আজকের সেরা

কেঁচো খুড়তে কেউটে! সাতক্ষীরা পৌরসভায় অর্ধকোটি টাকার নির্মাণ কাজের ঠিকাদার কে?

By Daily Satkhira

October 11, 2017

মো. বশির আহমেদ : সম্প্রতি ‘সাতক্ষীরা পৌরসভার তৃতীয় তলার উত্তর পাশের বর্ধিত করণ’ এর ঠিকাদারি কাজ নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের পর হুলুস্থুল শুরু করেছে। নির্মাণ কাজের অর্ধেক সম্পন্ন হওয়ার পর ব্যবহৃত উপকরণ পরীক্ষা করানো হচ্ছে। বিভিন্ন ফোরামে প্রকাশিত সংবাদ ও সংবাদপত্র সম্পর্কে ক্রমাগত বিষোদগারও চলতে থাকে। সংবাদের কোথায় তথ্যগত ক্রুটি আছে বা ভুল আছে সে সম্পর্কে নিয়মতান্ত্রিক কোন প্রতিবাদ বা ভাষ্য না দিয়ে এধরনের ঢালালোও সমালোচনার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য! এ যেন কোঁচো খুড়তে কেউটে! এই নির্মাণ কাজে সরকারি বিধি মোতাবেক সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের অনুকূলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাহিন এন্টারপ্রাইজকে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার একটি ব্যাংক ড্রাফট নির্মাণ কাজের পারফর্ম্যান্স সিকিউরিটি হিসেবে জমা দিতে হয়। যা দরপত্র অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন হওয়ার ২৮(আঠাশ) দিন পর ঠিকাদার ফেরত পাবেন। বিষ্ময়কর তথ্য হলো- নির্মাণ কাজ চলমান থাকা অবস্থায় এই পারফর্ম্যান্স সিকিউরটির ব্যাংক ড্রাফটটি ছাড় করা হয়েছে এবং ব্যাংক থেকে ইতিমধ্যেই সে টাকা উত্তোলিত হয়েছে! এ ধরনের অনিয়ম বড় ধরনের দুর্নীতি এবং সরকারি বিধির চরম লঙ্ঘন। প্রথমেই আমরা অনুসন্ধানে নামিÑ নির্মাণ কাজের দুর্নীতি বা অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় ঠিকাদারের পরিবর্তে পৌর মেয়রের অসন্তুষ্ট হওয়ার কারণ কি তা জানতে। তথ্যানুসন্ধানে ওই কাজের ভয়ংকর অনিয়মের নানা তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যা জানতে পারলে চমকে উঠবেন সাতক্ষীরা পৌরবাসীসহ সচেতন সকল নাগরিক। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, একটি বিদেশি প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাতক্ষীরা পৌরসভার একটি প্রশস্ত ভবন প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী সাতক্ষীরা পৌরসভার উত্তর পাশের ছাদ ঢালাই করে সেখানে ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সাতক্ষীরা পৌরসভা। স্থানীয় সরকারের ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের সারাদেশে প্রায় ৫৩০ কোটি টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে বরাদ্দ দেয়া হয়। সাতক্ষীরা পৌরসভা এই উন্নয়ন বরাদ্দের প্রায় ৫০ কোটি টাকা পাচ্ছে। এই বরাদ্দের বিপরীতে ২১ জুন’১৭ তারিখে কাজটি করানোর জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ওই দিন অনেকে টেন্ডার জমা দেন। দরপত্র জমা দেওয়া ঠিকাদারদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে ১০৫ নং স্মারকে ৯ জুলাই ’১৭ তারিখে ছাদের ওয়ার্ক অর্ডার(প্রাক্কলিত ব্যয় ৪৯, ৯৯, ৯৫৪ টাকা, চূক্তিমূল্য ৪৭, ৪৯, ৯৫৬ টাকা) পায় সাতক্ষীরা শহরের কাছারী পাড়া এলাকার মাহিন এন্টারপ্রাইজ। যার স্বত্ত্বাধিকারী মো. মফজুলার হক। কাজটি ১৫ সেপ্টেম্বর ’১৭ তারিখে ২ মাসের মধ্যে শেষ করার কথা উল্লেখ করা হয় কার্যাদেশে। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, এ ঠিকাদারি কাজটি কৌশলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহিন এন্টারপ্রাইজকে করতে দেয়া হয়নি। বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে স্বয়ং পরোক্ষভাবে পৌর মেয়রই এ কাজের ঠিকাদারি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের স্বপক্ষে যথেষ্ঠ প্রমাণও পাওয়া গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহিন এন্টাপ্রাইজের সাথে ও জেলা বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা ও সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহম্মেদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবের একাধিক লেনদেনের তথ্যও পাওয়া গেছে। মাহিন এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মফজুলার হকের ভাই এম এম মজনুকে তাজকিন আহম্মেদ তার এবি ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখায় তার ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে এই নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ প্রদানের পর চার লক্ষ টাকা একটি চেকের মাধ্যমে প্রদান করেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাজকিন আহম্মেদ অবিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “কাজটি মাহিন এন্টারপ্রাইজই করছে। আমি নিজেও একজন ঠিকাদার। তাই অন্য ঠিকাদারের সাথে আমার লেনদেন এর সম্পর্ক থাকতেই পারে।” বিশ্বস্ত একটি সূত্র থেকে আরও জানা গেছে, নির্মাণ কাজ শুরুর পর প্রথম দফায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাহিন এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে ১৬ লক্ষ টাকা ছাড় করা হয়। এর দু’একদিন পরই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ওই ষোল লক্ষ টাকা নিজ(তাজকিন আহম্মেদ) নামে একটি চেকে গ্রহণ করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র তাজকিন আহম্মেদ বলেন, “আমি ঠিকাদার মানুষ। কখন কিভাবে কার সাথে কত টাকা লেনদেন করেছি তা মনে নেই। তবে আমার ব্যবসার কারণে আমি লেনদেন করতেই পারি।” নির্মাণ কাজের বিপরীতে জমাকৃত পারফর্মান্স সিকিউরিটির আড়াই লক্ষ টাকার ব্যাংক ড্রাফট কিভাবে কাজ শেষ হওয়ার আগে ছাড় করা হলো জানতে চাইলে মেয়র বলেন, “এটি আমার জানা নেই। এসব বিষয় একাউন্টস বলতে পারবে। আপনি এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এর সাথে কথা বলুন।” তার পরামর্শ মতো নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল করিমের কক্ষে গিয়ে বুধবার দুপুর আড়ইটার সময় তাকে রুমে পাওয়া যায়নি। পরে তাকে ফোন করলে তিনি ছুটিতে আছেন এবং ঢাকার পথে গাড়িতে আছেন বলে জানান। অন্যদিকে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাহিন এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. মফজুলার হক ও তার ভাই এম এম মজনুর নিকট এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা উভয়েই এসম্পর্কে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং বলেন, “মেয়র মহোদয় সবকিছু জানেন।” নির্মাণ উপকরণের পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা এলজিইডি’র ল্যাব টেকনিশিয়ান নূরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে পৌরসভা ফরওয়ার্ডিং করে কিছু মালামাল জমা দিয়েছে।” কিন্তু কাজ তো শেষে হয়ে গেছে। এখন মালামাল টেস্ট করে কি লাভ হবেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাজ শেষ হয়েছে তো বেশ কয়েকদিন আগে। কি লাভ হবে সেটি পৌর কর্তৃপক্ষের ব্যবহার। এছাড়া উক্ত কাজে কি কি মালামাল ব্যবহার করেছেন তা তার জানা নেই বলে তিনি জানান।”