জাতীয়

পুলিশের এএসআইয়ের নেতৃত্বে ছিনতাই! জনতার হাতে আটক

By Daily Satkhira

October 18, 2017

ন্যাশনাল ডেস্ক : পুলিশের এক এএসআইয়ের নেতৃত্বে ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। বিদেশগামী এক ব্যক্তির গাড়ি থামিয়ে ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয় লোকজন হাতেনাতে এক সহযোগীসহ তাকে ধরে থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দও করেছে। ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তি এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও তা নিয়ে গড়িমসি করছে থানা পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে জনতার হাতে আটক হওয়া পুলিশের এএসআই জসিম উদ্দিন ও তার সহযোগী মিঠুকে থানায় আটক রাখা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি মঙ্গলবার রাত ১১টায় শেরেবাংলা নগর থানার খামারবাড়ি এলাকায় ঘটে। পুলিশ ছিনতাইকারীদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল এবং ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তির ভাড়ায় নেওয়া প্রাইভেটকারটি জব্দ করে থানায় নিয়েছে। ছিনতাইয়ের শিকার ব্যবসায়ী হিমেল খান বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে তিনি চাচাতো ভাই সফিক খানকে নিয়ে ধানমন্ডির বাসা থেকে বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিলেন। ভাড়ায় নেওয়া প্রাইভেটকারটি (ঢাকা মেট্রো গ-১৩-৬৫৪৪) তাদের নিয়ে খামারবাড়ি এলাকা পার হওয়ার দুটি মোটরসাইকেলযোগে চার ব্যক্তি তাদের ইশারা দিয়ে প্রথমে থামাতে বলে। পরে প্রাইভেটকারের সামনে মোটরসাইকেলের ব্যারিকেড দিয়ে থামানো হয়। গাড়ি থামানোর সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেল আরোহীরা নিজেদের পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে চালকের কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে নেয়। এরপর হিমেল খান ও তার মামাতো ভাইয়ের কাছ থেকে জোর করে দুটি মোবাইল ফোন (আইফোন-৬ এস এবং স্যামসাং) সেট নিয়ে নেয়। এসময় তারা ছিনতাইকারী ছিনতাইকারী বলে চিৎকার করলে আশপাশ থেকে লোকজন দৌড়ে আসে।’ ধানমন্ডির বাসিন্দা হিমেল খান বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন ও পথচারীরা এগিয়ে এলে মোটরসাইকেল নিয়ে দুই ব্যক্তি পালিয়ে যায়। অপর দুই জন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাদের ধরে ফেলে। একটু পর পুলিশের একটি গাড়ি এসে তাদের নিয়ে যায়।’ ব্যবসায়ী হিমেল খান আরও বলেন, ‘প্রথমে পুলিশের পরিচয় দেওয়ার পর তারা ভেবেছিলেন, সত্যিকারের পুলিশ। কিন্তু পরবর্তীতে জোর করে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার সময় তারা বুঝতে পারেন, ছিনতাইয়ের শিকার হতে যাচ্ছেন। তখনই তারা চিৎকার করে ওঠেন। তবে লোকজন আসার আগেই মোবাইল দুটি নিয়ে দুই ছিনতাইকারী সটকে পড়ে।’ এদিকে ছিনতাইয়ের ঘটনার সময় সেখানে থাকা রাশিদুল হাসান সুজন নামে একজন জানান, তিনি লোকজনের জটলা দেখে ঘটনাস্থলে এগিয়ে যান। এসময় দেখেন- দুই ব্যক্তিকে পুলিশ ধরে গাড়িতে তুলছে। সেসময় এক ব্যক্তি নিজেকে পুলিশের এএসআই পরিচয় দেয়। এমনকি পকেট থেকে একটি আইডি কার্ডও দেখায়। স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে রাশিদুল হাছান সুজন বলেন, ‘সুজুকি ব্র্যান্ডের নম্বর প্লেটবিহীন একটি মোটরবাইকে করে দুই ব্যক্তি প্রাইভেটকার থামিয়ে ছিনতাই করছিল।’ ছিনতাইয়ের এই ঘটনা সম্পর্কে জানতে গিয়ে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ সদস্যদের অনেকেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই আসামি থানা হাজতে রয়েছে ঠিকই। কিন্তু মঙ্গলবার রাত শেষে বুধবার সারাদিনেও এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়নি। সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে শেরেবাংলা নগর থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এর আগে বুধবার সকালে বিষয়টি জানতে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে শেরেবাংলা নগর থানার ডিউটি অফিসার এসআই সাহেরা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। এটা স্যাররা তদন্ত করছেন। তদন্তের পর ঘটনা সম্পর্কে জানানো হবে।’ দুপুরে প্রতিবেদক শেরেবাংলা নগর থানায় গেলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিজি বিশ্বাস বলেন, ‘বিষয়টি ডিল করছে পরিদর্শক তদন্ত। তার কাছে গিয়ে খোঁজ নিন।’ পরে পরিদর্শক তদন্ত সোহরাব আল হোসাইনের কাছে গেলে তিনি পরে যেতে বলেন। মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টির সত্যতা তদন্ত করছি। তদন্তের পর বলতে পারবো।’ একপর্যায়ে তিনি ৩০ মিনিট পর তার কক্ষে যেতে বলেন। ত্রিশ মিনিট পর শেরেবাংলা নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহরাব আল হোসাইন বলেন, ‘ঘটনাটি দুই পক্ষের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। কিন্তু যেহেতু স্থানীয় লোকজন তাদের ধরেছে। আর বাদীও অভিযোগ দিয়েছেন। তাই মামলা হবে। মামলার পর তদন্তে প্রকৃত সত্য বেড়িয়ে আসবে।’ সোহরাব আল হোসাইনের কাছে বাদি ও অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানান। তবে বাদীর নাম-ঠিকানা ও যোগাযোগের নম্বর দিলেও তিনি দুই আসামির বিস্তারিত ঠিকানা দিতে রাজি হননি। দুপুর পর্যন্ত এঘটনায় জব্দ তালিকাও প্রস্তুত হয়নি। ছিনতাইকারীদের একজন পুলিশের এএসআই কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সে (জসিম উদ্দিন) বলেছে পুলিশের এএসআই। সাসপেন্ড হয়েছে। তবে অসংলগ্ন কথা বলছে। কখনও খুলনা, কখনও রাজারবাগ, আবার কখনও পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে নিযুক্ত ছিল বলে দাবি করছে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আটক হওয়া পুলিশের এএসআই জসিম উদ্দিন খুলনার রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে চাকরিতে নিযুক্ত ছিলেন। আটক হওয়ার পর খোঁজ নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, তিনি খুলনার কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, তারা ধারণা করছেন, এএসআই জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি চক্র ছিনতাই কাজ করে আসছিল। আটক হওয়া মিঠু হলো জসিমের মামাতো ভাই। তারা নম্বর প্লেটহীন মোটরবাইক নিয়ে ছিনতাই করে বেড়াতো। বুধবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ওয়াহিদ আলম বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার পর আটক দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পালিয়ে যাওয়া দু’জনের বিষয়ে জানার চেষ্টা করা হবে। এ ক্ষেত্রে পুলিশের সদস্য বলে তাকে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।’