কলারোয়া

কলারোয়ায় ক্ষমতাশীনদের তান্ডব, কপোতাক্ষ নদের উপর বাঁধ দিয়ে মাছ ছাষ

By daily satkhira

October 15, 2016

কলারোয়া প্রতিনিধি : কলারোয়ার দেয়াড়া ইউনিয়নে কপোতাক্ষ নদ উপর অবৈধ ভাবে বাঁধ দিয়ে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে ১৫ বছর যাবত মাছ চাষ করছে একটি প্রভাবশালী মহল। আর এই অবৈধ বাঁধ দেয়ার ফলে এক দিকে নদের নাব্যতা হারিয়ে মৃত খালে পরিনত হয়েছে অন্যদিকে নদের বেড়ী বাঁধের মাঝখানে এক মাত্র পানি নিস্কাশনের গেটটি বন্ধ করে দেয়ায় বর্ষার পানি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধাতার সৃষ্টি হয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামের প্রায় ২’শতাধিক পরিবারসহ ৩’শ বিঘা জমি স্থায়ী জলাবদ্ধাতার সৃষ্টি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে জমি হারা এসব অসহায় মানুষেরা। সরজমিনে শনিবার কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামে কপোতাক্ষ নদ এলাকা ঘুরে ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানাগেছে, দেয়াড়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কপোতাক্ষ নদের মধ্য দিয়ে এবং পার্শ্ববর্তী পানি নিস্কাশনের জন্য খালের উপর দেয়াড়া গ্রামের মৃত, কওছার আলী মোড়লের ছেলে স্থানীয় প্রভাবশালী মোসলেম আলী (৫৫), অহেদ আলী খান এর ছেলে মিজানুর রহমান (৪৮), যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার শ্রীফলা গ্রামের পবন খাঁ এর ছেলে সাবেক শিবির ক্যাডার বর্তমানে জামায়াত নেতা আনোয়ার হোসেন (৪৬), দেয়াড়া ইউনিয়নের মালেক খাঁর ছেলে মফিজুল ইসলাম (৫০), মৃত, নূর আলী খাঁ’র ছেলে মতিয়ার রহমান (৫৫) সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উক্ত জমিতে বাধ দিয়ে ২০০০ সাল থেকে মাছের চাষ করে আসছে। এবং দখল করা সরকারি জমিতে তারা মাছ চাষ করে কয়েক কোটি টাকা লাভবান হয়েছে। জলাবদ্ধ জমির মালিক আমীর আলী শেখ, লৎফর রহমান শেখ, রেজাউল হোসেন, সোহরাব হোসেন, আমজাদ খাঁ, সহিদুল মোড়লসহ কয়েকজন জনান, দেয়াড়া কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের ভুমি দস্যু মিজান সিন্ডিকেট তৈরি করে তার শালক সাবেক শিবির ক্যাডার ও বর্তমানে জামায়াত নেতা আনোয়ার হোসেনকে সাথে নিয়ে ২০০০ সাল থেকে কপোতাক্ষ নদের মধ্য থেকে পার্শ্ববর্তী পানি গ্রামের পানি নিস্কাশনের সরকারি খাল জোর পূর্বক দখল করে। পরে তারা কপোতাক্ষ নদের বেড়ী বাধের পানি যাওয়ার গেটটি বন্ধ করে মাছের ঘের বানিয়ে ব্যবসা শুরু করে। এ সময় তারা আরো বলেন, বেড়ী বাধের গেট বন্ধ করে দেয়ার কারনে তাদের বসত বাড়ীসহ প্রায় ৪’শ বিঘা ফসলী জমিতে বৃষ্টির পানি ও উজানের পানি কপোতাক্ষ নদে যেতে না পেরে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। যার কারনে তারা দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত তাদের নিজ জমিতে কোন ফসল করতে পারছে না। এছাড়া অনেকের বসত ঘরও পানিতে তলিয়ে রয়েছে। দেয়াড়া কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের সোহরাব হোসেন জানান, স্থানীয় ক্ষমতাশীন দলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা জামায়াত-শিবিরকে সাথে নিয়ে এ অবৈধ কাজ করলেও ভুক্তভোগীরা ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায়না। তিনি আরো বলেন, এ কপোতাক্ষ নদ ও খাল দখল করে মাছ চাষ ও কৃত্রিম জলাবদ্ধতার সৃষ্টির বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানানো হলেও দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী সময় অতিবাহিত হলেও এই ভুমি দস্যু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার উদ্দোগ গ্রহন করেনি। যার কারনে তারা নিরুপায় হয়ে কলারোয়া উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করলেও প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তারা বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ করার কারনে এই সিন্ডিকেট সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ভাবে তাদেরকে হুমকি প্রদান করছে। যে কারনে ভুক্তভোগী ২’শতাধিক পরিবারের সদস্য ও জলাবদ্ধ ৩’শ বিঘা জমির মালিকরা সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। যেন তারা তাদের নিজ জমিতে ফসল করতে পারে এবং স্থায়ী জলাবদ্ধ থেকে মুক্তি পায়। এ বিষয়ে দেয়াড়া কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের কপোতাক্ষ নদ ও সরকারি খাল দখলকারী আনোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান, মোসলেম আলী, মফিজুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, কপোতাক্ষ নদের নাব্যতা না থাকায় কিছু অংশ তারা বাধ দিয়ে মাছের ঘের তৈরি করে ব্যবসা করে আসছে। তারা আরো বলেন, এ বিষয়ে প্রশাসন কিছু না বললেও স্থানীয় একটি মহল তাদের ক্ষতি করার জন্য আপনাদের মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। বেড়ী বাধের গেট বন্ধ করার কারনে পার্শ্ববর্তী গ্রামে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এই বেড়ী বাধের গেট বন্ধ করার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, জলাবদ্ধ জমি নীচু এলাকা হওয়ায় সেখানে এমনিতেই সামান্য বৃষ্টি হলে পানি জমে থাকে তাছাড়া উক্ত জমিতে তারা কোন ফসল লাগায় না। সে জন্য ঘেরের মাছ যাতে বের হয়ে না যেতে পারে সে জন্য পানি নিস্কাশনের গেটটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ অবৈধ সরকারি জমি দখলকারীরা এ বিষয়ে পত্রিকায় সংবাদ না লেখার জন্য অনুরোধ করেন। এ বিষয়ে দেয়াড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবর রহমান মফে জানান, তিনি অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে যেয়ে অবৈধ সরকারি খাল ও কপোতাক্ষ নদ দখল করে মাছের ঘের বন্ধ করা এবং পানি নিস্কাশনের গেটটি পুনরায় খুলে দেয়ার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দিয়ে এসেছেন। কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় জানান, এ ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি বলেন, সরকারের জমি কেউ দখল করে রাখতে পারবে না। এ ছাড়া বেড়ী বাধের গেট বন্ধ করার বিষয়টি তিনি তদন্ত করে দেখবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।