ন্যাশনাল ডেস্ক : রাস্তা থেকে গাড়ি আটক করে থানায় এনে কখনও তা বিক্রি, আবার কখনও এর যন্ত্রাংশ বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তিনি হাইওয়ে থেকে একটি বেবিট্যাক্সি আটক করে থানায় আনার পর তা বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন গাড়িটির মালিক ইদ্রিস আলী। সার্জেন্ট মাহবুব এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) রাতে সার্জেন্ট মাহবুব দাবি করেন, ‘বেবিট্যাক্সিটি ইদ্রিস আলীকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে’। তবে ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমাকে অন্য একটি বেবিট্যাক্সি দেওয়া হয়েছে, আমার বেবিট্যাক্সি দেওয়া হয়নি।’
শনিবার (২১ অক্টোবর) বেবিট্যাক্সির মালিক ইদ্রিস আলী জানান, কাচপুর হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট মাহবুব আলম কোরবানি ঈদের ২০ দিন আগে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকার মহাসড়ক থেকে তার নম্বরপ্লেটহীন বেবিট্যাক্সি আটক করে হাইওয়ে থানায় নিয়ে যান। তিনি বেবিট্যাক্সিটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য সার্জেন্ট মাহবুবকে অনুরোধ করলে তাকে বকা দিয়ে থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়।
পরে ইদ্রিস আলী এক নিকটাত্মীয়ের সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) লিয়াকত হোসেন খোকার কাছে গিয়ে তার বেবিট্যাক্সিটি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। এমপি খোকা তাৎক্ষণিক কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যকে পুলিশের কাছ থেকে ইদ্রিস আলীর বেবিট্যাক্সিটি ছাড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেন। ওই ইউপি সদস্য কাঁচপুর হাইওয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাইয়ুম আলী সরদারের কাছে বেবিট্যাক্সিটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন। গত ১০ অক্টোবর ওসি কাইযুম আলী সার্জেন্ট মাহবুবকে এক সপ্তাহের একটি মামলা দিয়ে গাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন। ওসির পরামর্শে মাহবুব আলম ওই গাড়ির মালিককে চার হাজার ৭শ’ টাকা জরিমানা করে একটি মামলা করেন।
ইদ্রিস আলী আরও জানান, তিনি হাইওয়ে পুলিশের এএসপি সার্কেল অফিসে জরিমানার টাকা জমা দিয়ে জরিমানার রশিদ সার্জেন্ট মাহবুবকে দেখালে তিনি গাড়ি ছাড়তে গড়িমসি করেন। এক পর্যায়ে তিনি মালিককে (ইদ্রিস আলীকে) ওই গাড়ি না দিয়ে মহাসড়ক থেকে আটক অন্য একটি গাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমি জরিমানা দিয়েছি ১০ অক্টোবর। কিন্তু ১৩ অক্টোবর থানায় গিয়ে আমার গাড়িটি আর দেখিনি। ভেবেছিলাম, গাড়িটি পুলিশ অন্য কোথাও রেখেছে। এখন দেখি গাড়িটি উধাও হয়ে গেছে।’
এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সার্জেন্ট মাহবুবের এমন আচরণ নতুন নয়। এর আগেও তিনি অন্য চালকদের গাড়ি আটক করে গাড়ির যন্ত্রাংশসহ কারও কারও গাড়িই বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এলাকার অপর ভুক্তভোগী চালকরা। আটক করা ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজির ব্যাটারি ও গ্যাস সিলিন্ডারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ খুলে স্থানীয় গ্যারেজে তিনি বিক্রি করে দেন এমন অভিযোগ করেছেন তারা। কাঁচপুর এলাকার আরেক সিএনজিচালক আবুল হোসেন দাবি করেন, ‘কাঁচপুর হাইওয়ে থানায় দীর্ঘ সময় গাড়ি পড়ে থাকলে গাড়ির ব্যাটারি, গ্যাস সিলিন্ডার বা প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ খোয়া যায়। আমার সিএনজির ব্যাটারিও সার্জেন্ট মাহবুব খুলে বিক্রি করে দিয়েছেন। আমি গাড়ি ছাড়িয়ে এনে ব্যাটারি পাইনি। বাধ্য হয়ে নতুন ব্যাটারি কিনে লাগিয়েছি।’
