আশাশুনি

আশাশুনিতে শালিসদারদের ৩০ হাজার টাকা দিয়ে মামলা এড়ালো ২ ধর্ষক!

By Daily Satkhira

September 29, 2017

নিজস্ব প্রতিবেদক : টানা বৃষ্টিতে বাড়িতে ঢুকে আশ্রয় নেওয়ার সুযোগে এক স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। বৃহষ্পতিবার দুপুর দুই টার দিকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা মোল্লাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। বিকেল ৫টায় এক শালিসি বৈঠকে ওই নারীর সম্ভ্রমের মূল্য ৩০ হাজার টাকা আদায় করে এক হাজার টাকা জোরপূর্বক হাতে গুজে দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছে শালিসদাররা।

খাজরা মোল্লাপাড়ার স্বামী পরিত্যক্তা এক নারী (৩০) জানান, বৃহষ্পতিবার দুপুর দু’ টোর দিকে তিনি বাড়িতে রান্না করছিলেন। এ সময় তুমুল বৃষ্টি শুরু হলে তাদের এলাকার শাহজাহান মোল্লার ছেলে ইয়াছিন মোল্লা (৩৫) ও গফুর মোল্লার ছেলে বেল্লাল হোসেন (৩৩) তাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা তার কাছে পানি চায়। পানি আনতে ঘরের মধ্যে গেলে তারা পিছনে ধাওয়া করে মুখ চেপে ধরে। পরে তার মুখের মধ্যে কাপড় ঢুকিয়ে দিয়ে দু’জনে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পালিয়ে যাওয়ার সময় চিৎকার করায় স্থানীয়রা তাদেরকে ধরে ফেলে। এ নিয়ে বৃহষ্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে কাশেম সরদারের ছেলে নবাব আলী পাগলের বাড়িতে শালিসি বৈঠক বসে। বৈঠকে নবাব আলী ছাড়াও এলাহী বক্সের ছেলে মোত্তাজুল ও রাজ্জাক খাঁসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। শালিসে ইয়াছিন ও বেল্লালকে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এ সময় তার হাতে এক হাজার টাকা গুজে দিয়ে বাকিটা চেয়ারম্যানকে দেওয়ার নাম করে শালিসদাররা নিয়ে চলে যায়। এ নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করলে তাকে এলাকা ছাড়া করবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়।

ধর্ষিতা ওই নারী জানান, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তিনি আশাশুনি থানায় যেয়ে উপ-পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে পরামর্শ করে ইয়াছিন ও বিল্লালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান মোবাইল ফোনে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহীদুল ইসলাম শাহীনের সঙ্গে পরামর্শ করে অভিযোগ না নিয়ে বাড়ি চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তাকে কিছু টাকা নিয়ে মীমাংসা করে নিতে বলেন। বাধ্য হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন।

খাজরা ইউপি সদস্য বিপ্লব কুমার দাস জানান, শালিসে ধর্ষিতার ইজ্জতের জন্য ৩০ হাজার টাকা নির্ধারন করা ও শালিসদাররা আদায়কৃত ২৯ হাজার টাকা নিয়ে চলে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তিনিই ওই নারীকে থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। খাজরা গ্রামের মোত্তাজুল ইসলাম জানান, তিনি শালিসে ছিলেন ঠিকই তবে জরিমানার টাকা ওই নারীকে না দেওয়ায় সে থানায় মামলা করতে গেছে বলে তিনি জেনেছেন। তার দাবি ওই নারীর সামাজিক সম্মান নেই বলে দাবি করেন তিনি। খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিম বলেন, এ ধরনের ঘটনা তিনি শুনছেন। তবে তার কাছে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি।

আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক জানান, খাজরার এক মহিলা ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে থানায় এসেছিলেন। তবে তিনি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করার পর কি করেছেন সেটা তার জানা নেই। আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহীদুল ইসলাম শাহীনের সঙ্গে শুক্রবার সন্ধ্যায় কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি একটি পুজা মণ্ডপে রয়েছেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।