আন্তর্জাতিক

রাক্কায় আইএস বিতাড়নকারী নারীদের বীরত্বগাঁথা

By Daily Satkhira

October 24, 2017

রাক্কা। সিরিয়ার একটি প্রাচীন শহর। ইসলামিক স্টেট (আইএস) দীর্ঘদিন স্থানটিকে তাদের প্রধান ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়েছে তারা। আর সিরিয়ার এই রাক্কাকে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের দখলমুক্ত করতে যারা লড়ে গেছেন, তাদের বড় একটা অংশজুড়ে রয়েছেন নারী যোদ্ধা।

প্রায় চার বছরের প্রাণঘাতী যুদ্ধের পর জয়ীদের বীরত্বগাঁথার অংশ হয়েছেন এই কুর্দিশ নারী যোদ্ধারা। কিন্তু এই ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে আসার অনুপ্রেরণা তারা কোথায় পেলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জানালেন, কেবল কুর্দিশ হওয়ার জন্যেই নয়, রাক্কার নারীদের মুক্ত করতেও এই লড়াই চালিয়েছেন তারা।

আইএস রাক্কা শাসন করেছে বর্বরদের মতো। তাদের নৃশংসতা গোটা বিশ্বকে হতভম্ব করে দিয়েছিল। বিশেষ করে নারীরা দুঃস্বপ্নের চেয়েও ভয়াবহ সময় পার করেছেন। সামান্য কারণে জনসমক্ষে চাবুকের আঘাত ছিল অতি সাধারণ ঘটনা। আইএস রাক্কার মেয়েদের বিক্রি করে দিত। যৌনদাসী হিসেবে বন্দি রাখত।

কুর্দিশ-ইয়াজিদি সংখ্যালঘু নারীদের ইরাকের উত্তরাংশ থেকে রাক্কায় আনা হয়েছিল। গত মঙ্গলবার আসে সেই মুক্তির বারতা। আইএস পরাজিত হয়। কুর্দিশ ওমেন্স প্রটেকশন ইউনিটস (ওয়াইপিজে) এখনো এ লড়াই চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। তবে যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন ৩০ জনের মতো নারী যোদ্ধা। এখন তাদের জন্যে কাঁদছেন যোদ্ধারা।

এক বিবৃতিতে ওয়াইপিজে জানায়, লড়াইয়ের পথে থেকে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে ওয়াইপিজে। আমাদের দেশের সন্ত্রাসবাদ রুখতে হবে। গোটা বিশ্বে নারীদের ওপর অত্যাচারের প্রতিশোধ নেব আমরা। এই বার্তা আমাদের শহীদদের কাছে পৌঁছতেই থাকবে।

যোদ্ধাদের একজন শান্দা আফরিন। টানা চার বছর যুদ্ধ করে চলেছেন তিনি। বললেন, আমাদের নেতা আবদুল্লাহ ওকালান নারীদের স্বাধীনতার দিকে মনোযোগী হয়েছেন। তাই নারীদের মুক্ত করতেই আমরা লড়াই করে যাচ্ছি। তাদের মনটাকেও মুক্ত করতে হবে। আমাদের এই সংগ্রাম কেবল আইএসের বিরুদ্ধেই নয়, এই লড়াই নারীদের প্রতি কুটিল মানসিকতার বিরুদ্ধে। অশুভ কিছু কেবল আইএস পুরুষদের দিক থেকেই আসে না, নারীদের মধ্য থেকেও বেরিয়ে আসে। তাই নারীদের উচিত নিজেদের শিক্ষিত করে তোলা। আদর্শগত দিক থেকে তাদের এগিয়ে আসতে হবে।

এভরিল দাইফ্রামও ব্যতিক্রম নন। বয়স সবে ২০। গত তিন বছর ধরে যুদ্ধ করছেন। এই টিনএজার ইতিমধ্যে কয়েক সহযোদ্ধাকে হারিয়েছেন। ‘আমরা সাধারণ মানুষদের মুক্ত করতে এবং নেতা আবদুল্লাহ ওকালানকে মুক্ত করতে যুদ্ধ করছি। তিনি তুরস্কে বন্দি রয়েছেন,’ বলেন সিএনএন-কে।

ওয়ান অঞ্চল থেকে এসে কাঁধে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন ২৪ বছর বয়সী উলাত রোমিন। আড়াই বছর ধরে আইএস-বিরোধী লড়াইয়ে শামিল। রাক্কা, তাবকা এবং আল-হলে যুদ্ধ করেছেন। কুর্দিশদের মুক্তির জন্যে তিনি প্রাণ বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত। ‘আমি অবিচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি, অধিকারের জন্যে করছি’, জানালেন বলিষ্ঠ কণ্ঠে। ‘বিশেষ করে নারীদের মুক্তির জন্যে আমার এ লড়াই’।

ছয় বছর ধরে এ যুদ্ধে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন সোজদার দেরিক। স্পষ্ট কথা তার, আমাদের মাতৃভূমি আর নারীদের স্বাধীন করতে আমার এ যুদ্ধ।

এরা সবাই নারী, সবাই যোদ্ধা। তাদের দেখানো আদর্শগত পথে রয়েছেন আরো বহু নারী। তারা সবাই কাঁধে ভারী অস্ত্র নিয়ে পাহারা দিয়ে চলেছেন জন্মভূমিকে, তাদের মা-বোনদের।