দেবহাটা

দেবহাটায় ছকিনা ব্রিকস নামের ইট ভাটা নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ

By Daily Satkhira

October 17, 2017

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালা লংঘন করে ও প্রশাসনের পূর্বানুমতি ছাড়াই দেবহাটার দক্ষিন কুলিয়া গ্রামে বসতবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সন্নিকটে চার ফসলি জমিতে প্রস্তাবিত ছকিনা ব্রিকস নামের ইট ভাটা নির্মাণ কাজ আবারও অব্যহত রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এলাকাবাসির অভিযোগের ভিত্তিতে ভাটা মালিক মোশারফ হোসেন মুসাকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করা হলেও তিনি সেখানে হাজির হননি। হাজির না হয়ে তিনি আবারও ভাটার কাজ চালিয়ে যাওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে গত ২০ সেপ্টেম্বর ২২.০২.০০৪০.০৩৬.৬১.০০৫.১৬.১০৬৫ স্মারকে তাকে পূনরায় ভাটার যাবতীয় কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশসহ তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৫ এবং ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন, ২০১৩ আনুসারে কেন ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে না মর্মে লিখিতভাবে আবারও নোটিশ জারী করা হয়েছে। এদিকে, ছকিনা ব্রিকস নামের ইট ভাটা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য গত ২১ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টের আইনজীবি আমিনুল ইসলাম ভাটা মালিক মুসাকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে। যার অনুলিপি বিভিন্ন দপ্তওে প্রদান করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মধ্যম একসরা গ্রামের দ্বীন আলী গাজির ছেলে শহরের ইটাগাছা কামার পাড়া (বউ বাজার) এলাকায় বসবাসকারি নব্য কোটিপতি মোশারফ হোসেন ওরফে মুসা দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ কুলিয়া গ্রামে বসতবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সন্নিকটে চার ফসলি জমিতে প্রস্তাবিত ছকিনা ব্রিকস নামে একটি ইট ভাটা নির্মাণ কাজ শুরু করেন। উচ্চমূল্যে হারির টাকা দিয়ে জমির মালিকদের প্রলুব্ধ করে তিনি ডিড নেয়ার চেষ্টা করেন। মুছার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তারা ডিডে স্বাক্ষর করার জন্য জমির মালিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন। একই সাথে তারা বর্গাচাষিদের জমি ছেড়ে দেয়ার জন্য হমকি দিচ্ছে। জমির ডিড না দিলে পুলিশ দিয়ে সংশ্লিষ্টদের ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ আপত্তি করা শর্তেও পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালা অমান্য করে ও প্রশাসনের পূর্বানুমতি ছাড়াই ইতিমধ্যে তিনি সেখানে ভাটার চিমনি ও মটর নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। ভাটার বাকি কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।

এলাকাবাসি জানান, সেকেন্দ্রা মাঠে ইটভাটা নির্মাণ করা হলে এই এলাকায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যায় দেখা দেবে। এই এলাকায় আনসার আলি সরকারি প্রাইমারি স্কুল, কুলিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, দক্ষিন কুলিয়া এবতেদায়ি মাদ্রাসা এবং কুলিয়া এলাহী বক্স দাখিল মাদ্রসা, কুলিয়া জামে মসজিদসহ কয়েকটি প্রতিষ্টান রয়েছে। এখানে ভাটা হলে কালো ধোয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। একই সাথে নষ্ট হবে এই এলাকার হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল। এখানকার প্রতিটি জমিতে বছরে কমপক্ষে চারটি করে ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। এই ফসলি জমিতে ইটভাটা হলে তার ক্ষতিকর প্রভাবে সর্বশান্ত হবে এখানকার দীনমজুর, দরিদ্র কৃষক ও বর্গাচাষিরা। বসতবাড়ি ছেড়ে এলাকা ত্যাগ করতে হবে শতাধিক পরিবারের। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ হবে এলাকার প্রাণবৈচিত্র। বিপন্ন হবে মানুষের স্বাস্থ্য। ইট ভাটার বিরোধীতাকারি গ্রামবাসীদেরকে সন্ত্রাসীদের দিয়ে নানা ভাবে হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

এদিকে, ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর পক্ষে দেবহাটার দক্ষিন কুলিয়া গ্রামের মৃত হেবাজউদ্দিন গাজীর ছেলে মোঃ আজহারুল ইসলাম পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের ইট ভাটা মালিক মোশারফ হোসেন মুসাকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করা হলেও তিনি সেখানে হাজির না হয়ে আবারও ভাটার কাজ চালিয়ে যাওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে তাকে পূনরায় ভাটার যাবতীয় কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশসহ তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৫ এবং ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন, ২০১৩ আনুসারে কেন ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে না মর্মে লিখিতভাবে নোটিশ জারী করেছেন।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও সহকারী পরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তরকে এই নোটিশের অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে। এরপরও তিনি ভাটার কার্যক্রম বন্ধ না রেখে দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর আমাকে ভাটা নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলে আমি বন্ধ করে দেবো। আর তারা বন্ধ না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।