মোগরাপাড়া চৌরাস্তার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক আল আমিন বলেন, ‘সাজেন্ট মাহবুব আমার গাড়ির ব্যাটারি নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। ব্যাটারি চাইলে আমাকে তিনি মারধর করেন।’
এদিকে, সার্জেন্ট মাহবুব গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করলেও এক কনস্টেবলের সহযোগিতায় সেগুলো যে একটি গ্যারেজে তিনিই বিক্রি করেছেন একথা স্বীকার করেছেন গ্যারেজটির এক মিস্ত্রি। কাঁচপুর এলাকার গ্যারেজ মিস্ত্রি বিজয় মিয়া বলেন, ‘কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট মাহবুব ও এক কনস্টেবল পুরনো গাড়ির যন্ত্রাংশ আমার কাছে বিক্রি করেছেন। সার্জেন্ট স্যার একটি পুরনো গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করার কথা বলেছিলেন। সেজন্য তাকে চার হাজার টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি গ্যাস সিলিন্ডারও দেননি, টাকাও ফেরত দেননি।’
তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে শনিবার (২১ অক্টোবর) সার্জেন্ট মাহবুব আলম বলেন, ‘বেবিট্যাক্সিটি ঈদের আগে আটক করেছি সত্য। গাড়ির মালিককে এক সপ্তাহের জরিমানার মামলাও করেছি। তবে মালিক জরিমানা দিয়ে আসার পর দেখি গাড়িটি থানা থেকে চুরি হয়ে গেছে।’ গাড়িটি চুরি হয়ে যাওয়ার পর মামলা দিয়েছেন কেন, এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘গাড়ি চুরি হয়ে গেছে জানলে তো আর মামলা দিতাম না।’ গাড়িটি কী করে থানা থেকে চুরি হয়ে গেল জানতে চাইলে ওই দিন তিনি আর কোনও কথা বলেননি। তবে বুধবার (২৫ অক্টোবর) তিনি বলেন, ‘একই রংয়ের দু’টি নম্বর প্লেটবিহীন বেবিট্যাক্সি আটক করা হয়। একটি বেবিট্যাক্সির মালিক ইদ্রিস আলী এবং অন্যটির মালিক বাচ্চু মিয়া। কিন্তু বাচ্চু মিয়ার ড্রাইভার জসিম উদ্দিন ভুল করে ইদ্রিস আলীর বেবিট্যাক্সিটি নিয়ে যায়। পরে বাচ্চু মিয়া ও তার ড্রাইভার জসিম উদ্দিন গাড়িটি নিয়ে আসেন। এতে ইদ্রিস আলীকে তার গাড়ি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি মিটামাট হয়ে গেছে।’ এ ব্যাপারে ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমাকে অন্য একজনের বেবিট্যাক্সি দেওয়া হয়েছে, আমার বেবিট্যাক্সি দেওয়া হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে আমি অন্য মালিকের বেবিট্যাক্সিটি নিতে চাইনি। কিন্তু যখন বুঝলাম, সার্জেন্ট মাহবুব আলম আমার বেবিট্যাক্সি বিক্রি করে দিয়েছেন এবং তা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তখন বাধ্য হয়ে ওই বেবিট্যাক্সি নিয়েছি।’ শনিবার কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি কাইয়ুম আলী বলেন, ‘কাচঁপুর হাইওয়ে পুলিশের আটক করা গাড়ি চুরি হয়েছে, এমন কোনও খবর আমার জানা নেই। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেবো। সার্জেন্টের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখবো। যদি সে দোষী প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’