স্পোর্টস ডেস্ক: লিওনেল মেসিকে ছাড়া পারেনি আর্জেন্টিনা। ব্রাজিল পেরেছে নেইমার ছাড়া। লাতিন অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের এবারের রাউন্ডের ম্যাচে মেসি নেই চোটের কারণে। তার বার্সেলোনা সতীর্থ নেইমার অবশ্য ভেনিজুয়েলার বিপক্ষে ম্যাচটি খেলতে পারেননি কার্ড সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে। দলের সেরা অস্ত্রকে ছাড়াও অবশ্য জয়রথ থামেনি ব্রাজিলের। ভেনিজুয়েলার মাঠ থেকে ২-০ গোলের জয় তো পেয়েছেই, সঙ্গে আবার ২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে প্রথমবারের মতো বসেছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। মেরিদার ম্যাচের অষ্টম মিনিটে ব্রাজিলকে এগিয়ে নেন গ্যাব্রিয়েল হেসুস। বলিভিয়ার বিপক্ষেও লক্ষ্যভেদ করা এই ফরোয়ার্ড ভেনিজুয়েলার গোলরক্ষক হের্নান্দেসের দেওয়া ‘উপহার’টা লুফে নিয়েছেন দারুণভাবে। সতীর্থ এক খেলোয়াড়ের ব্যাক পাস ধরে সামনে বাড়িয়েছিলেন হের্নান্দেস, যদিও বল সরাসরি যায় হেসুসের পায়ে। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড অসাধারণ এক চিপে বল জালে পাঠিয়ে দেন ভেনিজুয়েলার গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে। ৫৩ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন উইলিয়ান। রেনাতো অগাস্তোর ক্রস বক্সের ভেতর থেকে আড়াআড়ি শটে জালে জড়ান চেলসি মিডফিল্ডার। এই জয়ে ২১ পয়েন্ট নিয়ে লাতিন অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শীর্ষে বসলো ব্রাজিল। তাদের এই সুযোগটা করে দিয়েছে অবশ্য উরুগুয়ে! এগিয়ে থেকেও যে তারা আগের ম্যাচে ২-২ গোলে ড্র করে ফিরেছে কলম্বিয়ার মাঠ থেকে। শুরুতে অ্যাবেল অগুইলারের লক্ষ্যভেদে ১৫ মিনিটে স্বাগতিকরা এগিয়ে গেলেও ২৭ মিনিটে সমতায় ফেরে উরুগুয়ে ক্রিস্তিয়ান রোদ্রিগেসের গোলে। এর পর ৭৩ মিনিটে তো এগিয়েই গিয়েছিল সফরকারীরা লুই সুয়ারেসের লক্ষ্যভেদে। কিন্তু শেষ বাঁশি বাজার মিনিট ছয়েক আগে ইয়েরি মিনা জাল খুঁজে পেলে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়তে হয় উরুগুয়েকে। তাতে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে নেমে যেতে হয়েছে তাদের।
এবার হেরেই গেল আর্জেন্টিনা
লিওনেল মেসি নেই, টানা দুই ম্যাচ ড্র। লাতিন অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বিবর্ণ দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। দলের সেরা অস্ত্রের অভাব খুব করে টের পেয়েছিল আগেই। এর পরও অন্তত পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়তে পেরেছিল তারা। এবার তো তাও হলো না! সের্হিয়ো আগুয়েরোর পেনাল্টি মিসে ঘরের মাঠে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে হেরেই গেছে আর্জেন্টিনা। ১-০ গোলের হারে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের পথটা তাই আরও কঠিন হয়ে গেল আলবিসেলেস্তেদের। মেসি ছাড়া পুরো শক্তির দলই পেয়েছিলেন আর্জেন্টিনা কোচ এদগার্দো বাউসা। ফরোয়ার্ডে আনহেল দি মারিয়া, সের্হিয়ো আগুয়েরো, গনসালো হিগুয়েইন-ছিলেন সবাই। এর পরও প্রতিপক্ষের জালে একবারের জন্যও বল জড়াতে পারেনি লাতিন জায়ান্টরা। ১৮ মিনিটে দেরলিস গনসালেসের গোলটাই তাই জয় নিশ্চিত করে সফরকারী প্যারাগুয়ের। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে দারুণ এক গোল করেছেন এই স্ট্রাইকার। ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে গোল শোধের জন্য এতটা সময় পাওয়ার পরও কাজে লাগাতে পারেনি আর্জেন্টিনা। আক্রমণের পর আক্রমণ চালিয়েছে ঠিকই, কিন্তু গোল মুখের সামনে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছেন আগুয়েরো-হিগুয়েইনরা। বিশেষকরে আগুয়েরো, ম্যানচেস্টার সিটি ফরোয়ার্ড একেবারেই ব্যর্থ। চোটের কারণে এই ম্যাচে খেলতে পারবেন কিনা, সেই সংশয় জন্ম নিলেও নিজেই ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি প্রস্তুত। মাঠে ছিলেনও শুরু থেকে, কিন্তু করতে পারলেন না কিছুই। উল্টো সমতায় ফেরার দারুণ সুযোগ পেয়েও করেছেন নষ্ট। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা, স্পট কিক নিতে আসা আগুয়েরো দুর্বল শট ঠেকাতে কোনও সমস্যাই হয়নি প্যারাগুয়ে গোলরক্ষকের। দ্বিতীয়ার্ধে তো প্যারাগুয়ের ১১ জন খেলোয়াড় পাহারা দিয়েছে তাদের রক্ষণ! সেই বাধার দেয়াল ভাঙতে না পারায় বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় হার দেখতে হলো মেসিবিহীন আর্জেন্টিনার। এই রাউন্ডের আগের ম্যাচ ড্র করে ফিরেছিল তারা পেরুর মাঠ থেকে। দুইবার এগিয়ে গিয়েও পয়েন্ট ভাগাভাগি করার হতাশা ঝেড়ে নতুন মিশনের কথা শুনিয়েছিলেন বাউসা, যে মিশনটা আরও বড় হতাশা দিয়ে গেল তাদের। ১৬ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানটা ধরে রাখলেও রাশিয়া বিশ্বকাপের মূল পর্বে সরাসরি খেলার পথে বড় ধাক্কাই খেল আলবিসেলেস্তেরা।