ফিচার

সাতক্ষীরায় মাদ্রাসা সুপার নিহতের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

By Daily Satkhira

September 19, 2017

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরায় মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে পুলিশকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জুডিশিয়াল আদালতে (১) এ মামলাটি দায়ের করেন নিহতের ভাই বজলুর রহমান। মঙ্গলবার দুপুরে এ মামলা টি দায়ের করা হয়। মামলায় আসামী করা হয়েছে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের এসআই আসাদুজ্জামান, এসআই পাইক দেলওয়ার, এএসআই হাসানসহ অপর এক পুলিশ সদস্যকে। আদালত মামলটি আমলে নিয়েছে বলে আসামি পক্ষের উকিল এড. আবুবক্কর নিশ্চিত করেছেন। সূত্র জানায়, নিহত মাদ্রাসা সুপার মাওলানা সাইদুর রহমান (৪৫) সাতক্ষীরা সদরের কাথন্ডা গ্রামের মৃত জিল্লার রহমানের ছেলে। স্থানীয় কাথন্ডা ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম ছিলেন তিনি। তিনি কলারোয়া হঠাৎগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সুপার ছিলেন। গত শনিবার সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। নিহতের স্ত্রী ময়না বেগম জানান, “গত ১৪ আগস্ট বৃহষ্পতিবার রাত দেড়টার দিকে পুলিশের তিনজন সদস্য তাদের বাড়িতে এসে তার স্বামীকে গ্রেফতারে কথা বলে। কোন কারণে তাকে গ্রেফতার করা হবে জানতে চাইলে পুলিশ জানায় তার বিরুদ্ধে মামলা আছে। এসময় তার স্ত্রী গ্রেফতারি পরওয়ানা চাইলে পুলিশ র্দুব্যবহার করে। মাওলানা সাইদুর রহমান পুলিশকে জানান, তিনি অসুস্থ রোগী। প্রতিদিন তাকে ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু তারপরও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে নিয়ে স্থানীয় এক ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার তাকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। কিন্তু চিকিৎসা না দিয়ে তাকে সাতক্ষীরা সদর থানা হাজতে রাখা হয়। পরের দিন শুক্রবার সদর থানাতে মাওলানা সাইদুর রহমানের সাথে দেখা করতে আসেন তার স্ত্রী ময়না। এসময় স্ত্রীর কাছে তার স্বামী অভিযোগ করেন, পুলিশ তাকে অনেক মারপিট করেছে। তার গায়ের পাঞ্জাবিটা ছিড়ে গেছে। পুলিশের কাছে ওষুধ চাইলে পুলিশ তা দেয়নি। পরে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে তাকে নিয়ে ইসিজি সহ কয়েকটি পরীক্ষা করান পুলিশ। পরে ওইদিন সন্ধায় তাকে কোটে হাজিরার মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয় বলে নিহতের স্ত্রী জানান। নিহতের স্ত্রী ময়না জানান, তার স্বামীর বিরুদ্ধে কোন মামলা ছিলো না। আটকের পর পুলিশ দুটি মামলায় অজ্ঞাত আসামি করে কোটে চালান দেয়। পুলিশের তিন অফিসার এসআই আসাদ, দেলওয়ার ও এএসআই সুমন তার স্বামীকে জোর করে আটক করে নির্যাতন করেছে বলে তিনি অভিযোগ করে। নিহতের পরিবারের দাবি, এ সময় মওলানা সাইদুরের ভাতিজা মুত্তাসিম বিল্লাহ পাঁচ হাজার টাকা এনে চাচাকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানায়। কিন্তু পুলিশ তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে। এ টাকা দিতে না পারায় মাদ্রাসা শিক্ষককে নিয়ে আসা হয় সাতক্ষীরা থানায়। সেখানেও তার ওপর নির্যাতন করতে থাকে পুলিশ। নিহতের ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার দিনভর পুলিশ হেফাজতে রেখে তার ওপর দফায় দফায় নির্যাতন করা হলে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে তাকে আদালতে নেয়া হলে কর্তৃপক্ষ তার অসুস্থতা দেখে সাঈদুর রহমানকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে পুলিশ তাকে ফের নিয়ে যায় সাতক্ষীরা হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে কিছুটা সুস্থ করার পর বিকাল ৫টায় পুলিশ ফের তাকে আদালতে নিয়ে যায়। বিকালে মওলানা সাইদুরকে সাতক্ষীরা কারাগারে পাঠায় আদালত। সাতক্ষীরা কারাগারের সুপার আবু জাহেদ জানান, কারাগারের মধ্যে শুক্রবার রাতে সাঈদুর রহমান আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় কারা হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে মধ্যরাতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সাতক্ষীরা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. ফরহাদ জামিল বলেন, হাসপাতালে আনার পর তার চিকিৎসা চলছিল। শনিবার ভোরে মারা যান তিনি। ওই চিকিৎসক জানান, নিহত মাদ্রাসা শিক্ষক মওলানা সাঈদুরের দেহে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর থানার এসআই মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমি তাকে গ্রেফতার করলেও নির্যাতন করিনি। তার কাছে ঘুষও চাইনি। আগে থেকেই তিনি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অসুস্থ ছিলেন। গ্রেফতারের পর তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এরপর তার মৃত্যু সম্পর্কে আর কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। অন্যদিকে সদর থানার ওসি মারুফ আহম্মদ জানান, তিনি হার্টএ্যাটাকে মারা গেছেন। বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার, চাঁদা দাবিসহ ব্যাপক মারপিটের কারণে ওই মাদ্রাসা সুপার নিহত হয়েছে বলে শতাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। শনিবার রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়। এতে দাবী করা হয় সাতক্ষীরা কারাগারে ৪৪৯০/১৭ নং হাজতী মোঃ সাইদুর রহমানের মৃত্যু হয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। এঘটনায় ৮৪/১৭ নং এ একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে সদর থানা পুলিশ। বিবৃতিতে আরোও বলা হয় মৃত্য সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে ৬১/১৭ ও ৮০/১৭ নং দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নিহতের ভাই মাওলানা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভায়ের নামে কোন মামলা ছিল না। তাকে আটকের পর দুটি অজ্ঞাত মামলায় আসামি করে কোটে চালান দেয়। জার জিআর নং ১৮১/১৭ ও ৫৪৮/১৭। ভাইয়ের হত্যার ঘটনা আইনিভাবে লড়া হবে। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। তদন্তের পর বিস্তারিত বলতে পারবো।’