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আহ্বান জানাই। রাজ্যটিতে সহিংসতা বন্ধ করে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি।’ ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ : রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী আজ দেখা করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের অন্তহীন স্রোত বাংলাদেশকে কী দুঃসহ পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করিয়েছে, হাইকমিশনার তা জয়শঙ্করকে জানান। বাংলাদেশ চায়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারত তাদের পাশে থাকুক। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, মুয়াজ্জেম আলীকে জয়শঙ্কর বলেছেন, সাম্প্রতিক এই গোলমালের পর কয়েক হাজার রোহিঙ্গা ভারতেও চলে এসেছে। রোহিঙ্গাদের যেভাবে রাখাইন রাজ্য থেকে মিয়ানমার পুলিশ ও সামরিক বাহিনী উৎখাত করছে, সে বিষয়ে ভারত এখনো নীরব। সম্প্রতি সেই দেশ সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বিষয়ে একটি কথাও বলেননি। উল্টো রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে যে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ চালানো হয়েছিল, ভারত তার নিন্দা করে মিয়ানমার সরকারের পাশে দাঁড়ায়। বালি ঘোষণাপত্রেও রোহিঙ্গা সমস্যার উল্লেখ থাকায় ভারত তাতে সই করেনি। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সমস্যা কী বিপুল প্রভাব ফেলেছে, জয়শঙ্করকে মুয়াজ্জেম আলী তা বোঝান। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলা এই সমস্যার সমাধান হওয়া একান্তই জরুরি। আঞ্চলিক স্বার্থেই একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান প্রয়োজন। ভারতে ইতিমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত, এদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানো হবে। সরকারের এই উদ্যোগ রুখতে রোহিঙ্গাদের পক্ষে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থে মামলা করা হয়েছে। পাল্টা মামলা করেছেন বিজেপির সাবেক শীর্ষ কর্তা কে এনগোবিন্দ চারিয়া। রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের বিরুদ্ধে বাংলাদেশও। সে কথা জয়শঙ্করকেও বলা হয়েছে। পাশাপাশি সমস্যার মানবিক দিকটাও তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ চায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারত সক্রিয়ভাবে তাদের পাশে থাকুক।