আসাদুজ্জামান : এক সময় দেশের প্রায় সব বনেই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণ ছিল। দৃষ্টি নন্দন ও ভিন্নধর্মী দৈহিক গঠনের জন্য এরা ছিল সবার আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে। কিন্তু আমাদের এই গর্বের প্রতীক জাতীয় প্রাণীটি এখন সুন্দরবনে অল্প সংখ্যায় টিকে আছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের মার্চে মাসের গণনা শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১০৬টি। বন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, সুন্দরবনে ১৯৮২ সালে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৫৩টি, ২০০৪ সালে ৪৪০টি। আর সর্বশেষ গণণায় বাঘের সংখ্যা এসে দাড়িয়েছে মাত্র ১০৬টি।
আর এর কারণ হিসেবে বলা হয়, বাঘের আশ্রয়স্থলে হস্তক্ষেপ, চোরা শিকারীদের উপদ্রপ, খাদ্যের অভাব এবং খাদ্য শৃঙ্খলে প্রভাব, বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব, সর্বোপরি বাঘের প্রতি জীঘাংসা পরায়ন মনোভাব এবং বনবিভাগের গুরুত্বহীনতায় অনিন্দ্যসুন্দর হিংস্র এই প্রাণীটি বিপন্ন হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা জনিত বৈরী প্রভাব এই সমস্যাকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। তাই বনের প্রাকৃতিক ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী এই প্রাণীটি এখন মহা বিপন্ন। দিন দিন কমে যাচ্ছে বাঘের এই সংখ্যা। তাই বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী বাঘ সংরক্ষণে সচেতনতা তৈরিতে প্রতি বছর ২৯শে জুলাই পালিত হয় আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস। তবে গত ৩৭ বছরে চোরা শিকারী ও বনদস্যুদের হামলা, গ্রামবাসীর পিটুনি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে সুন্দরবনের ৭০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বাঘের হামলায় প্রাণ হারিয়েছে দুই শতাধিক মানুষ।
বাঘ বিধবাদের পূর্ণবাসনে কাজে নিয়োজিত সুন্দরবন উপকুলীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স এর নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল জানান, সুন্দবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাঘ কমে যাওয়ার অন্যতম কারন হলো বাঘ শিকারের পর হত্যা করে এর চামড়া, দাত, হড়সহ বিভিন্ন অঙ্গ পাচার করা। তিনি এ জন্য সুন্দবনের চোরা শিকারী ও বনদস্যুদের দায়ী করে বলেন, একটি বাঘের চামড়াসহ তার বিভিন্ন অঙ্গ পাচার করে তারা তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পান। অথচ একজন জেলে অপহরন করে তারা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পান। তিনি সুন্দবনে বাঘ কমে যাওয়ার বিষয়ে আরো বলেন, বাঘের সংখ্যা নির্ণয়ে পূর্বে যে সমস্ত জরিপ করা হয়েছে তা থেকে বর্তমান বাঘের যে সংখ্যা দেখানো তা নিয়ে একটু ভেবে দেখা উচিত। তিনি আগের ওই জরিপ সঠিক নয় বলে দাবি করেন।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (অতিরিক্ত দায়িত্বে) শোয়েব খান জানান, ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ সার্ভের মাঠ পর্যায়ের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে, বাঘের সঠিক সংখ্যা নিরুপণ করা এখনও সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান। বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মদিনুল আহসান জানান, সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ সার্ভের মাঠ পর্যায়ের কাজ চলতি বছরের মে মাসে শেষ হয়েছে। আট শতাধিক ক্যামেরায় তোলা ছবি পর্যালোচনা করে বাঘের ঘনত্ব নিরুপণের কাজ শেষ হলেও বাঘের সঠিক সংখ্যা নিরুপণ করা এখনও সম্ভব হয়নি। সমস্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে চলতি বছরের অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মাসের মধ্যে বাঘের সঠিক সংখ্যাটি জানানো যাবে বলে তিনি আরো জানান।