মাহাফিজুল ইসলাম আককাজ : ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিক্সার লাইসেন্সের নামে চাঁদাবাজিতে নেমেছে সাতক্ষীরা পৌরসভা। সাতক্ষীরা পৌর এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা/ইজিবাইক চলাচলের জন্য ২০১৭-১৮ অর্থ-বছরে লাইসেন্সের নামে অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা করে আদায় করছে। যা সম্পূর্ণ অবৈধ। খুলনা বিভাগীয় শহরসহ দেশের অন্যান্য জেলাগুলোতে এধরনের অবৈধ অটোরিকশার লাইসেন্সের নামে পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন কোন প্রকার অর্থ গ্রহণ করে না। এত কের বিপাকে পড়েছে অসহায় ইজিবাইক চালকরা। বিআরটিএর যানবাহন লাইসেন্স ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ নানা অজুহাতে যেখানে ট্রাফিক পুলিশের কবলে পড়তে হয় অন্যান্য যানবাহনের চালকদের, সেখানে পৌরসভার দেওয়া একটি নি¤œমানের স্টিকার লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ এই অবৈধ যানবাহনগুলোর লাইসেন্স দেওয়ার এখতিয়ার বিআরটিএ কর্তৃপক্ষেরও নেই। সূত্র মতে, সাতক্ষীরা পৌরসভা অবৈধ এই সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে শহরের পৌর এলাকায় বর্তমানে ইজিবাইক ও অটোরিকশার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজারের অধিক। বিপুল পরিমাণ এই অবৈধ যানবাহনের কারণে পৌর এলাকায় যেমন বেড়েছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে যানজট। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিকশা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গড়ে প্রতিদিন অন্তত ৪/৫জন রোগী সদর হাসপাতালসহ অন্যান্য বেসরকারী ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে। এর মধ্যে আবার অনেকে মৃত্যুর কোলেও ঢলে পড়েছে। সম্প্রতি শহরে চলাচলকারী অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিকশা থেকে লাইসেন্স ফি’র নামে প্রকাশ্য চাঁদাবাজিতে নেমেছে সাতক্ষীরা পৌর কর্র্তৃপক্ষ। সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কয়েক দিন ধরে সাতক্ষীরা পৌরসভার কর্মচারীরা ইজিবাইক চালকদের হুশিয়ারী দিয়ে জানিয়েছে দ্রুত পৌরসভা থেকে রেজিস্ট্রেশন না নিলে তারা পৌর এলাকায় ইজিবাইক চালাতে পারবে না। এরকম সমস্যার সম্মুখীন হয়ে শহরের মুনজিতপুর এলাকার এলাহী বকস্ এর ছেলে ঈশার আলী নগদ ৪ হাজার টাকা ও অনেক কষ্টের সঞ্চয় করা মাটির ঘট ভেঙে ১ হাজার টাকার কয়েনসহ মোট ৫ হাজার টাকা নিয়ে পৌরসভায় হাজির হলে রেজিস্ট্রেশন শাখা থেকে কয়েন নিতে অপরাগতা প্রকাশ করে তাকে বের করে দেয়া হয়। অনেক হয়রানীর স্বিকার হয়ে ৫ হাজার টাকা জমা দিলে তাকে রেজিস্ট্রশন প্রদান করা হয়। এধরনের হয়রানীর স্বিকার হচ্ছে অনেক ইজিবাইক চালকরা। ভূক্তভোগী চালক আজগার আলী, শাহিন আক্তার ও নাহারুল ইসলামসহ অনেকে জানান, আগে আমরা ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালাতাম। প্রশাসন তা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে পেটের দায়ে সমিতি থেকে লোন তুলে পরিবেশ বান্ধব ইজিবাইক কিনেছি। কিন্তু ইজিবাইক চালাতে গিয়ে নানা ধরনের হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। এভাবে আমাদের আর কত জায়গায় লাইসেন্স দেওয়ার নামে টাকা দিতে হবে? ইতিপূর্বে সংগঠনের নির্ধারিত ফি দিয়ে ইজিবাইক চালাচ্ছিলাম। এর পরেও পৌরসভায় ৫ হাজার টাকা দিয়ে লাইসেন্স নিতে হবে। না নিলে আমাদের পৌর এলাকায় ইজিবাইক চালাতে দেবেনা। এতো গরীব মারার ফাঁদ। সাতক্ষীরা পৌর সভার লাইসেন্স পরিদর্শক মো. জুলহজ বলেন, গত ইংরেজি ২৭ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মোট ৬৮টি ইজিবাইকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অবৈধ এ যানবাহনের অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন। এব্যাপারে বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ব্যাটারি অটোরিক্সা/ইজিবাইক রেজিষ্ট্রেশনের ব্যাপারে বিআরটিএ’র কোন অনুমোদন নেই। এটা অবৈধ যানবাহন। এটা যদি কেউ রেজিষ্ট্রেশনের টাকা নেয় তাহলে আইনগতভাবে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি বলেন, পৌর এলাকায় হটাৎ ইজিবাইকের সরাগম ঘটে। ফলে তাদের শৃঙ্খলা রক্ষা ও পৌরসভার রাস্তা ব্যবহারের জন্য সিরিয়াল নং এবং অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এজন্য প্রত্যেক ইজিবাইক চালকের নিকট হতে রশিদের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। অবৈধ এ যানবাহনের অনুমোদন দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্য কয়েকটি জেলায় পৌরসভা কর্তৃক এভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সচেতন মহল ও ভুক্তভোগীদের দাবী, সাতক্ষীরা পৌরসভার রাস্তাঘাট, ড্রেন, কালভার্ট, রোড লাইটসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান না করে ইজিবাইক চালকদের লাইসেন্সের নামে অর্থ বাণিজ্য খুবই বেদনাদায়ক। সাধারণ নাগরিক সেবা ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে পৌর কর্তৃপক্ষকে কাজ করতে হবে।