কালিগঞ্জ

অবৈধ ভিওআইপি ও ব্যাংক একাউন্ট হ্যাকিং করে নলতার জামশেদ ও জাহাঙ্গীর আজ শত কোটি টাকার মালিক

By Daily Satkhira

September 12, 2017

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরার নলতা হাসপাতালের বিপরীতে দ্বিতল বিশিষ্ট্য সরদার মার্কেটের সামনে রয়েছে নিউজ ৭১ নামের একটি অন লাইন পত্রিকার সাইন বোর্ড। ভিতরে আদৌ সেখানে হয়না কোন অন লাইন পত্রিকার কার্যক্রম। অথচ সেখানে রয়েছে অনেক ল্যাপটপ ও কম্পিউটার। সেখানে কর্মরত কর্মচারীরা বলছেন, অন লাইন পত্রিকার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এখনও চালু হয়নি এটি। তবে, সেখানকার দুটি রুমের সামনে তালা মেরে ভিতরে চলছে দিন-রাত গোপন কার্যক্রম। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে রযেছে তাদের এ রকম অনেক অফিস। এ সমস্ত অফিসের আড়ালে জামসেদ ও জাহাঙ্গির দুই সহোদর অবৈধভাবে ব্যাংক একাউন্ট হ্যাকিং, ভি.ও.আই.পি ও হুন্ডি ব্যবসার মাধ্যেমে তারা শত শত কোটি টাকার অবৈধ মালিক বনে গেছেন। জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের অজপাড়া গাঁয়ের বাগুনলতা গ্রামের নুর ইসলাম গাজীর দুই ছেলে জামশেদ ও জাহাঙ্গির। হত দরিদ্র আর অভাব অনাটনে বেড়ে ওঠা দুই ছেলে জামসেদ গাজী ও জাহিঙ্গীর আলম। দারিদ্রতার মধ্যে দিয়ে নুর ইসলাম গাজী তার দুই ছেলেকে বেশী দূর লেখা পড়া শেখাতে না পরলেও তারা নিজেদেরকে অনেক শিক্ষিত বলে দাবী করেন। সংসারের অভাব অনটন দৈন্যতা মেটাতে ২০০৬ সালে বিদেশ পাড়ি জমায় জামসেদ। সেখানে সে নির্মান শ্রমিক হিসাবে কাজ করতো বলে একাধিক সুত্রে জানা যায়। পরে বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে জামসেদকে ২০১২ সালে সে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জামসেদকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। দেশে ফিরে জামসেদ তার ছোট ভাই জাহাঙ্গিরের মাধ্যমে পেয়ে যায় আলাউদ্দীনের চেরাগ। জাহাঙ্গীর তার মামা আলতাফ হোসেনের বাড়ি সখিপুর থেকে অবৈধ ভি, ও, আই, পি ও হুন্ডি ব্যবসার দক্ষতা অর্জন করে। এ ক সময় সে তার মামা আলতাফ হোসেনের কয়েক লক্ষ টাকা গায়েব করে দেয়। ডিজিটাল হুন্ডিসহ একাউন্ট হ্যাকিং এর ব্যবসা শুরু করে রাতারাতি তারা শত কোটি টাকার মালিক বনে যায়। জামসেদের ভাই শিবির কর্মী জাহাঙ্গীর তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান রাখার কারনে সে অবৈধ ভি,ও,আই,পি ও ব্যাংক একাউন্ট হ্যাকিং করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ২০১৩ সালের একাধিক সহিংসতার মামলায় জেলও খেটেছেন এই জামশেদ। স্থানীয়রা জানান, জামশেদদের পৈতৃক বাড়ি নলতার ইন্দ্র নগরে। সেখানে তাদের রয়েছে বিলাস বহুল দ্বিতলা বিশিষ্ট্য বাড়ি। এরপর ২০১৪ সালে বাগ-নলতা গ্রামে সদর উদ্দীন কারীকরের ছেলে শরপ উদ্দীনের কাছ থেকে ১৪ শতক জমি কিনে সেখানেই অত্যাধুনিক ৫ তলা বিশিষ্ট আলীশন বাড়িও তৈরি করেছেন জামশেদ। এই বাড়িতে রয়েছে ১২টি এসি, ২৪টি মিটার। বিশেষ নিরাপত্তাবেষ্টিত মারবেল পাথরের তৈরি সি, সি ক্যামেরার আওতায় থাকা এই বাড়িটির পাঁচ তলায় কি কার্যক্রম পরিচালিত হয় তা কেউ খবর রাখেননা। সেখানেও একটি বিলাস বহুল অফিস রয়েছে। রয়েছে তার একটি বিলাস বহুল গাড়িসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি ও অফিস। জামশেদের ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম এলাকায় নিজেকে সফট ওয়ার ইঞ্জিনিয়ার পরিচয় দিলেও আসলে সে বেশীদুর লেকা পড়া জানেনা। সে একজন ধুরন্দর একাউন্ট হ্যাকার ও