আসাদুজ্জামান : হিন্দু সম্প্রদয়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পুজার আজ শনিবার ছিল শেষ দিন। এবারও বিজয়া দশমীতে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সীমান্ত নদী ইছামতিতে স্ব স্ব জলসীমানার মধ্যে থেকে প্রতিমা বিসর্জন দিতে হয়েছে। এর ফলে তেমন জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি শত বছরের ঐতিহ্যবাহী দুই বাংলার মানুষের মিলন মেলা। সকাল থেকে ইছামতি নদীর দু’পারে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হলেও স্ব স্ব জলসীমার মধ্যে নৌকা ভাসানোর কারনে দুই বাংলার মানুষের মিলন মেলায় কিছুটা হলেও ভাটা পড়ে। আর এর ফলে অনেকটা হতাশ হয়ে ফিরে যান দু’বাংলার মানুষ। তবে, এবারের এ মিলন মেলায় সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দীন, পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন, অফিসার বিজিবির উপ-অধিনায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাফিজ আল আসাদ, কালিগঞ্জ পুলিশের এ এসপি সার্কেল মির্জা সালাউদ্দীন প্রমুখ। সাতক্ষীরা শহর থেকে ইছামতির পাড়ে দু’বাংলার মিলন মেলায় অংশ নিতে উপস্থিত হওয়া শংকর বিশ্বাস জানান, বিজয়া দশমীতে এপার বাংলা-ওপার বাংলার মানুষ কিছুটা সময়ের জন্য একাকার হয়ে যেত। কিন্তু গত ৩/৪ বছর ধরে নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে বিজয়া দশমীর আনন্দ উৎসব থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়। যার যার জলসীমানায় বিজয়া দশমীর আনন্দ উৎসব করতে দেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, দেবহাটা সীমান্তের ওপারে ভারতের টাকি বিএসএফ ক্যাম্প ও এপারের বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা সীমান্তে কড়া নজরদারি করছে। কিন্তু এবারও দুই বাংলার সীমান্ত জুড়ে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হলেও তারা মিলন মেলার উৎসবে মেতে সেভাবে উঠতে পারেনি। দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের কঠোর নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করায় ইছামতি নদীতে নৌকা, লঞ্চ নিয়ে স্ব স্ব জলসীমার মধ্যে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠতে হয়েছে। স্ব-স্ব দেশের সীমানার মধ্য থেকেই আনন্দ উৎসব পালন করতে হয়েছে। অনেকেই নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এ ব্যাপারে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাফিজ আল আসাদ জানান, সীমান্ত নদী ইছামতিতে স্ব স্ব জলসীমানার মধ্যে থেকে প্রতিমা বিসর্জন দিলেও দুই বাংলার মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে মিলন মেলার আনন্দ উপভোগ করেছেন। তিনি আরো জানান, এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর উভয় দেশের সীমান্ত এলাকায় সীমান্তবর্তী জনসাধারনের অবাধে গমণাগমন, বিচরনসহ যে কোন প্রকার অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা রোধ কল্পে কোম্পানী কমান্ডার পর্যায়ে এই পতাকা বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। পতাকা বৈঠক থেকে সিদ্ধা›ত নেয়া হয়, শারদীয় দূর্গাপূজা বিসর্জনের দিন উভয় দেশই সীমান্ত নদী ইছামতিতে নিজেদের সীমানায় দূর্গা বিসর্জন দেবেন। নৌকা বা ট্রলার নিযে কেউ কোন সীমান্ত অতিক্রম করবেননা। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের অনুমতি নিয়ে ইছামতি নদীতে নামতে হবে। বিকেল ৬ টার পর কেউ নৌকা ও ট্রলার নিয়ে আর নদীতে থাকতে পারবেননা । উলে¬খ্য ঃ অবিভক্ত বাংলার এককালের ইছামতি নদী কালের প্রবাহে আজ দুইটি দেশের সীমানা নির্ধারণ করেছে। দেশ বিভাগের পর ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী বয়সের ভারে নুহ্য যারা এখনও জীবিত আছেন, তারা আজ জীবন সায়াহ্নে এসেও মাতৃভূমির মাটি একবারের মত স্পর্শ করার জন্য এই দিনটির অপেক্ষা করে থাকেন। বিজয়া দশমীতে ইছামতি নদীতে এসে তাই তারা সে সাধ পূর্ন করার চেষ্টা করে থাকেন। বিজয়া দশমী উপলক্ষে সাতক্ষীরা সীমান্তের ইছামতি নদীর আর্ন্তজাতিক সীমানা মুছে দু’বাংলার মানুষ কিছুক্ষণের জন্য একাকার হয়ে যান। দ’ুদেশের মানুষের আবেগ আর উচ্ছাসের কাছে হার মানে সীমান্তের বেড়াজাল। ভারতের কলকাতা থেকে জাহাজ ভাড়া করে মানুষ আসত এই মিলনমেলায়। দুপুরের সাথে সাথে নদী গর্ভে ভরে যেত দুই পারের নৌকা, ট্রলার, কার্গো, লঞ্চ এবং জাহাজে। কেউ আসত স্বপরিবারে, আবার কেউ আসত বন্ধুদের নিয়ে এই মিলন মেলা উপভোগ করার জন্য। প্রতিমা বিসর্জন কালে সীমান্তের ইছামতি নদীতে ভারতের টাকী ও বাংলাদেশের টাউন শ্রীপুর এলাকা পরিণত হতো দুই বাংলার মানুষের এক মিলন মেলায়। তবে গত ৩/৪ বছর ধরে এটির ব্যতিক্রম হয়েছে।