মোঃ বশির আহমেদ : সরকারের বহু ভালো কর্মসূচি ও উদ্যোগকে বিতর্কিত করছে সরকারের বিভিন্ন অফিস ও দপ্তরের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মচারী। সাতক্ষীরা যুব উন্নয়ন অফিসের ক্লার্ক কামাল এর নেতৃত্বাধীন একটি সিন্ডিকেট সরকারি চাকরি করেও অফিসের মধ্যে ফেঁদেছেন বেকার তরুণ-তরুণীদের জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ব্যবসা! ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় কর্মসংস্থানের জন্য আবেদনকারী হাজার হাজার যুবক-যুবতীর কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে এই চক্রের বিরুদ্ধে। সাতক্ষীরা পোস্ট অফিসের ৩০ টাকার পোস্টাল অর্ডারের ব্যাপক ঘাটতির সুযোগে ৩০ টাকার পরিবর্তে ১৫০টাকা করে গুণতে হচ্ছে আবেদনকারীদের। উল্লেখ্য, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে পরিচালিত ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় অস্থায়ী কর্মসংস্থানের জন্য সাতক্ষীরা জেলাধীন সদর উপজেলায় আগ্রহী যুবক ও যুব নারীদের কাছ থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর দরখাস্ত আহবান করা হয়েছে। আবেদন পত্রের সাথে চাওয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ৩০(ত্রিশ) টাকার পোস্টাল অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট। কিন্তু স্থানীয় পোস্ট অফিস ৩০ টাকার পোস্টাল অর্ডার সাপ্লাই দিতে পারছে না। আর এই সুযোগে পূর্বেই পোস্টাল অর্ডার সংগ্রহ করে রেখে চড়া দামে বিক্রি করছে সাতক্ষীরা যুব উন্নয়ন অফিসের অফিস সহকারী কামাল আহমেদ এর সিন্ডিকেট। এ বিষয়ে পোস্ট মাস্টার শেখ শাহবাজ আলী এ প্রতিবেদককে জানান, ‘‘আমরা ১৪/০৯/১৭ ও ১৭/০৯//১৭ ইং তারিখে দু’দফায় আমাদের পোস্টাল অর্ডার এর চাহিদাপত্র ঢাকায় পাঠিয়েছি, যার রেজিঃ নং ৮৪। মাঝখানে একদিন আমাদের পদস্থ কর্মকর্তারা কলারোয়ার জন্য ১হাজার ৫০০টি এবং সাতক্ষীরার জন্য ১ হাজার ৫০০টি ৩০ টাকার পোস্টাল অর্ডার দিয়েছিলেন। সাতক্ষীরারগুলো প্রায় এক দিনেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমরা বুধবার নাগাদ নতুন পোস্টাল অর্ডার পেয়ে যাব। এরপর সাতক্ষীরার আবেদনকারীরা আর কোন সমস্যায় পড়বেন না।” অন্য মূল্যের পোস্টাল অর্ডারের ঘাটতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যাদের খুব দরকার তারা ৩০ টাকার পোস্টাল অর্ডার না থাকায় ৪০, ৫০ টাকার পোস্টাল অর্ডার নিয়েছিল। আমাদের কাছে এখন আর তাও নেই।” এদিকে পোস্ট অফিসে পোস্টাল অর্ডার না পেয়ে আবেদনকারীরা দ্বিতীয় পথ ব্যাংক ড্রাফট বেছে নিচ্ছে কারণ পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ পোস্টাল অর্ডার কবে আসবে এর কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। আবার আবেদন করার শেষ দিন ১০/১০/২০১৭ ইং তারিখ। তাই তারা ব্যাংকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এখানে তাদের ৩০/-(ত্রিশ) টাকার জায়গায় দিতে হচ্ছে ৬৫/-টাকা, (সোনালী ব্যংক; মূল টাকা ৩০টাকা, কমিশন-৩০টাকা ও ১৫% ভ্যাট হিসেবে ৫টাকা= মোট ৬৫ টাকা)। আবার সোনালী ব্যাংক ব্যস্ততম ব্যাংক হওয়ায় সেখান থেকে সেবা নিতে আবেদনকারীরা হাঁপিয়ে উঠছেন। অনেকে উপায় না পেয়ে যুব উন্নয়ন অফিসে ছুটে যাচ্ছেন পরামর্শ নেওয়ার জন্য। সেখানে পরিচয় মেলে এক দুষ্কৃতিকারী চক্রের, যার নেতা অফিসের কর্মচারী রকামাল আহমেদ। কামাল তার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে এই সিন্ডিকেটে যুক্ত করেছে জনৈক মুজাহিদকে। যে কিনা যুব উন্নয়নের কোন স্টাফই নন। অথচ অফিসে বসে আবেদন করতে আসা যুবক-যুবতীদের সে জানাচ্ছে- ১৫০টাকা দিলে পোস্টাল অর্ডার, সত্যায়িত সব তারা করে দেব! কামাল ও মুজাহিদের বক্তব্যÑ আপনারা শুধু কাগজপত্র এনে দেন আর ১৫০টাকা করে জমা দেন বাকি কাজ আমরা সব করে দিব। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুজাহিদ বলেন, “আসলে আমিতো এই অফিসের কেউ নই। কামাল সাহেব তার কাজের সুবিধার জন্য আমাকে এখানে এনেছেন। আসলে যুব উন্নয়নের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘনিষ্ট কিছু আত্মীয়-স্বজন ও অন্যরা আবেদন করছেন তাই তাদের জন্য কিছু পোস্টাল অর্ডার এনে রাখা হয়েছিল, এই আর কি।” কামাল সিন্ডিকেটের সদস্য মুজাহিদ জানান, “কাগজ পত্র সত্যায়িতও আমরা করে নিব।” এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা যুব উন্নয়ন অফিসের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, “পোস্টাল অর্ডারের সঙ্কটের বিষয়টি নিয়ে আমি নিজেই পোস্ট অফিস কর্র্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। প্রাথমিকভাবে তারা কলারোয়া ও সাতক্ষীরার জন্য ৩ হাজার পোস্টাল অর্ডারের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু সাতক্ষীরার চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল।” তার অফিসে আবেদন জমা নেয়ার সময় কামাল ও মুজাহিদ পোস্টাল অর্ডারসহ আবেদনপত্র কমপ্লিট করার নামে মাথাপিছু ১৫০ টাকা করে কিভাবে আদায় করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মুজাহিদ কে আমি চিনি না। তবে কামাল আমাদের সাতক্ষীরা সদর অফিসের স্টাফ। আমি এই কর্মসূচির উদ্বোধনের কাজেই সাতক্ষীরার বাইরে জামালপুরে আছি। কামালের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ যখন উঠেছে আমি অবশ্যই তা খতিয়ে দেখব। আমাদের অফিস থেকে দেশের যুবক-যুবতীদের সেবা দেয়াই আমাদের দায়িত্ব। তাদের কোন প্রকার হয়রানি মেনে নেয়া হবে না।”