আজকের সেরা

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের কোটি কোটি টাকা পিতার নামের প্রতিষ্ঠানে নিচ্ছেন সেই মাহবুব

By Daily Satkhira

September 11, 2017

নিজস্ব প্রতিবেদক : জেলা পরিষদের আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পরিচালিত হচ্ছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহরে মুক্তিযোদ্ধা চেয়ারম্যান স. ম আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমাখানা। জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত এসএম মাহবুবুর রহমান একই স্থানে ২৭ বছর কাজ করার সুবাদে পেশি শক্তিকে ব্যবহার করে তিনি তার বাবার নামে এ প্রতিষ্ঠান তৈরি করে জেলা পরিষদ থেকে নেওয়া ও প্রকল্প বরাদ্দ বাবদ কয়েক কোটি টাকা শিক্ষক- কর্মচারিদের বেতন, শিক্ষার্থীদের বোর্ডিং খরচ ও অবকাঠামো উন্নয়নের নামে বেআইনিভাবে এসব টাকা অপচয় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদ আইন ২০০০ এর ২৭(৩) ধারা মোতাবেক প্রথম তফশীলের দ্বিতীয় অংশ ঐচ্ছিক কার্যাবলীর (গ) ২৬ মোতাবেক ২০১৩ সালের ৮ মে ও ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি ৪৮(২) গ ধারার বিধান রেজিষ্ট্রি দলিল মূলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের স্থাবর সম্পত্তি জেলা পরিষদে দান গ্রহণ পূর্বক উহা জেলা পরিষদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রেজিষ্ট্রেশন পরবর্তী উক্ত প্রতিষ্ঠানের অস্থাবর সম্পত্তি সমূহ জেলা পরিষদ কর্তৃক গ্রহণ করা হয়। সেই থেকে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের নিজস্ব মালিকানায় ও অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। এ দিকে জেলা পরিষদ থেকে সংগৃহীত আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমখানা সম্পর্কিত কাগজপত্র ও চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির পরিদর্শণ প্রতিবেদনের বিভিন্ন অংশে ভিন্নতা থাকায় জেলা পরিষদের টাকা তছরুপের বিষয়টি জেলাব্যাপি আলোড়ন তুলেছে। চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের নব নির্বাচিত সদস্য মীর জাকির হোসেন, শিল্পী রানী মহালদার ও সৈয়দ আমিনুর রহমান স্বাক্ষরিত সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের মালিকানাধীন‘ মুক্তিযোদ্ধা চেয়ারম্যান স.ম আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমখানা’ সরেজমিন পরিদর্শণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সালে প্রাথমিকভাবে স্থাপিত হয় ও ২০১৩ সালে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন(সাত- ১১৭৭/২০১৩) লাভ করে। ওই প্রতিষ্ঠানে দানপত্রের মাধ্যমে এক একর ২৩ শতক জমি দেখানো হয়। এদিকে গত পহেলা আগষ্ট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বার্হী এ.এন.এম মঈনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত কাগজপত্র থেকে জানা গেছে ২০১২ সালে আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমখানার কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের ৪৮৮০নং দানপত্র দলিলমুলে সাড়ে ২০ শতক জমি জেলা পরিষদে দান করেন আব্দুর রউফ কমপ্লেক্সের পক্ষে ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি এসএম মাহবুবুর রহমান। এ ছাড়া আরো ছয়জন দাতা মিলে এক একর আড়াই শতক জমি দান করেছেন উল্লেখ করলেও তার কোন দলিল পত্র হদিস মেলেনি। এমনকি ৪৮৮০ নং দলিলমুলে যে সাড়ে ২০ শতক জমি হস্তান্তর দেখিয়ে ২৮৩৬/৪ যে নামপত্তন জারি করা হয়েছে তাতে এসএ দাগ ৭৪৩০ দেড় শতক ও ৭৪৩০ এবং ৭৪৩২ দু’টি দাগে সাড়ে ছয় শতক মিলে মোট আট শতক জমি মাহাবুবর রহমানের নামে নামপত্তন দেখানো হয়েছে। এসএ ৭৪৩০ দাগটি বর্তমান জরিপে ১০৮৬৪ দাগের মোট ৬৪ শতক সম্পত্তির মধ্যে দানকৃত সম্পত্তি সাড়ে ১৬শতক কবরস্থান। বর্তমান জরিপে এসএ ৭৫২৩ দাগটি বর্তমান জরিপে ১০৮৫৯ দাগের মোট ৯৪ শতক সম্পত্তির মধ্যে দানকৃত সম্পত্তি সাড়ে ৪শতক ডাঙা। কিন্তু উক্ত চার শতক সম্পত্তির মালিক ধুলিহরের জনৈক আবুল কাশেম ও রাশিদা খাতুনের। সুতরাং এটা থেকে প্রমাণিত হয় যে উক্ত সম্পত্তি জেলা পরিষদের নামে দান দেখানো হলেও তার কোন বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায় না। অপরদিকে গত ১৯ ফেব্রুয়ারির পরিদর্শণ প্রতিবেদনে আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমখানার নামে মোট জমির পরিমান এক একর ২৩ শতাংশ দেখানো হয়েছে। অথচ গত পহেলা আগষ্ট জেলা