আন্তর্জাতিক

রোহিঙ্গা ইস্যুতে অমানবিক অবস্থানে রাশিয়া

By Daily Satkhira

September 16, 2017

রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানে যেখানে পুরো বিশ্ব কথা বলছে, কেউ হস্তক্ষেপ করছে, কেউ হস্তক্ষেপ চাইছে, সেখানে একে মিয়ানমারের ‘ব্যক্তিগত’ বিষয় উল্লেখ করে সেখানে কাউকে না জড়ানোর আহ্বান করেছে রাশিয়া।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা শুক্রবার সরকারের এমন দৃষ্টিভঙ্গির কথা জানান বলে জানিয়েছে স্পুতনিক নিউজ ও বার্তা সংস্থা তাস।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে জাখারোভা বলেন, ‘এটা মনে রাখা খুব জরুরি যে, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ইচ্ছা পোষণ করলে আন্তঃধর্মীয় বিবাদ আরও বাড়বে। আমার মনে হয় আমাদের দরকার মিয়ানমারে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ আয়োজনের চেষ্টাকে গুরুত্ব দেয়া, যেখানে সব বিশ্বাসের ধর্মীয় নেতাদের অংশগ্রহণ থাকবে।’

মস্কো আন্তঃধর্মীয় সংলাপের পক্ষে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মুখপাত্র বলেন, মিয়ানমারের বিভিন্ন মুসলিম নৃগোষ্ঠীর নেতৃত্ব দানকারী সংগঠনগুলোর প্রকাশিত সমন্বিত বিবৃতি সম্পর্কে রাশিয়া জানে। ওই বিবৃতিতে মৌলবাদীদের দ্বারা রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে।মিয়ানমার-রোহিঙ্গা-রাশিয়া

‘আমরা (রাশিয়া) মিয়ানমার সরকারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করছি এবং জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি যেন ধর্মীয় নেতারা কোনো চরমপন্থি শক্তির উস্কানিকে গুরুত্ব না দেন,’ বলেন তিনি।

জাখারোভা বলেন, মিয়ানমার সরকার দেশের ভেতরে থাকা বাস্তুহারা রোহিঙ্গাদের আবার ঘরে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছে।

‘এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, দু’হাজারের মতো মানুষ তাদের ঘরে ফিরে গেছে,’ বলেন তিনি। অন্যান্য যারা উদ্ভূত সঙ্কটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্যও একই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে রুশ মুখপাত্র আশা প্রকাশ করেন।

সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিবের কমিশনের দেয়া সুপারিশমালা বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে উল্লেখ করে সরকারের প্রশংসা করেন জাখারোভা। এ উদ্দেশ্যে দেশটির সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি বিশেষ কমিটিও গঠিত হয়েছে বলে তিনি জানান।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।

রোহিঙ্গা-মিয়ানমার৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।

সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫শ মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।