ফিচার

খালেদা জিয়ার সফর রাজনৈতিক, হামলার ঘটনা সাজানো: আ. লীগ

By Daily Satkhira

October 29, 2017

ঢাকা থেকে সড়কপথে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফরকে মানবিক কারণ হিসেবে দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির শীর্ষ নেতাদের মতে, এই সফর সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও লোক দেখানো। তারা বলছেন, বিএনপির মাঠে নামার পূর্ব-পরিকল্পনারই অংশ এই সফর। এরমধ্য দিয়ে দলটি রাজনৈতিক মাঠে ‘স্পেস’ করে নিতে চায়। পাশাপাশি আন্দোলনের ইস্যুও খুঁজছে দলটি। এদিকে যাওয়ার পথে ফেনীতে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনাকে সাজানো ঘটনা বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, এ ঘটনা দলীয় লোকজনের সাজানো নাটক। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফর ও তার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলটির একাধিক নেতা এসব কথা বলেন।

সড়কপথে খালেদা জিয়ার কক্সবাজার যাওয়ার সমালোচনা করেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা। তারা বলেন, বিএনপি নেত্রী যদি মানবিক উদ্দেশ্য নিয়ে রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজার যেতেন, তাহলে তবে অবশ্যই সড়কপথ বাদ দিয়ে আকাশপথে যেতেন। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিয়ে আবার আকাশ পথেই ঢাকায় ফিরে আসতেন। কোনোভাবেই সড়কপথ ব্যবহার করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতেন না।

কক্সবাজার যাওয়ার পথে ফেনীতে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলাকে পাতানো ঘটানো বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া উদ্দেশ্য-প্রণোদিত ঘটনা ঘটানোর জন্যই এতদিন পরে ত্রাণ দিতে কক্সবাজার যাচ্ছেন। আলোচনায় আসার জন্যই পাতানো হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বিএনপি।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার হারানো জনপ্রিয়তা উদ্ধারের জন্য এটা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নিজেদের দলের লোকজন দিয়ে সাজানো নাটকের মতো ঘটনা কিনা, তাও খতিয়ে দেখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি প্রশাসনকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করব।’

ত্রাণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়িবহরের শোডাউনে সবাইকে অবাক করেছে মন্তব্য করে আব্দুর রহমান বলেন, ‘তবে, এ হামলা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’ সরাসরি কক্সবাজার বিমানের ফ্লাইটে না গিয়ে ত্রাণনাটক তৈরির কারণেই এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘খালেদা জিয়া তিন মাস লন্ডনে থেকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা করেছেন। তারাই ধারাবাহিকতায় তিনি দেশে ফিরে রাজনৈতিক কোনও ইস্যু না পেয়ে রোহিঙ্গা ইস্যু ধরে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে চান। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন।’

বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘খালেদা  বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে সড়কপথে কক্সবাজার রওনা হয়েছেন, পথে মিড়িয়া কাভারেজের জন্য হামলার নাটক সাজিয়েছেন।’

এদিকে খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফর প্রসঙ্গে একই মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান। তার মতে, ‘খালেদা জিয়ার রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজার যাওয়া মানবিক কারণে নয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত ও লোক দেখানো। তিনি যদি মানবিক কারণে যেতেন, তাহলে এত আওয়াজ দিয়ে সড়কপথে যেতেন না, আকাশপথে গিয়েই ত্রাণ দিয়ে আবার আকাশ পথেই ঢাকা ফিরে আসতেন।’

তবে, এই সফরকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ। তার মতে, ‘এটি ভালো লক্ষণ। বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার এই সফরকে আমরা ভালো লক্ষণ হিসেবেই ধরে নিতে চাই। কোনোভাবেই যেন আমাদের ধারণা পরিবর্তন না হয়।’

প্রায় একই ধরনের মনোভাব পোষণ করেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে যেতেই পারেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। বিষয়টিকে যদি জাতীয় সমস্যা মনে করে তিনি যান, তাহলে খুব ভালো কথা। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোনও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করলে তা মোকাবিলা করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’

জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘লোক দেখানোর উদ্দেশ্যেই দুই মাস পরে রোহিঙ্গাদের দেখতে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া।’ তিনি বলেন, ‘সড়কপথে যাতায়াতের মধ্য দিয়ে এখানেও তিনি জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলার নিয়ত করেছেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে খালেদা জিয়া এই সফর শুরু করেছেন।’

রোহিঙ্গাদের উস্কানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতেই খালেদা জিয়া কক্সবাজার যাচ্ছেন বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সরকারের প্রশাসন ও সেনাবাহিনী যখন রোহিঙ্গাদের একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসেছে, তখন রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দেওয়ার নামে খালেদা জিয়া অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কক্সবাজার যাচ্ছেন।’