দেবহাটা

নীতিমালা না মেনে ইট ভাটা নির্মাণ: দেবহাটায় ছকিনা ব্রিকসকে পরিবেশ অধিদপ্তরের নোটিশ

By Daily Satkhira

September 10, 2017

আসাদুজ্জামান : সাতক্ষীরায় পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালা লংঘন করে ও প্রশাসনের পূর্বানুমতি ছাড়াই দেবহাটার দক্ষিণ কুলিয়া গ্রামে বসতবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সন্নিকটে চার ফসলি জমিতে প্রস্তাবিত ছকিনা ব্রিকস নামের ইট ভাটা নির্মাণ কাজ অব্যহত রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসির অভিযোগে ভিত্তিতে ভাটা মালিক মোশারফ হোসেন মুসাকে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। একই সাথে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভাটার যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশও প্রদান করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মধ্যম একসরা গ্রামের দ্বীন আলী গাজির ছেলে শহরের ইটাগাছা কামার পাড়া (বউ বাজার) এলাকায় বসবাসকারি নব্য কোটিপতি মোশারফ হোসেন ওরফে মুসা দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ কুলিয়া গ্রামে বসতবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সন্নিকটে চার ফসলি জমিতে প্রস্তাবিত ছকিনা ব্রিকস নামে একটি ইট ভাটা নির্মাণ কাজ শুরু করেন। উচ্চমূল্যে হারির টাকা দিয়ে জমির মালিকদের প্রলুব্ধ করে তিনি ডিড নেয়ার চেষ্টা করেন। এছাড়া স্থানীয় কয়েকজন মাদকসেবি যুবকদের টাকা দিয়ে তিনি ভাটা নির্মাণের পক্ষে কাজ করাচ্ছেন। মুছার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তারা ডিডে স্বাক্ষর করার জন্য জমির মালিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন। একই সাথে তারা বর্গাচাষিদের জমি ছেড়ে দেয়ার জন্য হমকি দিচ্ছে। জমির ডিড না দিলে পুলিশ দিয়ে সংশ্লিষ্টদের ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ আপত্তি করা শর্তেও পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালা অমান্য করে ও প্রশাসনের পূর্বানুমতি ছাড়াই ইতিমধ্যে তিনি সেখানে ভাটার চিমনি ও মটর নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। ভাটার বাকি কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এলাকাবাসি জানান, সেকেন্দ্রা মাঠে ইটভাটা নির্মাণ করা হলে এই এলাকায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যায় দেখা দেবে। এই এলাকায় আনসার আলি সরকারি প্রাইমারি স্কুল, কুলিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, দক্ষিন কুলিয়া এবতেদায়ি মাদ্রাসা এবং কুলিয়া এলাহী বক্স দাখিল মাদ্রসা, কুলিয়া জামে মসজিদসহ কয়েকটি প্রতিষ্টান রয়েছে। এখানে ভাটা হলে কালো ধোয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। একই সাথে নষ্ট হবে এই এলাকার হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল। এখানকার প্রতিটি জমিতে বছরে কমপক্ষে চারটি করে ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। এই ফসলি জমিতে ইটভাটা হলে তার ক্ষতিকর প্রভাবে সর্বশান্ত হবে এখানকার দীনমজুর, দরিদ্র কৃষক ও বর্গাচাষিরা। বসতবাড়ি ছেড়ে এলাকা ত্যাগ করতে হবে শতাধিক পরিবারের। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে এলাকার প্রাণবৈচিত্র্য। বিপন্ন হবে মানুষের স্বাস্থ্য। তারা অভিযোগ করে বলেন, ভাটা নির্মাণের ক্ষতিকর বিষয় সর্ম্পকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়ে কোন ফল হয়নি। প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং ভাটা মালিক মুসা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দক্ষিন কুলিয়া এলাকায় ফসলি জমিতে প্রস্তাবিত ছকিনা ব্রিকস নামের ইট ভাটার নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। একই সাথে ইট ভাটার বিরোধীতাকারি গ্রামবাসীদেরকে সন্ত্রাসীদের দিয়ে নানাভাবে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এদিকে, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন মুসার ইট ভাটার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর পক্ষে দেবহাটার দক্ষিন কুলিয়া গ্রামের মৃত হেবাজউদ্দিন গাজীর ছেলে মোঃ আজহারুল ইসলাম পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত ছকিনা ব্রিকস নামের ইট ভাটা মালিক মোশারফ হোসেন মুসাকে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। একই সাথে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভাটার যাবতয়ি কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশও প্রদান করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মো. সাইদুর রহমান গত ২৯ আগস্ট তাকে এই নোটিশ প্রদান করেন। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও এই নোটিশের অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে। এরপরও তিনি ভাটার কার্যক্রম বন্ধ না রেখে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমরা তাকে ভাটা নির্মাণের কোন অনুমতি দেইনি। অভিযোগ পেয়ে সেখানে একজন অফিসারকে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু এলাকার লোক অনেকেই ভাটার পক্ষে বিপক্ষে কথা বলেছেন। পরিবেশের অনুমতি নিয়েই ভাটার কাজ শুরু করার কথা থাকলেও এখানকার লোক উল্টোটা করে। এরপরও আমি পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে কথা বলবোÑ বলে তিনি জানান।