জাতীয়

পোল্ট্রি শিল্পে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

By Daily Satkhira

October 18, 2017

পোল্ট্রি শিল্প বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী অর্থনীতির জন্য সম্ভাব্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এক অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে এ শিল্প থেকে। প্রাণীজ আমিষের প্রায় এক তৃতীয়াংশ আসে এই পোল্ট্রি শিল্প থেকে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সবার জন্য পুষ্টির সরবরাহ নিশ্চিত করণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এ শিল্প।

বর্তমানে দেশের পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৫ কোটি টাকা। সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে অগ্রগতির পাশাপাশি দেশের বেকারত্ব সমস্যাও সমাধান হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ লাখ মানুষ তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্প দুই ভাগে বিরাজমান। একটি পারিবারিক অন্যটি বাণিজ্যিক। পারিবারিক খামারগুলোর বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও দিনে দিনে এ শিল্পে এগিয়ে যাচ্ছে। এমনকি গ্রামের স্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষিত তরুণদের অনেকেই ব্যবসা করছে। এদিকে বাংলাদেশে আশি এর দশক থেকেই ব্যবসায়িক ভিত্তিতে পোল্ট্রি খামারের উত্থান ঘটেছে। নতুন প্রযুক্তি ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছেন বড় বড় খামার। তারা বিপুল অংকের টাকা বিনিয়োগ করছেন। অনেক বেকার যুবক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ছোট ও মাঝারি গোছের পোল্ট্রি খামার। আর এভাবেই দেশে দ্রুততার সাথে সম্প্রসারণ ঘটছে পোল্ট্রি শিল্পের।

বর্তমানে বাংলাদেশে ডিমের দৈনিক উৎপাদন ২ কোটি ২০ লাখ আর মুরগীর মাংসের উৎপাদন দৈনিক প্রায় সাড়ে ১৮শ টন। দেশের পোল্ট্রি শিল্পের এত সফলতার পরও খামারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বিভিন্ন দিক থেকে। ইতোমধ্যে এ দেশের পোল্ট্রি শিল্পে বিদেশী পুঁজি আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে নিয়োজিত ৭টি বিদেশী কোম্পানীর ৫টি ভারতের আর চীন ও থাইল্যান্ডের ১ টি করে। দেশের প্রায় ৩০ ভাগ পুঁজি নিয়ন্ত্রণ করছে এসব বিদেশী কোম্পানী। ফলে এদের সাথে যেন এক অসম প্রতিযোগিতা লেগেই আছে দেশী খামারগুলোর। ঝরে পড়ছে ছোট খামারগুলো। অথচ সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছে।

পোল্ট্রি উৎপাদনে যে খরচ হয় তার ৬৮ শতাংশ খাদ্য খরচ, ১৮.৫ শতাংশ বাচ্চা কেনার খরচ, ৫ শতাংশ ওষুধের খরচ, ৪ শতাংশ শ্রমিকের মজুরী এবং বাকি অন্যান্য খরচ। সারাবিশ্বে পোল্ট্রির খাদ্যের অন্যতম উপকরণ ভুট্টার উৎপাদন কমায় দাম বেড়েছে। অন্যদিকে বাচ্চা কেনার খরচ অনেক বেশী হলেও সরকার নীতিমালা সংশোধনেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ব্রয়লারের এক দিনের বাচ্চার দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা আর লেয়ারের বাচ্চার দাম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। অথচ ব্রয়লারের একদিনের বাচ্চার উৎপাদন খরচ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা আর লেয়ারের বাচ্চার ৩৫ টাকার কাছাকাছি। বাজারে এইসব বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিনগুণ দামে। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে এ শিল্পের কর অব্যাহতি সুবিধা তুলে নিয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়। তাই মুনাফা কম হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে খামারীদের। বর্তমানে মুনাফা কম হওয়ায় সরকারের উচিত এ শিল্পের আয় করমুক্ত করা। এত খামারীরা উৎপাদন ও নতুন খামার তৈরিতে উৎসাহিত হবে।

অপরদিকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ও সচেতনতার অভাব লক্ষ করা যাচ্ছে গ্রামীণ পারিবারিক খামারগুলোতে। দেশের জৈব পোল্ট্রি উৎপাদনের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল রোগ নিয়ন্ত্রণ করা। বালাইয়ের মধ্যে ভাইরাসজনিত (রাণীক্ষেত, গামবোরো, ডাক প্লেগ, এভিয়ান ইনফ্লয়েঞ্জা), ব্যাকটেরিয়া জনিত (ফাউল কলেরা, ফাউল টাইফয়েড), পরজীবি জনিত (রক্ত আমাশয়, কৃমি) রোগ উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক বিষাক্ত পদার্থ, নিন্ম মানের খাদ্য, আবহাওয়া ইত্যাদির কারণেই এই সমস্যা গুলো প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। এজন্য একদিন বয়সী বাচ্চা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের পোল্ট্রিকে টিকা প্রদান করতে হবে। জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে নিয়মিত বাসস্থান, খাবার পাত্র ও পানির পাত্র, যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করতে হবে। এছাড়াও কৃমিনামক ঔষধ, খাদ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ ককসিডিওষ্ট্যাট নামক ঔষধ সরবরাহ করতে হবে। খামার ঘরে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং খামারের জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আর রোগ সংক্রামক এসব ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে দেশের পোল্ট্রি খামারীদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত।

পোল্ট্রি শিল্পে যে খাদ্য ব্যবহার করা হয় তাতে ক্ষেত্র বিশেষে ক্ষতিকর ক্রোমিয়াম থাকে। মৎস্য ও পোল্ট্রি খাদ্যে আমিষের উৎস্য হিসেবে ট্যানারির বর্জ্য ব্যবহার এর মূল কারণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের এক পরীক্ষায় প্রতি কেজি মুরগীর মাংসে ২৪৯ মাইক্রোগ্রাম থেকে ৪৫৬১ মাইক্রোগ্রাম ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ ক্ষতিকর ধাতু মাংস ও ডিমের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে ক্যানসার সহ বিভিন্ন রোগ তৈরি হতে পারে। তাই ট্যানারি বর্জ্যরে ব্যবহার বন্ধ করার কোন বিকল্প নেই।

মানুষের আয় বৃদ্ধি ও জীবন মানের উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে পোল্ট্রির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই চাহিদা মেটানোর জন্য পোল্ট্রি উৎপাদনে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা দরকার। আর এ জন্যই দরকার পোল্ট্রি শিল্পের সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকার এর পৃষ্ঠপোষকতার বিকল্প নেই। এ শিল্পের মালিক ও শ্রমিকদেরও উচিত দক্ষতার সাথে উৎপাদন পরিচালনা করা। তাতে উৎপাদন খরচ কমবে, বাজার সম্প্রসারিত হবে, বাড়বে মুনাফা।