আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনের এক বছর পূরণ হবে আগামী ২৩ অক্টোবর। কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে দলের উপকমিটির সহসম্পাদকের নাম ঘোষণা করার কথা থাকলেও নানা কারণে তা হয়নি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এবার জট খুলছে খুব শিগগিরই। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় উপকমিটির গুরুত্বপূর্ণ ‘সহসম্পাদক’ পদে নাম মনোনীত করা হচ্ছে। এ পদ পূরণে দলের সাংগঠনিক ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যের কাছে সাবেক ছাত্রনেতাদের নাম চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সূত্র জানায়, গত শনিবার বিকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনির্ধারিত এক বৈঠকে তিনি নাম চেয়েছেন। গত কেন্দ্রীয় উপকমিটিতে খেয়াল-খুশি মতো ঢালাওভাবে সহসম্পাদক নিয়োগের কারণে জটিলতা সৃষ্টি হয়। তাই এবার ব্যাপক যাচাই-বাছাই করেই মনোনীত করা হচ্ছে। শনিবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, এনামুল হক শামীমসহ বেশ কয়েকজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সহসম্পাদক পদ পূরণের জন্য নামের তালিকা চান। সূত্র জানিয়েছে, ওই তালিকা দ্রুত সময়ের মধ্যেই জমা দিতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রে জমা পড়া নামগুলো এবং যাদের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য করা হবে তাদের কাজ করতে বলা হবে। তিন মাস তারা বিশেষ পর্যবেক্ষণে থাকবেন। তিন মাস তারা সন্তোষজনক কাজ করলে পরবর্তীতে তাদের সহসম্পাদক মনোনীত করে চিঠি ইস্যু করা হবে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৫ অনুচ্ছেদের ‘চ’ ধারায় (বিভাগীয় উপকমিটি গঠন) বলা হয়েছে, প্রত্যেক সম্পাদকীয় বিভাগের কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল ও সমন্বিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি সম্পাদকীয় বিভাগে একটি করে উপকমিটি গঠন করবে এবং তা গঠিত হবে ১ জন চেয়ারম্যান, ১ জন সম্পাদক, অনূর্ধ্ব ৫ জন সহসম্পাদক, প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষজ্ঞ সদস্য, সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে।
সূত্র জানায়, গঠনতন্ত্রের আলোকে এবার সর্বোচ্চ ৯৫ জন সহসম্পাদক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সূত্র জানায়, ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে প্রথমবারের মতো দলের গঠনতন্ত্রে সহসম্পাদক পদ সংযোজন করা হয়। পরবর্তীতে ৯৫ জন সহসম্পাদক নিয়োগ করা হয়েছিল। তাদের অনেকেই এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। এরপর ২০০৯ সালের ২৪ জুলাইয়ের কাউন্সিলে কোনো সহসম্পাদক নিয়োগ করা হয়নি। সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর কাউন্সিলের পর কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার সঙ্গে ৬৬ জন সহসম্পাদকের নামও ঘোষণা করা হয়। এসব সহসম্পাদক নিয়োগ দিয়েছিলেন দলের সভাপতি নিজে। পরে তা বেড়ে ৬০০ ছাড়িয়ে যায়। কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদকদের দায়িত্ব বণ্টনের বিষয়ে সম্প্রতি এক বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে তিনজন করে সহসম্পাদক সংযুক্ত থাকবেন। এ বিষয়ে আমরা আজকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রচার এবং দফতর এ দুটি বিভাগে ৫ জন করে থাকবেন। তথ্য-গবেষণায় চারজন থাকবেন। এভাবে আমরা চিন্তা-ভাবনা করেছি। ওই আলোকে আমরা পরবর্তী মিটিংয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করব। হয়তো সেক্ষেত্রে আরও একটি মিটিং করে চূড়ান্ত করা হবে। এরপর আমরা আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে পরামর্শ করে ধারাবাহিকভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশ করব। শনিবারের বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আমরা তো পুরনোদের চিনি। এবার নতুনদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছি। এখানে আমাদের একটা ক্যাটাগরি আছে। যারা অন্যান্য শাখা বা কমিটিতে আছেন, তারা কিন্তু উপকমিটিতে সহসম্পাদক পদে থাকতে পারবেন না। তবে সদস্য (কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য) থাকতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, সহসম্পাদক হবেন মোট ৯৫ জনের মতো।
সহসম্পাদক পদপ্রত্যাশীরা প্রতিদিন ধরনা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে। একেকবার গুজব শোনেন আর আশায় বুক বাঁধেন তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর তালিকা ঘোষণা করা হয় না। এ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা বলেন, ছাত্রলীগ ছেড়েছি ১০ বছরের বেশি। একটা স্বতন্ত্র পেশায় আছি। এলাকায় সবাই জানে রাজনীতি করি। যখনই এলাকায় যাই, শুভাকাঙ্ক্ষীরা জিজ্ঞেস করে কোন পদে আছি, কিছু বলতে পারি না, বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।