কলারোয়া

মগের মুল্লুক সাতক্ষীরা; কেউ দেখে না চোখে কেউ শোনে না কানে!

By Daily Satkhira

September 21, 2017

নিজস্ব প্রতিবেদক : “কেউ দেখে না চোখে কেউ শোনে না কানে”- সাতক্ষীরাবাসীর বিবেক আজ কোথায়? প্রতিদিন বেআআনি লটারির নামে কলারোয়ার চন্দপুরে ২০ লক্ষাধিক টাকা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের পকেট থেকে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের পকেটে, চলছে গণলুণ্ঠন। সাতক্ষীরা এখন মগের মুল্লুক! এখানে যখন তখন মেলার নামে যেখানে সেখানে চলে অবৈধ র‌্যাফেল ড্র ও লটারি! কেউ দেখেও দেখে না! সবাই বোবা-কালা-অন্ধ হয়ে থাকে! আর দরিদ্র মানুষের যেখানে চালের উচ্চমূল্যে নাভিঃশ্বাস উঠছে, তখন তাদের বড় একটি অংশ লটারির টিকেট কেটে দ্রুত বড়লোক হওয়ার নেশায় সর্বস্ব খুইয়ে সংসারের অশান্তি বাড়াচ্ছে। যেসমস্ত এলাকায় এসব লটারি চলে সেখানে দ্রুত চুরি, ছিনতাই বাড়তে থাকে। কিন্তু কেউই নেই এর লাগাম টেনে ধরার। জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় সারাবছর ধরে প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব লটারি ও জুয়ার আসর চলছেই। বর্তমানে কলারোয়ার চন্দনপুরের প্রত্যন্ত এলাকায় চলছে মানুষকে নিঃশ্ব করে পথে বসানোর জুয়া। দীর্ঘদিন ধরে নিরবে চালিয়ে যাচ্ছে “স্বপ্নের ঠিকানা” লাটারি নামক এই জুয়া। ওই লাটারির টিকিট কিনে ইতোমধ্যে নিঃশ্ব হয়েছেন অনেকে। কিন্তু কারো যেন নজর নেই এদিকে। যথারীতি আনন্দ মেলার ছদ্মাবরণে এসব চলছেই। মঙ্গলবার সরেজমিন ঘুরে দেখা বুধবার দৈনিক আজকের সাতক্ষীরায় এ সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক আজকের সাতক্ষীরায়। অন্যদিকে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি সাতক্ষীরায় প্রায় ১২ হাজার পাঠক প্রতিবেদনটি পড়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য কমেন্ট করেছেন তারা। অনেকেই লিখেছেন, “এই নির্লজ্জভাবে দেখেও না দেখার ভান করার জন্য জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, পুলিশ, সরকারি দলের নেতা, সাংবাদিক সবার মুখ বন্ধ রেখে বেআইনি লটারি যার কোন রাজস্ব সরকারের খাতায় জমা হচ্ছে না তা চলছে নগদ নারায়ণের বিনিময়ে!” বুধবার রাতে ৯ ভরি ওজনের সোনার হার প্রথম পুরস্কার বলে ঘোষণা দিয়ে কলারোয়া-তালা ও সদর উপজেলার কিছু কিছু জায়গায় প্রকাশ্যে মাইক বাজিয়ে প্রায় ২০০ ইজি বাইকে বিক্রি করা হয়েছে অবৈধ এই লটারির টিকিট। আনুমানিক প্রায় ২০ লক্ষ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে প্রতিদিন। এর ৫/৭ লাখ টাকা পুরস্কারের পিছনে ব্যয় করে বাকি টাকা যাচ্ছে প্রভাবশালীদের পকেটে। উল্লেখ্য, ঈদ আনন্দ মেলা নামে চন্দনপুর বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে একটি মেলার আয়োজন করেন কলারোয়া পৌর আ’লীগের সভাপতি আলিমুলসহ কয়েকজন ব্যক্তি। কিন্তু যে উদ্দেশ্যের কথা বলে মেলা বসানো হয়েছিল সে ধরনের কোন কার্যক্রম নেই এখানে। রয়েছে শুধুমাত্র লাটারি। নড়াইলের কালিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মানিক শিকদারসহ ৩ জনের যৌথ পরিচালনায় সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় এ লটারি নামক জুয়া অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রতিদিন প্রায় শতাধিক ইজিবাইক কলারোয়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নসহ যশোরের শার্শা ও সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা, বাঁশদহা, আগরদাড়ী, কুশখালী, লাবসা ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্রয়কর্মীরা ভাগ্যের দোহাই দিয়ে বিভিন্ন সুমধুর সুরে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে টিকিট বিক্রয় করে। গ্রাম্য এলাকার সহজ, সরল মানুষগুলো সহজেই তাদের ফাদে পড়ে ভাগ্যে যাচাই নামক জুয়ার (লটারি) এর টিকিট ক্রয় করছেন। অনেকেই সারাদিন ভ্যান চালিয়ে, দিনমজুরি ও শ্রমিকের কাজ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে