আজ মহররম মাসের ১০তারিখ পবিত্র আশুরা। আশুরা শব্দের অর্থ দশম বা দশমী । আশুরার দিনটি বিভিন্ন কারণে মুসলমানদের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। তার মধ্যে যা অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ও হৃদয় বিদারক তা হলো কারবালার ঘটনা। মুয়াবিয়া (রা) এর ইন্তেকালের পর তার পুত্র ইয়াজিদ ইসলামী রাষ্ট্রনীতির বরখেলাপ করে দামেস্কের মসনদে আসীন হন। মহানবী (স.) প্রতিষ্ঠিত যে নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী খোলাফায়ে রাশেদীনগণ রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন ইয়াজিদ সে নীতি ও আদর্শ পরিবর্তন করেন। আর ইমাম হোসাইন (রা) তা রক্ষার জন্য সোচ্চার হন। তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করে সত্যের জন্য সংগ্রাম করে কারবালা প্রান্তরে তার পরিবারের ১৭ জন সদস্য সহ মোট ৭৮জন এ দিনেই শাহাদাত বরণ করেন। আশুরার পিছনের ইতিহাসঃ পবিত্র আশুরা দিনটির সাথে হযরত আদম (আ) থেকে শুরু করে বিভিন্ন নবী রাসুলগণের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্ক রয়েছে। এদিনে আল্লাহপাক ১০জন পয়গম্বরকে তার বিশেষ অনুগ্রহ প্রদান করেছেন। মানবজাতির আদি পিতা হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি জান্নাতে অবস্থান দুনিয়াতে প্রেরণ আর তওবা কবুল হওয়া এর সবই ঘটেছিল আশুরার দিনে। হয়রত নুহ (আ:) দীর্ঘ ৯০০ বছর তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছিলেন তার কওমকে। কিন্ত তারা তার দাওয়াত কবুল করেনি। ফলে তাদের প্রতি আল্লাহর গজব হিসেবে নেমে আসে মহা প্লাবন। নুহ (আ:) ও তার অনুসারীরা তার নৌকায় আরোহণ করেন। দীর্ঘ ৪০দিন পর প্লাবনের সমাপ্তি ঘটে এবং নুহ (আ) এর কিস্তি জুদি পাহাড়ের পাদদেশে মাটি স্পর্শ করে ঐতিহাসিক আশুরার দিনে। পবিত্র আশুরার দিনে হযরত ইব্রাহিম (আ) কে নমরূদ অগ্নিকান্ডে নিক্ষেপ করে। আল্লাহতায়ালা তাকে অগ্নি থেকে উদ্ধার পূর্বক খলিলুল্লাহ বা আল্লাহর বন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। হযরত আইয়ুব (আ) দীর্ঘ ১৮বছর পর কুষ্ঠরোগ থেকে মুক্তিলাভ করেন আশুরার দিনে। হযরত ঈসা (আ) কে চতুর্থ আসমানে উঠিয়ে নেন পবিত্র আশুরার দিনে। হযরত ইউনুস (আ) ৪০দিন মাছের পেটে থাকার পর মুক্তিলাভ করেছিলেন পবিত্র আশুরার দিনে। হযরত সুলাইমান (আ) কে পুররায় রাজত্ব ফিরিয়ে দেন এইদিনে। হযরত মুসা (আ) ও তার অনুসারীদের আল্লাহতায়ালা নীল দরিয়ার মাঝখান দিয়ে রাস্তা তৈরি করে পার করিয়ে দেন এবং ফেরাউন ও তার দলবলসহ নীল নদে ডুবিয়ে মারেন এই আশুরার দিনে। আশুরার দিনে আল্লাহপাক সৃষ্টি করেন আকাশমন্ডলী,লওহ কলম, ফেরেস্তা পর্বতরাজি। আল্লাহতায়ালা নিজ আরশে অধিষ্ঠিত হন এ দিনে। আশুরার দিনে প্রথম আকাশ থেকে বৃষ্টিপাত হয়। মহররম মাসের ১০ তারিখ শুক্রবার কেয়ামত সংঘটিত হবে এমর্মে আল্লাহর রাসুল (স) ভবিষ্যৎবাণী প্রদান করেছেন। আশুরার ফজিলত: আশুরার ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (স) বলেন -আশুরার দিনে রোজা পালন বিগত এক বছরের গোনাহ সমুহের কাফফারা স্বরূপ। (সহিহ মুসলিম)এছাড়া সহিহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে সালামা ইবনে আকওয়াহ (রা) হতে বর্ণিত হাদীস হতে জানা যায়, নবী করিম (স) আসলাম গোত্রের এক লোককে নির্দেশ দিলেন সে যেন লোকদের মাঝে এ ঘোষনা দেয় যে, যে ব্যক্তি আজ সকালে খেয়েছে সে যেন দিবসের বাকী অংশ রোজা পালন করে। আর যে ব্যক্তি কিছুই খায়নি সে যেন রোজা রাখে। কেননা আজকের দিন আশুরার দিন। আশুরার তাৎপর্য ঃ আশুরা মুসলমানদের চেতনার বাতিঘর। আজকের দিনে যারা মুসলিম বা ইসলামী নামধারী হয়েও এজিদ , ইবনে জিয়াদ, সীমারের ভুমিকা পালন করে তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ইসলাম সম্পর্কে যারা ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে তাদেরকে সঠিক ধারণা প্রদান করতে হবে এবং ইসলামের সু-মহান আদর্শের দিকে সবাইকে আহবান করতে হবে। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে বাতিল ও জালিমের মোকাবেলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। আশুরার তাৎপর্য সম্পর্কে জাফর সাদিকের (র) এর উক্তিটি প্রণিধান যোগ্য। তিনি বলেন – প্রতিদিন ই আশুরা, প্রতিটি মাসই মহররম এবং প্রতিটি ভুমিই হচ্ছে কারবালা। অতএব আশুরার শিক্ষা বাস্তবায়নে আমাদের প্রতিদিনই কর্মসূচী থাকতে হবে। শুধু মহররম মাসে নয় বছরের প্রতিটি মাসেই মহররমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সত্য প্রতিষ্ঠায় চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর প্রতিটি ভুমিকে কারবালা মনে করে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে কারবালার চেতনা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক।