আশাশুনির কাদাকাটি থেকে ফিরে মো. বশির আহমেদ : আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের তালবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সার্কাসের নামে চলছে চরম অশ্লীল নগ্ন নৃত্য ও প্রকাশ্য রমরমা জুয়ার আসর। পুলিশের বক্তব্য এরকম কোন সার্কাস বা জুয়ার কথা তারা জানেই না! অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বলছেন সার্কাসতো বন্ধ হয়ে গেছে! আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক বশির আহমেদ অবশ্য সেখানে গিয়ে দেখতে পেয়েছেন ভিন্ন চিত্র। সার্কাসের নামে সেখানে অর্ধনগ্ন বিকৃত নৃত্য ও প্রকাশ্য জুয়ার বোর্ড বসেছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে চলছে এসব অপকর্ম। আর দেখে না দেখার ভান করছেন সংশ্লিষ্ট সকলেই। শারদীয়া দুর্গোৎসব উপলক্ষে মেলার নামে চলছে এসব রমরমা অবৈধ্য ব্যবসা। সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন স্থানে উৎসবের আড়ালে জুয়া, অশ্লীল নৃত্য ও লাটারি এখন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের তালবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সার্কাস শো এর নাম করে ৭০ থেকে ১০০টাকা টিকিটের বিনিময়ে দর্শকদেরকে ভিতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করে দেখা গেছে স্টেজে চলছে কয়েকজন স্থ’লকায় তরুণীর অশ্লীল পোশাকে নগ্ন নৃত্য। এভাবে প্রতিদিন চলছে তিনটি করে শো। আর স্টেজের পাশেই সাজানো হয়েছে রমরমা জুয়ার পশরা। নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রলুব্ধ করে পাতানো জুয়ার পশরার ফাঁদে পকেট কেটে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এবিষয়ে জানতে চাইলে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিদুল ইসলাম শাহীন এ প্রতিবেদককে বলেন, “আমার জানা মতে এ ধরনের কোন মেলাই চলছে না। তবুও যেহেতু আপনি বলছেন আমি এখনই খবর নিচ্ছি।” তার সাথে কথা বলার প্রায় ৩ ঘণ্টা পরে যখন মঙ্গলবার রাতে এ রিপোর্ট লেখা হচ্ছে তখনও খবর নিয়ে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়ার আসর চলছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দিপংকর কুমার সরকার বলেন, “আমি তো জানি ওই সার্কাস বন্ধ হয়ে গেছে। আবার চালু হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।” অন্যদিকে, মেলা কমিটির সভাপতি দেবব্রত কুমার সানা (দেবু) এ প্রতিবেদকের নিকট দাবি করেন, তারা স্কুল মাঠে সার্কাস চালাচ্ছেন মাত্র। সেখানে কোন অশ্লীল নৃত্য বা জুয়া চলছে না! এদিকে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, জুয়া ও নগ্ন নৃত্যের জমজমাট আসর পরিচালনা করছেন স্থানীয় ইউপি মেম্বর গোপাল চন্দ্র মন্ডল ও স্থানীয় দেবব্রত কুমার সানা ওরফে দেবু। প্যান্ডেলের ভিতরে জুয়ার পশরা মাতিয়ে রেখেছে আশাশুনি সদরের জবেদ আলী আর নগ্ন নৃত্য মাতিয়ে রেখেছেন তারই পুত্র আরিফুল ইসলাম। স্টেজে চলছে নগ্ন নৃত্য আর স্টেজের পিছনে আরও জঘন্য কারবার চলছেÑ এমনটি অবশ্য দাবি মেলা মাঠের অনেকেরই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায় সব দিক ম্যানেজ করেই চলছে এসকল অবৈধ কারবার। এ নগ্ন নৃত্য ও জুয়ার আসরের জন্য স্কুলের মাঠ ব্যবহার করার জন্য প্রতিদিন স্কুল কর্তৃপক্ষকে দিতে হচ্ছে ১০হাজার টাকা। শুধু উৎসবের আড়ালে নয় উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে প্রতিদিনই গোপনে বসছে জুয়ার আসর। এসকল আসরে সবকিছু হারিয়ে নিঃশ্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ আর লাভবান হচ্ছে বোর্ড মালিক ও আয়োজকরা। উপজেলার সচেতন মহলের দাবি দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন উর্র্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবনে যে অস্থিরতা নেমে এসেছে সেখানে পরিবারের খাদ্য যোগাতে উপার্জনের অর্থ শেষ হয়ে যাওয়া দরিদ্র মানুষের সামান্য রোজগারের অর্থও চলে যাচ্ছে জুয়া ও অশ্লীলতায়। বেড়ে যাচ্ছে পারিবারিক অশান্তি। অসহায় সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়েই জড়িয়ে পড়ছে চুরি, ছিনতাইসহ নানাবিধ অপকর্মের সাথে। অবনতি হচ্ছে উপজেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির। এই দুষ্ট চক্র যেন এভবে কথিত সার্কাসের নামে নগ্ন নৃত্য ও জুয়ার আসর সাজিয়ে দরিদ্র মানুসের কষ্টে অর্জিত অর্থ পকেট কেটে খালী করতে না পারে সেদিকে জেলা প্রশাসকের সজাগ দৃষ্টি কামনা করেছেন উপজেলার সচেতন সমাজ।