নিজস্ব প্রতিবেদক : এক লক্ষ টাকা চাঁদা না পেয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ ভোমরা স্থলবন্দরের এক শ্রমিককে ১০ বোতল ফেন্সিডিল দিয়ে মামলা দিয়েছেÑএমন অভিযোগে সাতক্ষীরা জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অঞ্চল ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ভোমরার সকল শ্রমিক সংগঠন। পরে পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে দীর্ঘ বৈঠক এবং ওই শ্রমিক সদস্যকে পুলিশ বুধবারের মধ্যে জামিনে মুক্তি পাওয়ার ব্যবস্থা করবে, শ্রমিকদের কোন প্রকার হয়রানি করবে না এবং এসআই সাইমুমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে- এমন আশ্বাসের ভিত্তিতে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়। মঙ্গলবার দুপুর ১:৩০টা থেকে বিকাল ৫:১০টা পর্যন্ত আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় সরকার রাজস্ব হারিয়েছে এক কোটি টাকারও বেশি। সরেজমিনে ভোমরা স্থলবন্দরের শ্রমিক নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার ভোর রাতে (আড়াইটার সময়) ভোমরার লক্ষ্মীদাঁড়ি গ্রামের বাড়ি থেকে ভোমরা স্থলবন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য(নং৩৩৭) আব্দুল হামিদকে তুলে নিয়ে আসেন সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই সাইমুম ও তার সঙ্গীয় ফোর্স। সেসময় তাকে আটকের কারণ জানতে চাইলে এসআই সাইমুম জানান, তার বিরুদ্ধে ফেন্সিডিল পাচারের অভিযোগ আছে। এসময় হামিদের কাছে কিছুই পাওয়া য়ায়নি বলে জানিয়েছে তার পরিবার। মঙ্গলবার সকালে পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে এইআই সাইমুম সাফ জানিয়ে দেন এক লক্ষ টাকা না পেলে হামিদকে ছাড়া হবে না- এমনটাই অভিযোগ শ্রমিক আব্দুল হামিদের পরিবার ও ভোমরার শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের। অন্যদিকে, পুলিশের অভিযোগ হামিদকে ১০ বোতল ফেন্সিডিলসহ আটক করা হয়েছে। কিন্তু হামিদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন হামিদকে যখন পুলিশ আটক করে তখন তার কাছে কোনকিছুই ছিল না। চাহিদামত টাকা না দেয়ায় পুলিশই ফেন্সিডিল নাটক সাজিয়েছে। এদিকে, শ্রমিক আটকের প্রতিবাদে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে দুপুর থেকে আমদানি-রপ্তানী বন্ধ করে দেয় শ্রমিক সংগঠনগুলো। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহম্মেদ ও সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আলী আহম্মেদ হাশমী দুপুরে ভোমরায় সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের অফিসে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় বসেন। এসময় সেখানে হাজার হাজার শ্রমিক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। আলোচনায় শ্রমিক নেতারা বলেন ওই এসআই সাইমুমকে প্রত্যাহার করতে হবে, ওই শ্রমিকের মামলা বাবদ যাবতীয় খরচাদির টাকা পুলিশকে দিতে হবে এবং এরপর থেকে যে কোন শ্রমিকককে আটকের সময় অবশ্যই যাচাই বাছাই করে আটক করতে হবে। ক্ষুব্ধ শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এক পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে বলেন, “আমরা গরু বিক্রির টাকা বাড়িতে রাখতে পারব কি না তা আপনাদের জানাতে হবে।”
এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম, ভোমরা স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি রেজাউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আলম, ভোমরা স্থলবন্দর গোডাউন সভাপতি আনরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন, ভোমরা ইউনিয়ন আ ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম, ভোমরা ইউনিয়ন হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আবিদ হোসেন, ভোমরা স্থলবন্দর লেবার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সালেক ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রঞ্জু। এদিকে, শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলাকালীন সেখানে উপস্থিত হন সাতক্ষীরা জেলা আ ’লীগের দপ্তর সম্পাদক ও বিশিষ্ট ট্রেড ইউনিয়ন নেতা শেখ হারুণ অর রশীদ। