নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লবজিৎ কর্মকার-এর অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, খামারিদের সাথে দুর্ব্যবহার ও প্রকল্পের টাকা লুটপাট প্রভৃতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। মন্ত্রণালয় বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে এই তদন্তের ভার দিয়েছে। তিনি অনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরুছেন। গত ৫ অক্টোবর বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইফুজ্জামান খান জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে দিনভর তদন্ত কাজ পরিচালনা করেন। খামারি, ভূক্তভোগী এবং সাংবাদিকরা উপস্থিত থেকে বিপ্লবজিৎ কর্মকারের অনৈতিক কর্মকা-ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এ সময় সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্র দাশ উপস্থিত ছিলেন। খামারি তুজলপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম লিখিত অভিযোগে বলেন, তার তিনটি গরু রোগে আক্রান্ত হয়। অসুস্থ হবার পর তাৎক্ষণিকভাবে ডা. বিপ্লবজিৎ কর্মকারকে মোবাইলে যোগাযোগ করেন। কিন্তু বিপ্লবজিৎ কর্মকার চিকিৎসার জন্য তার বাড়িতে যাননি এবং কোন লোকও পাঠাননি। ফলে পরের দিন গরু তিনটি চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। এতে জাহাঙ্গীরের ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। ডাঃ বিপ্লবজিৎ কর্মকার তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তিনি তার এই ক্ষতির জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। বিভিন্ন অভিযোগ করেন খামারি রাজু। তদন্তানুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যক্তিরা ডা. বিপ্লবজিৎ কর্মকারের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ উপস্থাপন করেন। তারা বলেন, ডা. বিপ্লবজিৎ কর্মকার প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের টাকা, করেনটাইন স্টেশনের টাকা, ঘাস চাষ প্রকল্পের টাকাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিপ্লবজিৎ কর্মকার অর্জিত টাকা দিয়ে শহরতলীর বিনেরপোতা এলাকার গোপিনাথপুর গ্রামে জমি কিনেছেন। হাতুড়ে প্রাণি চিকিৎকদের দিয়ে উপজেলার প্রাণিসম্পদ সেবা চলতে থাকায় চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। উল্লেখ্য, সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগদানের পর থেকে বিপ্লবজিৎ কর্মকার অফিসের টাকা হরিলুট করে যাচ্ছেন। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্র দাশ নাকি তার ভয়ে কিছুই বলতে পারেন না। কারণ বিপ্লবজিৎ কর্মকার একজন মন্ত্রীর ভয় দেখান। তিনি মন্ত্রীর নাকি খুব কাছের লোক। মন্ত্রীর বাড়ি ও তার বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলায় এবং একই এলাকায়। এভাবেই তিনি তার অফিসসহ জেলা অফিসে প্রচ্ছন্ন প্রভাব বিস্তার করে রেখেছেন। প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে বিপ্লবজিৎ কর্মকার করেন্টাইন স্টেশন, ঘাস চাষ প্রকল্প, ভেড়া পালন প্রকল্প, ভবন সংস্কার, এনএটিপি’র ভ্রমণ ভাতা, প্রভৃতি টাকার ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করে আসছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে নিয়েছেন পারিতোষিক। কখনোই তিন নিজে মাঠ পরিদর্শনে যান না ভ্যাকসিন ও মেডিসিন দেয়া হয় না খামারিদের কাছে। উচ্চ মূল্যে বিক্রি করেন হাতুড়ে ডাক্তারদের কাছে। আবার টেন্ডার ছাড়াই তিনি নিজ হাত করেছেন অফিস ভবন সংস্কার। এভাবেই তিনি আত্মসাৎ করেছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এ সব টাকায় তিনি কিনেছেন গোপিনাথপুর গ্রামে বাড়ি করার জন্য জমি। জেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একজন কর্মচারি জানান, এ সব বিষয় নিয়ে কেউ কথা বলতে গেলে বিপ্লবজিৎ কর্মকার তাকে ধমকান। কর্মচারীদের সাথে করেন দুর্ব্যহার। ভয় দেখান বদলি করে দেবার। একই কারণে তদবির করে এই অফিসের কম্পাউন্ডার ইসমাইল হোসেনকে বদলি করে দিয়েছেন কালিগঞ্জ প্রাণিসম্পদ অফিসে। গরু, ছাগল, ভেড়া, কবুতর, কোয়েল পাখি, হাঁস ও মুরগির খামারিদের অনেকেই এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন, উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বিপ্লবজিৎ কর্মকার একদিনও তাদের খামার পরিদর্শন করেননি। তারা তার কাছে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা চাইলেও এতে তিনি কান দেন না। পুরো সদর উপজেলা প্রাণি চিকিৎসা সেবা চলছে ব্র্যাক এবং বিভিন্ন কোম্পানির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে। এ কারণে উপজেলায় ভেঙে পড়েছে প্রণি চিকিৎসা সেবা।