পরিষদ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ি ওই প্রতিষ্ঠানের জমির পরিমান দু’ একর ১৯ শতাংশ। যার কাগজপত্রের কোন বাস্তবতা মেলেনি। অথচ জেলা পরিষদ উক্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ভার চালানোর লক্ষ্যে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা ও ওই প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে দু’ কেটি ১৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা অনুমোদন দিয়েছেন। অন্যদিকে পরিদর্শন প্রতিবেদনে অবকাঠামো ব্যয় দু’ কোটি ৩৮ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারির পরিদর্শণ প্রতিবেদন অনুযায়ি মতামত কলামে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত সকল ব্যাংক হিসাব বন্ধ করতঃ অন্যান্য সকল আয় জেলা পরিষদ তহবিলে জমা প্রদানের ব্যবস্থার নিমিত্তে আলাদা একটি ব্যাংক হিসাব খোলার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু জেলা পরিষদ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ি গত ২২ ফেব্রুয়ারি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক উক্ত প্রতিষ্ঠানের আয়ের অর্থ জমা রাখার জন্য‘ ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিঃ’ সাতক্ষীরা শাখায় হিসাব নং- ০১৪৬১২২০০০২০১৯৪ খোলা হয়েছে। যা’ জেলা পরিষদের নামে নয়। এ ছাড়া আব্দুর রউফ কমপ্লেক্ষ ও এতিমখানার আয়-ব্যয় জেলা পরিষদকে দেওয়া হয় না। উক্ত প্রতিষ্ঠানটি জেলা পরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত হলেও শিক্ষক -কর্মচারি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন সরকারি নিয়ম নীতি অনুসরণ করা হয়নি। আবার জেলা পরিষদ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ি শিক্ষক কর্মচারিদের বেতন নো ওয়ার্ক নো পে অনুযায়ি প্রদান করা হচ্ছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র ছাত্রদের শিক্ষা দেওয়া হয়। জেলা পরিষদ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ি মাটিয়াডাঙা ও ধুলিহর গ্রাম থেকে ২০ জন করে ছাত্র ভর্তি দেখানো হয়েছে। এবং মোট ছাত্র ২২০ জন দেখানো হলেও বাস্তবে এ সংখ্যা অনেক কম। ২০১৩ সালে শুরু থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত জেলা পরিষদ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ি শিক্ষক, কর্মচারির বেতন ও ছাত্রদের বোর্ডিং খরচ বাবদ এক কোটি দু’ লাখ সাত হাজার ১৪৬ টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু গত ১৯ ফেব্রুয়ারির পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুযায়ি তার পরিমান এক কোটি ৫৭ লাখ ৭৮ হাজার ৮৭৬ টাকা। অর্থাৎ তিন মাস ১২ দিনে শিক্ষক কর্মচারিদের বেতন ও শিক্ষার্থীদের বোডিং খরচ তো লাগেই নি বরং জেলা পরিষদের দেওয়া পরিসংখ্যান পরিদর্শণ প্রতিবেদনের চেয়ে ৫৫ লাখ টাকা কম দেখানো হয়েছে যা ’ পুকুর চুরির সামিল। স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, আব্দুর রউফ কমপ্লেক্সে ও এতিমখানার কর্মকা- জেলা পরিষদের আইন অনুযায়ি পরিচালিত হচ্ছে এটা বলা যাবে না। সেখানে মানা হয় না কোন সরকারি নির্দেশনা। তাই এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য সরকার কর্তৃক কোন নির্দেশনা পরিলক্ষিত হয় না। সেকারণে জেলা পরিষদ থেকে উক্ত প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে বরাদ্দকৃত ও প্রকল্প অনুমোদন বাবদ সকল টাকা নিয়ম বহির্ভুতভাবে প্রদান করা হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। তাই জনস্বার্থে এ ধরণের প্রতিষ্ঠানে সরকারি অর্থ বরাদ্দ অবলিম্বে বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবুর রহমানের সঙ্গে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী এএনএম মঈনুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, দীর্ঘ সময় ধরে আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমখানাটি পরিচালিত হচ্ছে। তৎকালীন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তারা বিষয়টি আইন অনুযায়ী কাজ করেছেন। বর্তমানেও তা আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। কবরস্থানের জমি হস্তান্তরযোগ্য দাবি করে তিনি বলেন, আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমখানার পক্ষে ‘ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে’ হিসাব খোলা হয়েছে তা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহীর নামে বলে জানান তিনি।