জাতীয়

শেষ পর্যন্ত কোচিং-টিউশন নিষিদ্ধ করেই চূড়ান্ত হচ্ছে শিক্ষা আইন

By Daily Satkhira

September 18, 2017

ডেস্ক রিপোর্ট : সাড়ে ছয় বছরে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে কোচিং, প্রাইভেট ও সব ধরনের নোট-গাইড, অনুশীলন বা সহায়ক বই নিষিদ্ধ করে শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এত সহায়ক বা অনুশীলন বই প্রকাশের সুযোগ রাখা হয়নি । এসব অপরাধে কেউ জড়িত হলে জেল-জরিমানা বা চাকরিচ্যুত (শিক্ষক হলে) করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের মতামত পাওয়ার পর খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন আনুষঙ্গিক কিছু কাজ করে শিগগির খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠনো হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে মন্ত্রিসভা থেকে। তিনি বলেন, মন্ত্রনালয় কোচিং, প্রাইভেট টিউশন ও নোট-গাইড বা অনুশীলন বই নিষিদ্ধ করার পক্ষে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি হওয়ার পর ২০১১ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষা আইনের খসড়া পণয়ন করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এরপর এ নিয়ে বেকল আলোচনাই হয়েছে। এই আইন না হওয়ায় জাতীয় শিক্ষানীতির বাস্তবায়নেও বাধ্যবাধকতা থাকছে না।

গত বছরের ডিসেম্বরে ‘নমনীয়’ করে শিক্ষা আইনের খসড়া তৈরি হয়। খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে সহায়ক বা অনুশীলন বই প্রকাশেরও সুযোগ রাখা হয়েছিল। এমনকি ‘ছায়া’ হিসেবে কৌশলে কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনের বৈধতা দেওয়ার কথা বলা ছিল। এ নিয়ে তখন একটি দৈনিকে ‘বৈধতা পাচ্ছে কোচিং-টিউশন, সহায়ক বই খাকবে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে আইনের খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ফেরত এনে পর্যালোচনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রায় ১০ মাস পর নতুনভাবে খসড়াটি চুড়ান্ত করা হলো। নতুন চুড়ান্ত কসড়ায় বরা হয়েছে, এই আইন জারির পর সব ধরনের কোচিং নিষিদ্ধ হবে। যেকোন ধরণের কোচিং সেন্টার পরিচালনা, কোচিং সেন্টরে শিকক্ষতা করা শাস্তিযোগ্য হবে। কেউ এই অপরাধ করলে অনধিক দুই লাক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা ছয় মাসের কারাদন্ড অথবা উভয় দন্ড ভোগ করতে হবে।

কোন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট (প্রাইভেট টিউশন) পড়াতে পারবে না । কেউ এটা করলে সরকারি শিক্ষক হলে চাকরিবিধি অনুয়ায়ী অসাদআচরণের জন্য শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর বেসরকারি শিক্ষক হলে শিক্ষক নিবন্ধনও এমপিও (বেতন বাবদ মাসিক সরকারি অংশ) বাতিল ও চাকরিচ্যুত করা হবে। তবে শিক্ষপ্রতিষ্ঠান পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে অভিভাবকদের লিখিত সম্মতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস সময়ের পরে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবে। বর্তমানে এই নিময় আছে। এ জন্য সরকারে নির্ধারিত ফি দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। আইনে, ‘প্রাইভেট টিউশন’ বলতে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের মূল শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে অর্থের বিনিময়ে যেকোন স্থানে শিক্ষা দেওয়া বোঝাবে। প্রস্তাবিত এই আইন বলছে, কোনো ধরনের নোট বই বা গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধায় প্রকাশ ও বাজারজাত করা দন্ডনীয় অপরাধ।

এই আইন না মানলে অনাধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা এক বছরের কারাদন্ড আথবা দন্ড উভয় ভোগ করতে হবে। বিদ্যামান আইনে আষ্টম শ্রেণি পর্য়ন্ত নোট বা গাইড বই নিষিদ্ব,যদিও এখন এগুলোর বদলে সহায়ক বা অনুশীলন বই চালু হয়েছে।

গত ডিসেম্বরে করা আইনের খসড়ায় সকায়ক বইয়ের অনুমোদন দিয়ে বলা হয়য়েছিল কোনো প্রকাশক বা প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তি কেবল সহায়ক পুস্তক বা ডিজিটাল শিখন-শেখানো সামগ্রী প্রকাশ করতে পারবেন। তখন শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। প্রস্তাবিত আইনে এই ধারাটি আর রাখা হয়নি।

এতে নোট ও গাইড বই বলতে বোঝাবে, যেসব পুস্তকে পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তর আলোকে বিভিন্ন পরিক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্নাবলির উত্তর লেখা থাকে,যা শুধু পরিক্ষা পাসের উদ্দেশ্যে পাঠ্যপুস্তকের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা হয় এবং যা অধ্যয়ন করলে শিক্ষেোথীদের সৃজনশীল প্রতিভা বাধাগ্রস্ত হয় এবং মূল পাঠ্যপুস্তক পাঠে উৎসাহ হারায়।

আরও যা থাকছে আইনে : সরতার নির্ধারিত হারের চেয়ে অতিরিক্ত হারে বেতন-ভাতা বা ফি নিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষর্থী মূল্যায়নের ফলাফল পরপর দুই বছর অসন্তোষজনক হওয়াসহ আট অপরাধের জন্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ (এমপিও)সাময়িক বন্ধ, আংশিক কর্তন বা বাতিল করা হয়।

শিক্ষার্থীদের কোন প্রকার শারীরিক ও মনিসিক শাস্তি দেওয়া যাবে না। থাকবে একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর বিস্তারিত পরিচিতি সংরক্ষণ করবে এবং প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ম্যাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ বলেন আইনের খসড়াটি সংক্ষেপে করা হয়েছে। বিধিমালা বিস্তারিত বলা হবে।