জাতীয়

রিজার্ভ চুরিতে ‘দোষ মিলল’ বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কর্মকর্তার

By Daily Satkhira

October 24, 2017

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরি যাওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৫ জন কর্মকর্তার জড়িত থাকার বিষয়টি সন্দেহ করেছিল তদন্ত সংস্থা। দেড় বছরের দীর্ঘ তদন্তে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ১২০ জন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্তের প্রায় শেষ পর্যায়ে ব্যাংকের ১০ জনের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

এদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে দুই দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি। তদন্ত সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে আতিউর রহমানের আচরণগত দুর্বলতা পেয়েছে তারা। তদন্তসংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একটি সূত্র দাবি করেছে, ‘দায়িত্বে অবহেলা’ এবং ‘ঊর্ধ্বতনদের অবগত না করার’ কারণে চার্জশিটে সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের নাম থাকতে পারে। সব মিলিয়ে চার্জশিটে বাংলাদেশ ব্যাংকের কমপক্ষে ১০ জনের নাম থাকছে।

সূত্র জানায়, রিজার্ভ চুরির সময় ১৫ জন কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্ত করা হয়। তাদের প্রত্যেকের একান্ত সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে সিআইডি। তাদের দায়িত্ব কি ছিল এবং সেদিন (চুরির দিনগুলোতে) তারা কী করেছে সেগুলো বিশ্লেষণ করা হয়। তাদের তথ্যের পাশাপাশি সিআইডি কারিগরি তথ্য সংগ্রহ করে। সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে এ পর্যন্ত ১০ কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কনভিন্সড (নিশ্চিত) তদন্ত কর্মকর্তারা। চার্জশিটে সবার নাম এবং ভূমিকা তুলে ধরবে সিআইডি।

চার্জশিটে যাদের নাম থাকছে তাদের নাম পাওয়া না গেলেও জানা গেছে, ব্যাংকের সাবেক একজন উপ-পরিচালক (ডিডি), একজন সহকারী পরিচালক (এডি), একজন ডিজিএম, ব্যাক অফিস অব দ্য ডিলিং রুমের এক নারী কর্মকর্তাসহ ছয়জন, পেমেন্ট অফিসের এক কর্মকর্তা, একাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং শাখার সাবেক এক কর্মকর্তা, বাজেট শাখার সহকারী পরিচালক পদের এক কর্মকর্তা এবং গভর্নরের সচিবালয়ের তিন কর্মকর্তার নাম যুক্ত করা হচ্ছে।

তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান বলেন, ‘তদন্ত নিজ গতিতে চলছে। শিগগিরই চার্জশিট দেয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তদন্তের এ পর্যায়ে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।’

এর আগে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮৮০ কোটি টাকা) চুরির ঘটনা ঘটে। অর্থের একটি বড় অংশ ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) মাধ্যমে ফিলিপাইনের জুয়ার টেবিলে চলে যায়।

চুরির মাসখানেক পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির হিসাব ও বাজেট শাখার যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪-সহ তথ্য ও প্রযুক্তি আইন ২০০৬-এর ৫৪ ধারায় ও বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ৩৭৯ ধারায় একটি মামলা করা হয়। এতে ‘অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের’ আসামি করা হয়। সংবেদনশীল এই মামলাটির তদন্তের দায়ভার দেয়া হয় সিআইডিকে।

সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টতা সুত্র জানায়, দীর্ঘ দেড় বছরের তদন্তে সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এ পর্যন্ত ফিলিপাইনের ৩০ জনকে চিহ্নিত করতে পেরেছে। তারা সবাই ফিলিপাইনের বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা ও ভুয়া হিসাবধারী। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে রিজার্ভ চুরির মামলায় সাক্ষী করা হবে। বাকিদের আসামি করে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

এছাড়া বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে হংকং, ম্যাকাও ২৩ জন জুয়াড়িকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের সবাইকে এ মামলায় আসামি করা হবে। চার্জশিটেও থাকছে তাদের নাম।

অভিযুক্তদের মধ্যে সবাই সরাসরি জড়িত নাকি কেউ কেউ দায়িত্ব অবহেলার কারণে অভিযুক্ত? এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা অভিযুক্তদের ‘অপরাধ শনাক্ত ও অপরাধের মাত্রা’ নির্ণয় করে চার্জশিট দেব। বাকিটা আদালত বিবেচনা করবেন।

এদিকে রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় এরই মধ্যে ফিলিপাইন, চীন, জাপান ও শ্রীলঙ্কার সন্দেহভাজন কয়েকজনের নাম-পরিচয় পেয়েছে সিআইডি। অর্থ চুরির কোনো না কোনো পর্যায়ে তাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল। তাদের পূর্ণাঙ্গ নাম ও ছবি সংবলিত তথ্য নিজ নিজ দেশকে সরবরাহ করে তদন্তে সহায়তার অনুরোধ করা হয়েছে।

অভিযুক্তরা হচ্ছেন জাপানের নাগরিক সাসাকিম তাকাশি ও জয়দেবা, আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতো, ফিলিপাইনের ক্যাসিনো ইস্টার্ন হাওয়াই লেইসার কোম্পানির মালিক চীনের নাগরিক কিম ওং, চার হ্যাকার মাইকেল ফ্রান্সিসকো ত্রুক্রজ, জেসি ক্রিস্টোফার লাগোরাস, আলফ্রেড ভারগারা ও এনরিকো তায়েদ্রো ভাসকুয়েজ।

এছাড়াও সন্দেহভাজনের তালিকায় রয়েছে রেমিট্যান্স আহরণকারী কোম্পানি ফিলরিমের প্রেসিডেন্ট স্লুইড বাতিস্তা, ফিলিপাইনের ব্যবসায়ী উইলিয়াম গো সো, শ্রীলঙ্কার এনজিও শালিকা ফাউন্ডেশনের পরিচালক গামাজ শালিকা পেরেরা, সানজেবা টিসা বান্দরা, শিরানি ধাম্মিকা ফার্নান্দো, ডন প্রসাদ রোহিতা, নিশান্থা নালাকা ও ওয়ালাকুরুয়ারাচ্চি।