আন্তর্জাতিক

মোদির সাথে কিমের তুলনা করে ২২ ব্যবসায়ী শ্রীঘরে

By Daily Satkhira

October 15, 2017

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-আনের সাথে তুলনা করে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন কানপুরের একদল ব্যবসায়ী।

শহরের একটি ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে কানপুর জুড়ে হোর্ডিং লাগানো হয়েছিল, কিম যেভাবে দুনিয়াকে ধ্বংস করতে চান, মোদিও না কি সেভাবেই ভারতে ব্যবসাপাতি ধ্বংস করে দিচ্ছেন।

পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর ওই ২২জন ব্যবসায়ী অবশ্য মুচলেকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করার কোনও উদ্দেশ্য তাদের ছিল না।

তবে সম্প্রতি চালু হওয়া জিএসটি কর ও গত বছরের নোটবন্দী নিয়ে দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তা শাসক দল বিজেপিও পুরোপুরি অস্বীকার করতে পারছে না – আর কানপুরের ঘটনাতেও তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।

আসলে ভারতের ‘বানিয়া’ সমাজ, অর্থাৎ ট্রেডার বা ব্যবসায়ীদের বরাবরই বিজেপি-র সমর্থক বলে ধরা হয়ে থাকে।

ফলে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে সেই বানিয়ারাই যখন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার স্বৈর শাসক কিম জং-আনের তুলনা করে পেল্লায় সব পোস্টার লাগান, তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না বর্তমান সরকারের আমলে ব্যবসায়ীরা ঠিক স্বস্তিতে নেই।

কানপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার ভার্মা বলছিলেন, “শহরের গোবিন্দনগর থানা এলাকায় এমন বেশ কিছু হোর্ডিং লাগানো হয়েছিল। যাতে পাশাপাশি ছিল কিম জং-আন আর নরেন্দ্র মোদির ছবি, একজনের ছবির নিচে লেখা দুনিয়াকে বরবাদ করেই আমি থামব – আর প্রধানমিন্ত্রীজির ছবির নিচে লেখা ব্যবসাপাতিকে বরবাদ না-করে আমি থামব না।”

এই হোর্ডিং জনরোষ তৈরি করেছে, এই অভিযোগে পুলিশ তাতে নাম থাকা রাজু খান্না-সহ মোট ২২জন ব্যবসায়ী নেতাকেই আটক করে।

মুচলেকা দিয়ে তারা আপাতত জামিন পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু সাড়ে তিন মাস আগে ভারতে চালু-হওয়া গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স বা জিএসটি-তে যে ব্যবসায়ীদের নাভিশ্বাস উঠেছে সেই বাস্তব তাতে আড়াল করা যাচ্ছে না।

দিল্লির সব্জিমান্ডিতে যেমন ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ, ব্র্যান্ডেড তরিতরকারিতে এই নতুন কর বসেছে -অথচ ‘ব্র্যান্ডেড সব্জি’ বলতে কী বোঝায় সেটাই স্পষ্ট নয়।

চাঁদনি চকে শুকনো ফলের পাইকারি বাজারেও বিভ্রান্তি চরমে, কারণ সেখানে কর শুধু বাড়েইনি – বাদামে ১২ শতাংশ আর কাজুতে ৫ শতাংশ জিএসটি নিয়েও গন্ডগোল হচ্ছে।

কানপুরে আটক হওয়া ব্যবসায়ীরা অবশ্য বলেছেন, তাদের প্রধান ক্ষোভ ছিল গত বছরের নোটবন্দীর পর থেকে ব্যাঙ্কগুলো তাদের কাছ থেকে খুচরো পয়সা আর নিতে চাইছে না।

বস্তুত নোটবন্দী আর জিএসটি-র এই জোড়া আক্রমণেই কিন্তু ভারতের ব্যবসায়ীরা দিশেহারা বোধ করছেন।

গত বছরের নোটবন্দীর মতোই জিএসটি-র নতুন পদ্ধতিতে সাধারণ ব্যবসায়ীরাই বেশি ভুগছে বলে তাদের দাবি। পেট্রোল-ডিজেলে কেন জিএসটি বসিয়ে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হল না, সে প্রশ্নও উঠছে।

নতুন চালু হওয়া জিএসটি পদ্ধতিতে এমন বহু জিনিসের ওপর কর বসেছে, যাতে আগে কখনও কর ছিল না। এর মধ্যে একটা হল জামাকাপড়।

রেডিমেড পোশাকের মতো এখন ছিটকাপড়েও কর বসায় গরিবরা ভুগছেন বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। দোকানে ঢুকে ক্রেতারা যখন শুনছেন জিএসটি গুনতে হবে, তারা ফিরে যাচ্ছেন।

ভারতে ব্যবসায়ী সমিতির প্রথম সারির নেতা ওপি আগরওয়াল তাই স্পষ্টই বলছেন, “চিরকাল বিজেপিকে সমর্থন করে আসার পর আমরা ব্যবসায়ীরা মোদি সরকারের কাছ থেকে কখনওই এটা আশা করিনি।”

কিন্তু ব্যবসায়ীদের এই ক্ষোভ-অসন্তোষ কি বিজেপি টের পাচ্ছে না? দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলছিলেন, “জিএসটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের কিন্তু আপত্তি নেই। হ্যাঁ, এর পদ্ধতিগত দিক নিয়ে তাদের কিছু বক্তব্য ছিল – কিন্তু এখন সেটা অনেকটাই সরল করে দেওয়ার পর তাদের মধ্যে বেশ সন্তোষ আর খুশি দেখা যাচ্ছে।”

“আসলে ট্রেডার বা ব্যবসায়ীরা চিরকালই আমাদের পক্ষে। সাময়িকভাবে তাদের হয়তো কিছুটা অসুবিধা হচ্ছিল, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপের পর সে বিতর্ক মিটে গেছে। এখন শুধু কংগ্রেস ওই ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছে।”

কিন্তু যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর মোদির সঙ্গে কিম জং-আনের তুলনা করে পোস্টার পড়ছে, তাতেই কি স্পষ্ট নয় জিএসটি-তে ব্যবসায়ীরা নারাজ?

রাহুল সিনহা অবশ্য একমত নন। তার যুক্তি, “নারাজ কথাটার প্রয়োগই এখানে ভুল। ব্যবসায়ীরা শুধু চেয়েছিলেন, জিএসটি পদ্ধতি সরল করা হোক। নারাজ এক জিনিস, আর এই দাবি জানানো সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস।”

জিএসটি-র জটিলতায় ব্যবসায়ীরা যে এখনও নাজেহাল, তা অবশ্য প্রকাশ হয়ে পড়ছে নানা ভাবেই। কানপুরে মোদি ও কিমের তুলনা-টানা হোর্ডিং তারই একটা প্রতীকী দৃষ্টান্ত, যা দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলছে বিজেপির কপালে।

তথ্য সূত্র : বিবিসি বাংলা।