জাতীয়

বাংলাদেশে ব্লক করা হচ্ছে ‘ব্লু হোয়েল গেম’, সতর্ক নজরদারি

By Daily Satkhira

October 09, 2017

ডেস্ক রিপোর্ট : দেশে ব্লক করা হচ্ছে আলোচিত গেম ব্লু হোয়েলের লিংক। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে গেমটির ব্যাপারে নজরদারি বাড়িয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সম্প্রতি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ব্লু হোয়েল গেম নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে পাওয়া অভিযোগ এবং বন্ধের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ব্লু হোয়েলের মতো যত ক্ষতিকারক গেম আছে সে সম্পর্কে পারিবারিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে সবাইকে সচেতন করতে হবে।’ এ ব্যাপারে তিনি দেশের সব গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। পলক বলেন, ‘আমরা ব্লু হোয়েল গেমটিকে শতভাগ ফলো করছি। অনেক ধরনের সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। ফেসবুক, মেসেঞ্জারে এসএমএস দিচ্ছে, নক করে গেমটি খেলতে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে- যার সবকিছুই সঠিক নয়। আমরা সব সময় দেখছি, লিংকগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে, রিমুভ করা হচ্ছে। আমরা গোয়েন্দা সংস্থা, বিটিআরসিকে (টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা) বলেছি, সেগুলো ব্লক করতে। পাশাপাশি আমাদের আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) বিভাগের যে বিডি-সার্ট আছে তারাও গেমটির প্রতি নজর রাখছে।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেমটির ভয়ঙ্কর দিক হলো এর অ্যাপ। বলা হচ্ছে, অ্যাপটি স্মার্টফোনে একবার ইনস্টল হয়ে গেলে তা আর রিমুভ করা যায় না। ফলে নোটিফিকেশন আসতেই থাকে। যা এক পর্যায়ে বিরক্তির চূড়ান্ত পর্বে নিয়ে গেমটি খেলতে বাধ্য করে। এছাড়া, এ সংক্রান্ত বিভিন্ন লিংক বা সাইটে (অচেনা, অজানা) ক্লিক করলেই বিপদ। সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, গুগলের প্লে স্টোর বা অ্যাপলের অ্যাপস্টোরে গেমটি সাধারণভাবে পাওয়া যায় না। ডার্ক ওয়েবে গেমটি পাওয়া যেতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র সচিব সরওয়ার আলম বলেন, ‘আমরা আরও আগে থেকেই কাজ শুরু করেছি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও কাজ করছে। তারা যদি আমাদের আগে জানাতে পারেন, তাহলে আমরা তা বন্ধ করে দেবো। এছাড়া, আমাদের (বিটিআরসি) সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারাও ব্লু হোয়েল গেম নিয়ে কাজ করছেন।’ প্রসঙ্গত, বিশ্বজুড়ে ব্লু হোয়েল গেমের নাম ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে এটি চ্যালেঞ্জ দেওয়া এবং তা আদায়ের গেম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তবে সব আলোচনাকে ছাপিয়ে গেছে এই গেমের সঙ্গে আত্মাহুতির বিষয়টি উঠে আসায়। যে কারণে ব্লু হোয়েল গেমকে অনেকে সুইসাইড গেমও বলছেন। এই গেমের শুরুতে একটি গ্রুপ গঠন করা হয়। যেখানে একজন থাকেন তত্ত্বাবধায়ক এবং কয়েকজন সদস্য থাকেন। ৫০ দিনের এ খেলায় নির্দিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক প্রতিদিন অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে একটি কাজ বা চ্যালেঞ্জ দেন। গেমে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই সেই কাজটি করতে হয়। শুরুর দিকে এসব কাজ নির্দিষ্ট গান শোনা, গভীর রাতে হাঁটাহাঁটি করা, ভয়ঙ্কর সিনেমা দেখা ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ৫০তম ধাপটি হলো আত্মহত্যার চেষ্টা করা। এই চেষ্টা করেও যিনি বেঁচে যাবেন, তিনি অথবা তারাই হবেন চ্যাম্পিয়ন। গেমের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি কাজের ছবি তুলে তা গ্রুপের সবাইকে দেখাতে হয়। অবশ্য অংশগ্রহণকারীরা কিভাবে এই গেমটি খেলেন, তা এখনও নিশ্চিত নয়। কেউ কেউ বলেন, এই গেম খেলতে হলে স্মার্টফোনে কিছু অ্যাপ ইনস্টল করতে হয়। আবার কারও মতে, ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে দেওয়া হয়ে থাকে। তারপর নিয়মিত সেসব প্ল্যাটফর্মেই চলে গেমের কার্যক্রম। এদিকে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে ব্লু হোয়েল নামে কোনও গেম আছে কিনা তা নিশ্চিত নয়। তারপরও সারাবিশ্বে এটা ছড়িয়ে পড়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। আমেরিকা ও ইউরোপের স্কুল এবং পুলিশ বিভাগ এ গেমের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে কাজ শুরু করেছে। ওই অঞ্চলের পুলিশ সন্তানদের ওপর কড়া নজর রাখতে অভিভাবকদের নির্দেশ দিয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, ব্লু হোয়েল গেমের উৎপত্তি রাশিয়ায়। আর এ গেম খেলে এ পর্যন্ত ১৩০ জন মারা গেছেন এবং অন্তত দুই জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।