ডিজিটাল হুন্ডি ব্যবসায় পারদর্শী আন্তর্জাতিক ডিজিটাল প্রতারক। তবে, এলাকাবাসী এই প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় এনে তাদের যথাযথ বিচারের জন্য সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন। জামশেদের এক সময়ের সহকর্মী রাজ মিস্ত্রী আশরাফুল ইসলাম জানান, জামশেদ ও জাহাঙ্গির আগে তাদের সঙ্গে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতো। এখন তারা হঠাৎ করেই কোটি কোটি টাকার মালিক। কাউকে তারা এখন পরোয়া করেনা। তারা এখন কোটি কোটি টাকার গাড়ি চালিয়ে ঘুরে বেড়ায়। জামশেদ ও জাহাঙ্গিরের অফিসের এ সময়ের কর্মচারী রাকিবুল ইসলাম জানান, আমি দীর্ঘ ৩/৪ বছর যাবত তাদের সাতক্ষীরা, খুলনা, ঢাকা ও চট্রগ্রামের অফিসে কাজ করেছি। তারা অবৈধভাবে দেশ বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্ট হ্যাকিং, ভি,ও,আই,পি ও হুন্ডি ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধভাবে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তাদের এ সমস্ত কার্যক্রম আমি জানতে পেরে চাকরি ছেড়ে দেই। এরপর তারা আমাকে নানাভাবে টাকার জোরে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলও খাটিয়েছে। তিনি আরো জানান, তারা বিভিন্ন মেয়েদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে তাদের সাথে ব্লাক মেইলও করে থাকেন। জামশেদের চাচা রফিকুল ইসলাম জানান, আমি ১৯৯৫ ও ২০০৭ সালে দু দফায় মালেশিয়া গিয়েছিলাম। সেখানে যেয়ে অনেক টাকা পয়সা আমার বড় ভাই নুর ইসলামের কাছে পাঠায়। সে আমার লক্ষ লক্ষ টাকা মেরে দিয়েছে। এমনকি আমাকে ভিটেবাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আমি এখন পথে পথে ঘুওে বেড়াই। তিনি আরো বলেন, তারা অভৈধভাবে ব্যবসা করেও এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। স্থানীয় দোকান মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক এলাহি বকস জানান, জামশেদেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেকবার আটকও করেছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে সে আবার বাড়িতে চলে আসে। স্থানীয় সাংবাদিক লাভলু আক্তার জানান, আমি জামশেদ ও জাহাঙ্গিরের বিরুদ্ধে অবৈধ ভিওআইপি, ব্যাংক একাউন্ট হ্যাকিং এর নিউজটি সাপ্তাহিক মুক্ত স্বাধীন পত্রিকায় করার পর থেতে তারা আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সাপ্তাহিক মুক্তস্বাধীন পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম জানান, আমার পত্রিকায় এই নিউজটি সর্ব প্রথম প্রকাশ হয়। আমি এই এলাকার শত শত মানুষের কাছ থেকে জানতে পেরেছি জামশেদ ও জাহাঙ্গীর তারা দুই ভাই অবৈধ ভিওআইপি, ব্যাংক একাউন্ট হ্যাকিং ও হুন্ডির ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান জানান, জামশেদ এক সময় তার বাবার কর্মচারী ছিলেন। হঠাৎ করেই তারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তবে, বিভিন্ন পত্র পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি তারা বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা বণিজ্য করে থাকেন। তাদের আমার ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে একটি বিলাস বহুল বাড়িও রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে জামশেদ জানান, আমি কোন অবৈধ ভি.ও.আই.পি ও ব্যাংক একাউন্ট হ্যাকিং এর সাথে জড়িত নই। আমি মৎস্য ঘেরের ব্যবসা করি। তিনি আরো জানান, আমার বাড়ি নির্মাণ করতে ব্যংক থেকে এক কোটি টাকা লোন নিয়েছি।