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, “সরকারের সকল অবদানকে ম্লান করে দিচ্ছে সাতক্ষীরার পুলিশ।” স্থানীয় শ্রমিক নেতাদের উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “বিগত ৬ মাস যাবত সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই সাইমুম ভোমরা সীমান্তে ত্রাসের রাজত্ব কায়ম করেছেন। মাসখানেক আগে ভোমরার লক্ষীদাাঁড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলামকে আটক করে ৩৫ হাজার টাকা, একই গ্রামের আরেক শ্রমিক জাহাঙ্গীর হোসেন গরু বিক্রি করেছেন জানতে পেরে তাকে আটক করে ২৮ হাজার টাকা, আরেক শ্রমিক মো. সেলিমকে আটক করে ৩০ হাজার টাকা আদায় করে তবে মুক্তি দেন এসআই সাইমুম। এছাড়াও শ্রমিকসহ স্থানীয়দের শত শত আটক বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে।” তিনিও আরও বলেন, “মাত্র ২দিন আগেই জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আ ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম সুস্পষ্টভাবে বলেছিলেন, সাতক্ষীরায় পুলিশের কিছু অত্যুৎসাহী সদস্যের বাড়াবাড়ির কারণে সাধারণ মানুষের কাছে সরকার ও আ ’লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। তার বক্তব্যের সত্যতা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। আজ ভোমরা বন্দরকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে পুলিশের এই হয়রানি।” শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এই প্রতিবেদককে বলেন, “সামনে দুর্গা পূজা উপলক্ষ্যে ভোমরা স্থলবন্দরের কার্যক্রম প্রায় ৭দিন বন্ধ থাকবে। আমাদের শ্রমিকরা “নো ওয়ার্ক নো পে”- ভিত্তিতে কাজ করে। ঈদের বন্ধে তারা কাজ করতে পারেননি। এখন পূজার আগে কাজ করে সঞ্চয় করবেন তবেই ছুটিতে তাদের সংসার চলবে। অথচ এরকম সময়ে প্রতিদিন পুলিশের অত্যাচারে কোন না কোন শ্রমিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা সংসার চালাব কি করে? আমাদের সন্তানদের কি লেখাপড়া করাতে পারব না? উল্লেখ্য, গত রবিবার অনুষ্ঠিত জেলার আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাতক্ষীরায় পুলিশি হয়রানির বিষয়টি আলোচিত হয়। অন্যদিকে, সোমবার সাতক্ষীরা সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে সাতক্ষীরায় পুলিশের আটক বাণিজ্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং মন্তব্য করেন আগামী নির্বাচনে মানুষের কাছে ভোট চাইতে গেলে এসব কারণে মানুষ ভোটের পরিবর্তে আমাদের গালি দিতে পারে। এসব ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে কিনাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে সাতক্ষীরা জেলা আ ’লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুণ অর রশিদ বলেন, “আমরাও বিষয়টিও নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমাদের জেলা সভাপতি হজ্ব থেকে দেশে ফিরবেন ১৬ সেপ্টেম্বর। অন্যদিকে সংসদ অধিবেশন চলায় সংসদ সদস্যরা ঢাকায় আছেন। আমরা খুব শীঘ্রই জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে সময় নিয়ে ওয়ার্কিং কমিটির সভা আয়োজন করব এবং এসব ঘটনাগুলো সেখানে আলাপ করে কি ভূমিকা রাখা াযয় সে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমাদের দলীয় প্রার্থীদেরকে আগামী নির্বাচনে সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চাইতে হবে। সুতরাং পুলিশের এসব বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে চুপ থাকার কোন সুযোগ নেই।” এ বিষয়ে জানতে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অফিসিয়াল নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।