আন্তর্জাতিক

পশ্চিমাদের তেল-গ্যাসের ক্ষুধা মেটাতেই রোহিঙ্গানিধন-ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির বিবৃতি

By Daily Satkhira

September 10, 2017

রাখাইন রাজ্যের বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ ‘ক্ষুধার্ত’ পশ্চিমা করপোরেট গোষ্ঠীর হাতে তুলে দিতেই মিয়ানমারের সরকার সেনাবাহিনীর মাধ্যমে নিধনযজ্ঞ চালিয়ে রোহিঙ্গাদের স্বভূমি থেকে বিতাড়ণের ‘কৌশল’ নিয়েছে বলে মনে করে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই)।

মিয়ানমার ভারতেরও প্রতিবেশী। দেশটির সঙ্গে ভারতের এক হাজার ৬০০ কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত রয়েছে। ভারতে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছে। এদের মধ্যে ১৬ হাজার জাতিসংঘের নিবন্ধিত।

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির এই বিবৃতি এমন একটি সময়ে এল, যার একদিন আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার সফর করে দেশটির পরামর্শদাতা অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন। মোদি ‘রাখাইন রাজ্যে চরমপন্থী সহিংসতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা, নিরীহ জনগণের জীবন আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারে’ উদ্বেগ প্রকাশ করলেও মিয়ানমানের সেনাবাহিনীর নির্যাতন নিয়ে টু শব্দটি পর্যন্ত করেননি।

সিপিআই সাধারণ সম্পাদক সুধারাম রেড্ডি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘বোঝা যায়, এতে মোদি নিজস্ব সাম্প্রদায়িক-ভেদনীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।’

গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের’ সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এই হামলার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। সেখান থেকে পালিয়ে আসার রোহিঙ্গাদের দাবি, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্বাচারে গ্রামের পর গ্রামে হামলা নির্যাতন চালাচ্ছে। নারীদের ধর্ষণ করছে। গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে।

জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাব মতে, নতুন করে সহিংসতা সৃষ্টির পর প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা এরই মধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বিপদসঙ্কুল নদী ও সমুদ্রপথ পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছেন শতাধিক মানুষ।

রোহিঙ্গাদের অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে সিপিআই সাধারণ সম্পাদক তাঁর বিবৃতিতে বলেন, ‍“গত কয়েক বছর ধরেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর ধারাবাহিকভাবে হামলা-নির্যাতন চালানো হচ্ছে, কিন্তু এখন এটা ‘জাতিগত নিধনে’র পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাতে শুধু হাজার হাজার নীরিহ সাধারণ মানুষকেই হত্যা করা হচ্ছে না উপরন্তু লাখ লাখ মানুষ যাতে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে আশ্রয় নেয় সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।”

‘রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে বিতাড়িত করার পেছনের কারণ হচ্ছে, পশ্চিমা করপোরেটের ক্ষুধা। তাঁরা রাখাইন রাজ্যের বিপুল তেল ও প্রাকৃতিক সম্পদ চুরি করতে চায়। হামলা-হত্যা-হুমকির মাধ্যমে রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের মাধ্যমে মিয়ানমানের সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক নেতারা পশ্চিমা করপোরেট গোষ্ঠীর সেই দাবিই মেটাতে চান’, যোগ করে সিপিআই।

শান্তিতে নোবেলজয়ী মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় পরামর্শদাতা অং সান সু চির সমালোচনা করে সিপিআই নেতা বলেন, ‘অবিশ্বাস্যভাবে সু চি শুধু এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থই হননি, তাঁর নীরব দর্শকের ভূমিকা সেখানে বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ করে দিয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির প্রথম দ্বিপাক্ষিক মিয়ানমার সফরের কথা উল্লেখ করে সুধারক রেড্ডি বলেন, ‘সফরের সময় নরেন্দ্র মোদি এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো আলোচনা না করেই মিয়ানমার সরকারের ভাষ্যকেই সমর্থন করেছেন, যেন এটি একটি উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসের সমস্যা। বেশ বোঝা যায়, এতে নরেন্দ্র মোদি নিজস্ব সাম্প্রদায়িক-ভেদনীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।’

সমস্যার স্থায়ী সমাধান হিসেবে রাখাইন রাজ্যবিষয়ক জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের উপর জোর দিয়েছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি। এ ব্যাপারে ভারতকে উপযুক্ত কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

ভারত তাঁর দেশে আশ্রিত ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর যে উদ্যোগ নিয়ে সেটার বিরোধিতা করে সুধাকর রেড্ডি বিবৃতিতে আরো বলেন, ‘ভারতরকে এই অবস্থান পরিত্যাগ করতে হবে। স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গারা ভারতের শরণার্থীর মর্যাদায় অবস্থান করবে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগের অধিকার দিতে হবে।’