আন্তর্জাতিক

‘তল্লাশির সময় শিশুদের আছাড় মেরেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী’

By Daily Satkhira

September 11, 2017

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত কয়েকদিনে ঘরে-ঘরে তল্লাশির সময় পুরুষদের না পেলেই শিশুদের আছাড় মেরে বাইরে ফেলেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপরই ঘরে আগুন দিয়ে ভিটেমাটি ছাড়া করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। এ ঘটনায় শিশুদের কোমরের হাড় ভেঙে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রবিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

মংডুর কুলাবিল এলাকায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী এমন তাণ্ডবের পর বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন রোহিঙ্গা হাবিবুল্লাহ (৪০)। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে মো. ইরফান (৭) তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তো। তাকে মিলিটারিরা ঘর থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ায় তার কোমরের হাড় ভেঙে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রী রমিদা ও চার সন্তান নিয়ে কুলাবলি এলাকার বাড়িতে থাকি। গত ৬ সেপ্টেম্বর দিনে মিলিটারি আসে। তারা এসেই ঘরে প্রবেশ ঢুকে তল্লাশি শুরু করে। আরসা, আরসা বলতে থাকে। এরপর সবাইকে ঘর থেকে বের করে দেয়। বাচ্চারা বের হতে দেরি করলে তাদের ধরে ধরে আছাড় মেরে বাইরে ফেলে দেয়। এতে আমার ছেলে ইরফানের কোমরের হাড় ভেঙে যায়। এরপর আমরা বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে আমাদের ঘরে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়।’

হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে চার দিন জঙ্গলে ও পাহাড়ে ছিলাম। আজ বিকাল ৩ টায় বাংলাদেশ সীমান্তে আসি। কিন্তু নৌকা না থাকায় পার হতে পারিনি। এরপর পানি কমে গেলে আসি।’

এই রোহিঙ্গা শরণার্থী বলেন, ‘আমার পরিবারের ১১জন এসেছি। চার দিন ধরে কিছু খাইনি। কোনও গ্রামেই লোক নেই। সবাই চলে এসেছে। যাদের টাকা-পয়সা আছে, তারাও চলে এসেছে নৌকা ভাড়া করে। ছেলেকে কোথায় চিকিৎসা করাব, তাও জানি না।’

হাবিবুল্লাহর সঙ্গে কথা বলার সময় তার ছেলে ইরফান গাছের নিচে বসা ছিল। তিনি ছেলেকে ধরে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু শিশুটি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। শিশুটির বাবা বলেন, ‘আমাদের গ্রামে আর কোনও মানুষ নেই। আমি আগেই আসতাম। কিন্তু বুড়ো বাবা-মা আর কোমর ভাঙা ছেলেকে নিয়ে এতদিন জঙ্গলে জঙ্গলে থেকেছি। তাই দেরি হয়েছে।’

রবিবার সারাদিন টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। তবে প্রথম দিকের চেয়ে এখন তুলনামূলক কম। রাতের বেলা তারা অন্ধকারে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে অপেক্ষা করে। এরপর আগে আসা স্বজনরা তাদের জেলে নৌকায় করে নিয়ে আসেন।

আজিদা নামে এক নারী রবিবার সন্ধ্যায় কাইঞ্চারপাড় সীমান্ত দিয়ে পার হয়ে টেকনাফ এসেছেন। তার স্বামীর নাম আজিমুল্লাহ। মুংডুর কেয়ারিং প্রাং এলাকায় থাকেন। তার দুই বছরের মেয়ের নাম রাশিদা। তার স্বামী আজিমুল্লাহ এতদিন পালিয়ে ছিলেন। বাড়িতে ঢোকার সুযোগ পাননি। তাই মা-মেয়ে বাংলাদেশে আসতে পারেননি। তার বাবা-মা আগেই এসেছেন। স্বামী ৯ সেপ্টেম্বর রাতে বাড়িতে যান। এরপর তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে আসেন।

উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনী নির্যাতন চালালে আশ্রয় নিতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গারা।