অনলাইন ডেস্ক : পেশিশক্তি ও অর্থবিত্তের অধিকারীরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন না। ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনয়ন পেতে হলে প্রার্থীকে অবশ্যই জন-সম্পৃক্ত হতে হবে। একইসঙ্গে মনোনয়ন-প্রত্যাশীকে হতে হবে শিক্ষিত-মার্জিত। থাকতে হবে ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাও। এসব গুণের পাশাপাশি দীর্ঘদিনের ত্যাগী-অভিজ্ঞ নেতারাই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য হবেন। দলের বিভিন্ন ফোরামে নেতাদের উদ্দেশে এমন কথা জানিয়েছেন খোদ শেখ হাসিনাই। তিনি মনে করেন, আগামী নির্বাচন ভীষণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এ কারণে উল্লিখিত গুণাবলি না থাকলে দলের পক্ষে বিজয়ী হয়ে আসা কঠিন হবে। শেখ হাসিনার একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ক্ষমতাসীন একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, প্রচুর অর্থবিত্ত আছে, কিন্তু এলাকায় পরিচিতি নেই, জনসম্পৃক্ততা শূন্যের কোটায়, কর্মী-সমর্থকদের খোঁজ-খবর রাখেন না, এমন নেতাদের নৌকার মনোনয়ন দেবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ সভায়ও শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি কাউকে জিতিয়ে আনতে পারব না। এবার যার যার যোগ্যতায় জিতে আসতে হবে।’ ওই সভায় বর্তমান এমপি ও মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের উদ্দেশে দলীয় তিনি আরও বলেছেন, ‘প্রত্যেককে স্ব-স্ব নির্বাচনি এলাকার পুরো ভোটার তালিকা হাতে নিয়ে প্রত্যেক ভোটারের কাছে যেতে হবে। তাদের কাছে ভোট চাইতে হবে। ভোটারদের দরজায় যেতে চিন্তা করা যাবে না, কে কোন দলের।’
কার্যনির্বাহী সংসদের ওই সভায় দলীয় সভাপতি বলেছেন, ‘শুধু উন্নয়নের কথা বলে ভোট আদায় করা যাবে না। ভোট আদায় করতে ভোটারদের সংস্পর্শে যেতে হবে।’ পাশাপাশি প্রত্যেক মনোনয়ন-প্রত্যাশী নেতার কাছে এ বার্তা পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘একাধিক গুণসমৃদ্ধ প্রার্থীরা এবার মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন। এরমধ্যে যে নেতা বেশি জনসম্পৃক্ত ও কর্মীবান্ধব, তাকেই বেছে নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘এবার দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে দু’টি বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। একটি হলো, মনোনয়ন-প্রত্যাশী নেতা কতটা জনসম্পৃক্ত। দ্বিতীয়টি হলো, মনোনয়ন-প্রত্যাশী নেতা কতটা স্থানীয় নেতাকর্মী-সমর্থকবান্ধব।’ তিনি বলেন, ‘প্রকৃত অর্থে জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্যতম রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায়, এসব বিষয়কে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ প্রায় নিশ্চিত বলেই ধরে নিয়েছেন শেখ হাসিনা। তাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের ক্ষেত্রে উল্লিখিত গুণাবলি এক রকম বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে। সূত্র জানায়, এসব গুণ না থাকলে, যত প্রভাবশালী নেতাই হোন, তাকে মনোনয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হবে না। কারণ হিসেবে সূত্র বলছে, এবার প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল এড়াতে চায় আওয়ামী লীগ। দলটির নীতি-নির্ধারকরা জানান, বিগত নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব যোগ্যতা তেমন আমলে নেওয়া হয়নি। ফলে গত নয় বছরে প্রায় প্রত্যেকটি আসনেই দ্বন্দ্ব-কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। অনেক নির্বাচনি আসনে নেতাকর্মীরা এমপির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার এ বিতর্কিত এমপিদের বাদ দেওয়া হবে। কোনোভাবেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিক্ততা সৃষ্টিকারী বর্তমান এমপিরা মনোনয়ন পাবেন না। এবার মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা গভীরভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করবেন। এরই অংশ হিসাবে তিনি এমপিদের হুঁশিয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের জনসম্পৃক্ত হতে হবে, কর্মীবান্ধব হতে হবে। এলাকায় বেশি বেশি যেতে হবে।’
সর্বশেষ কার্যনির্বাহী সংসদের সভায়ও শেখ হাসিনা বর্তমান এমপি ও মনোনয়ন-প্রত্যাশী নেতাদের এমন বার্তা দিয়েছেন। ওই সভায় তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি এখন রেস্টে আছি। ফলে এগুলো নিয়ে কাজ করার সময় পাচ্ছি প্রচুর। আমার কাছে সব এলাকার খবর আছে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও বিবেচনাবোধ কাজ করবে। এবার আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে চায়। তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়ে আসার সম্ভাবনা যাদের বেশি, তারাই মনোনয়ন-দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন।’ তিনি বলেন, ‘ম্যানুপুলেশন করে তৃণমূল থেকে প্রার্থী তালিকায় নাম আনা হল কিনা, তারও খোঁজ নেবেন দলীয় সভাপতি। কারণ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, তৃণমূল নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে কেন্দ্রে পাঠানো প্রার্থী তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’