শিক্ষা

দীর্ঘ ৪৮ বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি সদরের বলাডাঙ্গা-ছয়ঘরিয়া দাখিল মাদ্রাসা

By Daily Satkhira

October 28, 2017

জি.এম আবুল হোসাইন : সীমান্তবর্তী উপজেলার মধ্যে সাতক্ষীরা সদর অন্যতম। এলাকাবাসির স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ও সমাজে শিক্ষার আলো ছড়ানোর লক্ষ্যে বলাডাঙ্গা-ছয়ঘরিয়া দাখিল মাদ্রাসাটি সদর উপজেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৯৭০ সালের ১লা জানুয়ারিতে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি দীর্ঘ ৪৭টি বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। এ অঞ্চলে শিক্ষার আলো জ্বালাতে আজো বিনা বেতনে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মচারীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। বর্তমানে নানাবিধ সমস্যার মধ্য দিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৯৭০ সালে ছয়ঘরিয়া গ্রামের দুই ভাই মরহুম আনছার আলী ও মরহুম নিছার আলী তাদের ১একর ৬ শতক (এর মধ্যে অখন্ড ৭৬ শতাংশ) জমি নিয়ে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে প্রতিষ্ঠানটির অস্থায়ীভাবে পাঠদান শুরু করা হয়। ১৯৭০ সালে স্থায়ীভাবে ৬টি কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিন শেট ও মাটির ভবনে পাঠদান শুরু করা হয়। ১৯৮৯ সালে প্রথম মাদ্রাসার নামে রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষা দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের ১লা জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটি একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৯৬ সালে ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট, খুলনা জোনের উদ্যোগে ৩ কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবন নির্মিত হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় বিভিন্ন দিবস পালনসহ পাঠদানের পাশাপাশি মাদ্রাসার মাঠে খেলার ব্যবস্থা রয়েছে। ইতোমধ্যে মাদ্রাসা থেকে ইবতেদায়ী সমাপনী, জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষায় সাফল্যতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে অনেক ছাত্রছাত্রী দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ণরত ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত আছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ৩জন কর্মচারী ছাত্রছাত্রীদের লেখা-পড়ায় গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। দীর্ঘদিন যাবৎ এমপিওভুক্ত না হওয়ায় এসব শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীদের মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আব্বাস আলী বলেন, এলাকার ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এমপিওভূক্ত হওয়ার আগেই আমাকে অবসরে যেতে হবে কি না সে ব্যাপারে আমি সন্ধিহান। মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য মো. শরিফুজ্জামান ময়না বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিনা বেতনে পাঠদান করলেও তারা খুবই আন্তরিক। যে কারণে পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা ভাল ফলাফল করছে। তবে দীর্ঘদিন যাবত এমপিওভুক্ত না হওয়ার ফলে শিক্ষক-শিক্ষিকা কষ্টের মধ্য দিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তিনি আরো বলেন, বিষটি নিয়ে আমরা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এমপিওভুক্ত করার আবেদন করেছি। তাই এমপিওভুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি’র সহযোগিতা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। ২০১২ সালে বিনা বেতনে অবসরে যাওয়া শিক্ষক মো. ইসহাক আলী আক্ষেপ করে বলেন, নিজের জন্য না হলেও আগামী প্রজন্মের মঙ্গলের জন্য আমরা আমাদের এপ্রতিষ্ঠানটি আগলে রাখব। বর্তমান সরকারের সদ্বিচ্ছায় অচিরেই এটি এমপিওভূক্ত হবে বলে আমার বিশ্বাস।

উপজেলার প্রাচীনতম এপ্রতিষ্ঠানে বর্তমান ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩শত ৭জন। মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে পড়ালেখার মান ভাল এবং রেজাল্টও আশানুরুপ। ২০১৭ সালের দাখিল পরীক্ষায় পাশের হার ছিল ৯০ শতাংশ। ২০০৩ সালে মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট হিসেবে যোগদানের পর থেকে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক পরিবেশের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন মাওলানা মো. আব্দুল কুদ্দুস। তিনি শিক্ষকমন্ডলী, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সকল সদস্য ও অভিভাবকদের সহযোগিতা নিয়ে  প্রতিষ্ঠানের জন্য নিরলস কাজ করে চলেছেন। শিশু বান্ধব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় রয়েছে ফলজ বৃক্ষসহ মূল্যবান বৃক্ষরাজি। দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ মাদ্রাসাটিকে অসাধারণ ও মনোরম করে তুলেছে। তিনি আরো বলেন, প্রাক – প্রাথমিক থেকে দাখিল ১০ম শ্রেণি নিয়ে ক্লাশ পরিচালনা করা শিক্ষক স্বল্পতার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন নিয়মিত ক্লাশ পরিচালনা এবং ছুটির পর ৫ম ও ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে অতিরিক্ত ক্লাশ পরিচালনা করা হয়ে থাকে। ফলে শিক্ষকদের জন্য প্রতিষ্ঠান চলাকালে বিশ্রামের সুযোগ থাকেনা। তার পরে রয়েছে কক্ষ সংকট। অফিস সহ ১০টি কক্ষ রয়েছে। ছেলে মেয়েদের জন্য কক্ষ সংকট একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। শ্রেণি কক্ষ সম্প্রসারণের জন্য এলাকাবাসী জোর দাবি জানিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানকে সমহিমায় এগিয়ে নিতে এবং লেখাপড়ার মান আরও উন্নত করতে এমপিওভূক্ত, ক্লাশ রুম সম্প্রসারণ, প্রয়োজনীয় শিক্ষক ব্যবস্থা, ও সংস্কার কাজ করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য সহ জেলা শিক্ষা বিভাগের পাশাপাশি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় অভিভাবক ও সচেতন এলাকাবাসি।