রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত নিধন চালানোর কারণে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি শুরু করেছে জাস্টিস ফর বেটার ওয়ার্ল্ড। ক্ষতিগ্রস্ত ছয় হাজার রোহিঙ্গা নারী-শিশুর কাছ থেকে গণহত্যাসহ মানবতার বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাদের অপরাধের তথ্য-প্রামাণাদি সংগ্রহ করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু, তুলাতুলিসহ বিভিন্ন এলাকায় মুসলিম জনগোষ্ঠির বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছে মিয়ানমারের সেনারা। সেই আগুন আর নির্বিচারে হত্যার শিকার হয়ে অনেকে হারিয়েছে সবকিছু। এমনই একজন কিশোরী হারিয়েছে পরিবারের ২২ সদস্যের মধ্যে বাবা-মাসহ ২০ জনকে।
আর বাবা-মাসহ ৭ ভাইবোনের সবাইকে হারিয়েছে এক কিশোর। অনেক কিশোরী বধূদের স্বামীরা আর ফিরে আসেনি। স্বামী আর ছেলেকে হারিয়েছেন এমন বৃদ্ধার সংখ্যাও কম নয়। এমন অসংখ্য হত্যা ও ধর্ষণের তথ্য প্রমাণ পেয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিবার সংস্থা জাস্টিস ফর বেটার ওয়ার্ল্ড-এর পক্ষ থেকে টেকনাফ উখিয়া ও নাইক্ষ্যাংছড়ির বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে এ পর্যন্ত ছয় হাজার ক্ষতিগ্রস্ত নারী-শিশু ও পুরুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে মানবতা বিরোধী অপরাধের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। মিয়ানমার থেকেও সংগ্রহ করা আরো তথ্য-প্রমাণ। এই প্রমাণ নিয়ে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা দায়ের করা হবে।
এর আগে বসনিয়া, চিলি, উগান্ডাসহ বিশ্বের বিভিন্নপ্রান্তের গনহত্যাসহ অন্যান্য অপরাধের বিরুদ্ধে মামলার অভিজ্ঞতা নিয়েই রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলা করার কথা জানান বিভিন্ন দেশে আইনী লড়াইয়ে যুক্ত থাকা বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ আইনজীবী ব্যারিস্টার ড. সাঈদ মহিউদ্দিন।
দেশে ফিরে যাওয়ার আলোচনা চললেও তাদের ওপর যে নির্মম নির্যাতন হয়েছে তা ভুলে যাবেন না রোহিঙ্গারা।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে।আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।