ফিচার

সাতক্ষীরায় এক পরিবারের উপর ৯ বার হামলা, স্বামী-সন্তান হত্যার বিচার পেতে পথে পথে আমেনা

By Daily Satkhira

October 06, 2017

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাড়ে তিন বছরের ব্যবধানে পৃথক ঘটনায় স্বামী সিরাজুল ও ছেলে রাসেল কবিরকে গুলি করে হত্যার বিচার দাবিতে পথে পথে ঘুরছেন সাতক্ষীরার কুচপুকুরের গৃহবধূ আমেনা খাতুন। এই দুই ঘটনা ছাড়াও তার পরিবারে আরও সাতটি হত্যা চেষ্টা, বোমাবাজি ও অগ্নি সংযোগেরও বিচার দাবি করেছেন তিনি। একমাত্র মেয়ে লাভলীকে সাথে নিয়ে আমেনা খাতুন আইন আদালত করেও তার শেষ নামাতে পারছেন না। তিনি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। শুক্রবার আমেনা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ গত ছয় মাসেও তার ছেলে রাসেল কবির হত্যার আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে স্বামী সিরাজুল হত্যার দুই আসামি আনিসুর রহমান ও হবিবর ডাকাত পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। আমেনা খাতুন জানান, ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে তার বাড়িতে ঢুকে একদল সন্ত্রাসী তার স্বামী সিরাজুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় তাদের বোন জামাই কওসার ও তার ছেলে শিমুল গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। সন্ত্রাসীরা তার দেবর নজরুল ইসলামকে হত্যার উদ্দেশ্যে খুঁজতে থাকে। তিনি জানান নজরুল প্রাণে বাঁচতে সাতক্ষীরা থানায় আশ্রয় নেন। আমেনা খাতুন বলেন এতেও ক্ষ্যান্ত হয়নি সন্ত্রাসীরা। তারা ২০১৭ এর ১০ এপ্রিল রাতে তার ছেলে রাসেল কবিরকে শহরের রাজারবাগান এলাকার ভাড়া বাড়ির সামনে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় তিনি ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে সাতক্ষীরা থানায় মামলা করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন যে, তার ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা রাসেল কবির তার স্বামী সিরাজুল হত্যাসহ সবগুলি মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিল। তাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিল তারা। প্রাণ বাঁচাতে রাসেল গ্রামের বাড়ি ছেড়ে শহরে এসেও রক্ষা পায়নি। তিনি বলেন রাসেলকে হত্যার পর সন্ত্রাসীদের নজর রয়েছে তার ছেলে নাহিদ হাসান অভির ওপর। আমেনা খাতুন আরও জানান ২০১৩ সালের ৩ মার্চ তাদের বাড়ি ও ধানচালের আড়তে সন্ত্রাসীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সালের ১২ মে নজরুল ও তার ভাই আমজাদকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে। এতে তারা দুজন আহত হন। সে বছরের ২৭ জুন তাদের দোকান লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা পরপর চারটি বোমা ছুড়ে মারে। এতে নজরুলের বোন শাহানা খাতুন ও বোন জামাই জাহান আলি আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে গেছেন। এর কিছুদিনের মাথায় ২০ জুলাই নজরুলের বাড়িতে বোমা নিক্ষেপে আরও একটি শিশু আহত হয়। সে বছরের ১৬ নভেম্বর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তার আত্মীয় ইউসুফ আলিকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। কয়েকদিন পর তাকে মুক্তি দেয় সন্ত্রাসীরা। ২০১৬ সালের ৮ এপ্রিল আমেনার দেবর নজরুল ইসলামের বাড়িতে ফের সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা করে। এতে তিনি আহত হন। এর পর থেকে নজরুল ও তার ভাতিজা রাসেল কবির সাতক্ষীরা থানায় রাত্রি যাপন করতেন। এক পর্যায়ে শহরে নতুন বাড়িভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন রাসেল কবির। এদিকে এসব ঘটনার পর গত ২৪ মার্চ রাতে একদল সন্ত্রাসী আমেনা খাতুনের বাড়িতে বোমা হামলা চালায়। একই সাথে তারা গুলিও করে। এতে বাড়ির দরজা জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি জানান সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য ছিল তার ছেলে যুবলীগ নেতা রাসেল কবিরকে হত্যা করার। রাসেল কবির এ সময় তার ছেলে নাহিদ হাসান অভিকে নিয়ে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। আমেনা খাতুন বলেন, সবগুলি ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারের জন্য বারবার অভিযান চালিয়ে খুঁজে না পেলেও বাবা ও ছেলে হত্যার মূল আসামিরা অজ্ঞাত স্থান থেকে তাদের হুমকি দিচ্ছে। বিষয়গুলি সম্পর্কে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহমেদ জানান সবগুলি মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। কয়েকটি মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযানও চলছে। রাসেল হত্যায় তিন আসামি শুকুর আলি, আইয়ুব আলি ও ইকবাল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া রাসেলের বাবা সিরাজুল হত্যার দুই আসামি হবিবর ডাকাত ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর ও আনিসুর রহমান পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হন।