মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতার বিরুদ্ধে একের পর এক বক্তব্য দিলেও ইউরোপীয় দেশগুলো পরমাণু সমঝোতার প্রতি সমর্থন দেয়া অব্যাহত রেখেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মঙ্গলবার ইরানকে অত্যন্ত বিপজ্জনক দেশ হিসেবে অভিহিত করে দাবি করেছেন, ইরানের ব্যাপারে তার প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেশটি যেন কোনোভাবেই পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হতে না পারে। একই সঙ্গে তিনি সন্ত্রাসীদের প্রতি সমর্থন দেয়ার জন্য তেহরানকে অভিযুক্ত করেন।
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি এক বিবৃতিতে ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতার প্রতি সমর্থন জানিয়ে এটিকে টিকিয়ে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, এই সমঝোতায় ইরানি জনগণের পাশাপাশি বিশ্ববাসীর বিজয় অর্জিত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান মোগেরিনি ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে স্বাক্ষরিত ইরানের পরমাণু সমঝোতাকে উইন-উইন বা সব পক্ষের বিজয় হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, আইএইএ’র দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী ইরান এখন পর্যন্ত পরমাণু বিষয়ে সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছে।
ইরান ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও মঙ্গলবার বিকালে দ্বিতীয় টেলিফোন সংলাপে পরমাণু সমঝোতার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরনও এর আগে বলেছিলেন, প্যারিস তেহরানের ব্যাপারে ওয়াশিংটনের নীতির সঙ্গে একমত নয়। ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনও সেদেশের পার্লামেন্টে বলেছেন, কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়াই পরমাণু সমঝোতা টিকে থাকবে। তিনি, এ সমঝোতা থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, আমরা চাই ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, রাশিয়াসহ ইউরোপের অন্য দেশও পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করুক।
প্রথম থেকেই পরমাণু সমঝোতা একটি বহুপক্ষীয় চুক্তি এবং এর প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদেরও সমর্থন রয়েছে। কিন্তু আমেরিকা প্যারিস আন্তর্জাতিক জলবায়ু চুক্তি এবং ইউনেস্কোর সদস্য পদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর এখন পরমাণু সমঝোতা থেকেও বেরিয়ে যাওয়ার পায়তারা করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে পরমাণু কর্মসূচির অজুহাতে ইরানের অর্থনৈতিক উন্নতির চাকাকে থামিয়ে দেয়াই আমেরিকার প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু ওয়াশিংটনের এ ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও ইউরোপ ও এশিয়ার বড় বড় কোম্পানিগুলো ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা বিস্তারে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ফ্রান্সের টোটাল কোম্পানির পরিচালক প্যাট্রিক পুইয়ানে বলেছেন, আমেরিকা যদি পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যায় তারপরও তারা ইরানের বিভিন্ন প্রজেক্টে পুঁজি বিনিয়োগ করবে।
যাইহোক, বর্তমানে শুধু যে পরমাণু সমঝোতা নিয়ে আমেরিকা ও ইউরোপের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে তাই নয় একই সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্য, পরিবেশ রক্ষা ও নিরস্ত্রীকরণের মতো বিষয়গুলোতেও তীব্র মতপার্থক্য শুরু হয়েছে। বিশেষ করে আমেরিকা পরমাণু সমঝোতার বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছে তাতে এটা প্রমাণিত হয়েছ, ওই দেশটির ওপর আস্থা রাখা যায় না।