সারাদিনের রোজগারের টাকা দিয়ে বাজার না করে পুরুষ্কারের আশায় সব টাকা দিয়ে লটারির টিকিট ক্রয় করছেন। কিন্তু পরে দেখা গেছে একটি পুরস্কারও তাদের ভাগ্যে জোটেনি। স্থানীয়রা জানান, গত ২৭ জুন’১৭ তারিখে চন্দনপুর বহুমুখী বিদ্যালয়ের মাঠটি ১লক্ষ টাকা দেওয়ার চুক্তিতে ২৬ জুলাই’১৭ তারিখ ১মাসের জন্য ভাড়া দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সে মেয়াদ অতিবাহিত হলেও মাঠটি না ছেড়ে চালানো হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদী লটারী নামক জুয়া। তবে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও ঈদের পরের দিন থেকে এ মেলা আবারো শুরু হয়। তবে উক্ত বিদ্যালয়ের মানেজিং কমিটি সভাপতিসহ অন্যা সদস্যরাই নাকি এ মেলার আয়োজক। যে কারণে কাউকে কোন কৈফিয়ত দিচ্ছেন না তারা। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, স্বপ্নের ঠিকানা নামক লটারি বিক্রির জন্য প্রতিদিন ১০০ ইজিবাইক, ২টি মিনি পিকআপ রয়েছে। তারা প্রতিদিন কলারোয়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নসহ যশোরের শার্শা ও সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা, বাঁশদহা, আগরদাড়ী, কুশখালী, লাবসা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় টিকিট বিক্রয় করছেন। ওই টিকিটের মূল্য ২০টাকা। প্রতিদিন তারা প্রায় ১ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ টাকা ২০ টিকিট বিক্রয় করে। এতে প্রায় প্রতিদিন ২০ লক্ষ টাকার টিকিট বিক্রয় করে। কিন্তু পুরস্কার দেওয়া হয় ৫/৭ লক্ষ টাকার। প্রায় ২ মাস ধরে এভাবে অত্র এলাকায় চলছে গরিব কে নিঃশ্ব করে কতিপয় অসাধু ব্যক্তিদের পকেট ভরা। এবিষয়ে লটারির পরিচালক রবিউল ইসলাম রবি’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা মাত্র ১৭দিন লটারি চালাচ্ছি। প্রতিদিন ১০০ ইজিবাইক বিক্রয়ের জন্য বের হয় এবং প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ হাজার টিকিট বিক্রয় হয়। এখানে কতদিনের অনুমতি পেয়েছেন মর্মে তিনি বলেন ১০ দিনের। কিন্তু ১০দিন ইতোমধ্যে অতিবাহিত হয়েছে। আরো ১০ দিন বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া ডিসি সাহেবের মৌখিক অনুমতি রয়েছে। গ্রামের একেবারে শেষ পর্যায়ে হওয়ায় ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ভাই আপনাদের তো এতদূর আসার দরকার ছিলো না। সাংবাদিকদের সাথে তো কথা বলবেন মানিক চাচা। এছাড়া তিনি এবিষয়ে রিপোর্ট না করার জন্য অনুরোধ করেন। এবিষয়ে মানিক শিকদারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমাদের ২৫ তারিখ পর্যন্ত অনুমতি আছে মৌখিকভাবে। আরো বাড়ানো হতে পারে। আর আপনি আমার সাথে দেখা করেন। আপনার সালামির কোন অসুবিধা হবে না। আমি পার্কে আছি। যদি আপনি বলেন আমিও আসতে পারি আপনার কাছে। এঘটনায় চন্দনপুর বহুমুখি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনছার আলী বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে একটি ডিজিটাল ফটোকপি মেশিনের প্রয়োজন। সে কারণে আমরা স্কুলের মাঠ টি তাদের ১ মাসের জন্য রেজুলেশনের মাধ্যমে ভাড়া দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা মাঠটি এখনো পর্যন্ত ছাড়েনি। তবে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর এবিষয়ে একটি সভা আহ্বান করা হয়েছে। স্কুলের মাঠে এধরনের লটারি নামক জুয়ায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই ক্ষতি হচ্ছে। সামনে তাদের পরীক্ষা। কিন্তু কি করবো বলেন আমারও হাত পা তো বাধা। অন্যদিকে লটারির ঘটনায় মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দীন বলেছিলেন, “আমরা মাঝে তো বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আবারো শুরু হয়েছে। আর জায়গাটাও এমন দুর্গম। যা হোক আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সেখানে লটারির কোন অনুমতি দেওয়া হয়নি।”

যদিও বুধবারও সাধারণ মানুষের জীবনে অস্থিরতা আনা এই লটারি চলেছে যথারীতি।