ডেস্ক রিপোর্ট: আশুলিয়ায় র্যাবের অভিযানে আহত হয়ে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃতু্য হওয়া জঙ্গি আব্দুর রহমান ওরফে বাবু সাতক্ষীরার আব্দুল্লাহ এর পুত্র। তার গ্রামের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার কুশখালিতে। সাধারণ নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার। ছদ্মবেশ ছিল ঠিকাদারের। কিন্তু এর আড়ালে মূলত সে জঙ্গিদের অর্থ সংগ্রহ ও জোগান দেওয়ার কাজ করতো। তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে একটি তালিকা। সেখানে কার কাছে কত টাকা দেওয়া হয়েছে, তাও উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সরাসরি নাম ব্যবহার না করে লেখা রয়েছে ‘কোড’। কোড নামগুলোর পাশে কোথাও ৫০ হাজার কোথাও এক লাখ পরিমাণ টাকার অঙ্ক লেখা রয়েছে। এই ব্যক্তির নাম আব্দুর রহমান (৩৫)। শনিবার সন্ধ্যায় আশুলিয়া থেকে তাকে নগদ টাকা ও অস্ত্র-গুলি, বিস্ফোরকসহ গ্রেফতার করে র্যাব। পরে তার মৃতু্য হয়। আটক করা হয়েছে তার স্ত্রী ও তিন সন্তানকেও। র্যাব কর্মকর্তাদের ধারণা, কোডগুলো ছোট-ছোট একেকটি জঙ্গি দলের। সাংগঠনিক নির্দেশনা অনুযায়ী সে অর্থ সংগ্রহের পর নব্য জেএমবির সদস্যদের জন্য তা বিতরণ করতো। এসব অর্থ দিয়ে জঙ্গিদের দৈনন্দিন থাকা-খাওয়ার খরচসহ অস্ত্র ও বিস্ফোরক কেনার জন্যও ব্যবহার করা হতো। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘তার লেখা কোডগুলোর অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এসব অর্থ উদ্ধার করতে পারলে তার সহযোগীদের গ্রেফতার করা যাবে।’
র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযানের সময় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল আব্দুর রহমান। পাঁচ তলা থেকে পাইপ বেয়ে নামতে গিয়ে আহত হয়েছে। র্যাব পাহারায় তাকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা দেয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়। র্যাব কর্মকর্তারা জানান, ‘আশুলিয়ার বসুন্ধরাটেক এলাকার একটি বাসার পঞ্চম তলায় অভিযান স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে থাকতো আব্দুর রহমান। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সন্ধ্যায় র্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ এর একটি যৌথ দল ওই বাসায় অভিযান চালায়। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে আব্দুর রহমান ব্যাটারি দিয়ে জানালার গ্রিল ভেঙে পাইপ বেয়ে নিচে নামার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে সে নিচে পড়ে গিয়ে আহত হলে র্যাব তাকে আটক করে। পরে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি অস্ত্র, গুলি, বিস্ফোরকদ্রব্য, বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম, অস্ত্র তৈরি ও চালনার ম্যানুয়াল, নাইট ভিশন ক্যামেরা, ধারালো অস্ত্র, একাধিক মোবাইল ও জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়।’ র্যাব-৪-এর অধিনায়ক লুৎফুল কবির জানান, ‘আব্দুর রহমানের বাবার নাম আব্দুল্লাহ। গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার কুশখালি। সে আশুলিয়ার বাসায় ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে উঠেছিল। তার স্ত্রীর নাম রুবি। সেও জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত। এই আব্দুর রহমান আর এক বিয়ে করেছিল। ওই স্ত্রীর গর্ভজাত এক মেয়ে রয়েছে। রুবির দুই শিশু ছেলে, আগের স্ত্রীর গর্ভজাত মেয়ে ও রুবিকে র্যাব হেফাজতে রাখা হয়েছে।’ র্যাব সূত্র জানায়, আব্দুর রহমানের সঙ্গে নব্য জেএমবির মাস্টারমাইন্ড তামিম আহম্মেদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বলে তাদের ধারণা। নব্য জেএমবির হয়ে সে মূলত ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করতো। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে বিস্তারিত তথ্য জানা যেত। র্যাব কর্মকর্তারা জানান, সে মজুদ রাখা ৩০ লাখ টাকাও জঙ্গিদের মধ্যে বিতরণ করতো। এর আগে সে অন্তত অর্ধ কোটি টাকা বিতরণ করেছে বলে র্যাবের কাছে তথ্য রয়েছে। র্যাব কর্মকর্তারা জানান, আব্দুর রহমান কিভাবে অর্থ সংগ্রহ করতো তা জানার চেষ্টা চলছে। এসব টাকা বিদেশ থেকে আসতো নাকি দেশেই তাদের কোনও সমর্থক গোষ্ঠী দিতো তারও অনুসন্ধান চলছে।