আজকের সেরা

‘আ ‘লীগের ১৫১ জনের মনোনয়ন চূড়ান্ত’ শীর্ষক সংবাদটি ভুয়া’

By Daily Satkhira

October 31, 2017

অনলাইন ডেস্ক : গত শুক্রবার ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকে দলীয়ভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ‘১৫১ জনের মনোনয়ন চূড়ান্ত’ শীর্ষক প্রকাশিত একটি ভুয়া সংবাদে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মী ও সমর্থক মারাত্মক বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছেন। দায়িত্বশীল ও অভিজ্ঞ নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, সামনে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী একটি চক্র এই রকমের একটি মিথ্যা সংবাদ সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগে সূক্ষ্ম বিভাজন সৃষ্টির অপচেষ্টা করে যাচ্ছে।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্ধারিত সময় এখনও ১৪ মাস বাকি, আর এত আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো একটি প্রাচীন আর ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল হুট করেই সারা দেশের অর্ধেক এলাকাতেই দলীয় প্রার্থী সিলেকশন করে ফেলবে এটা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। আওয়ামী লীগের ১৫১ জনের মনোনয়ন চূড়ান্ত সংবাদটি মিথ্যা ও বানোয়াট এবং এটি ৭১-এর পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্রের অংশ বলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য উদ্ধৃত করে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে। এতে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে যা বলা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া, দলের মধ্যে বিভাজন তৈরি করার জন্য জ্ঞানপাপী লোকেরা এটা করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। কি আছে ঐ ভুয়া খবরে? ঢাকা থেকে প্রকাশিত ঐ দৈনিকটির মনগড়া ও বিভ্রান্তকর খবরে বলা হয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি জরিপের মাধ্যমে ২শ আসনের প্রার্থী বাছাইও চূড়ান্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য (যিনি তার নাম প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছেন) তিনি আবার নির্ভয়ে বলেছেন, দলের সভাপতি কেন্দ্রীয় কমিটির গত বৈঠকের আগের বৈঠকে বলেছেন ২শ আসনে প্রার্থী জরিপ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন তার মধ্য থেকে এই ১৫১ জনের মনোনয়ন প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। অপরদিকে, দলের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর নাম ব্যবহার করে বলা হয়েছে, বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে, বেশকিছু আসনে বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম ধাপে ১শটি, পরের ধাপে ৬০টি এবং শরিকদের সাথে আলোচনা করে বাকি আসনগুলোর প্রার্থী ঠিক করা হবে। এখানে কিন্তু কাজী জাফর উল্লাহর নাম ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ উনি এ ব্যাপারে অন্য সংবাদ সংস্থার কাছে পুরো বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। ১৫১ জনের মনোনয়নসংক্রান্ত দৈনিকটির সংবাদের শিরোনামে মনোনয়ন চূড়ান্ত বলা হলেও ভিতরে নামের তালিকার আগে সম্ভাব্য প্রার্থী কথাটি লেখা হয়েছে। কাজী জাফর উল্লাহ বলেছেন, প্রথমে ১শ পরে ৬০ জনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে বলে জানালেও ঐ পত্রিকায় লেখা হলো ১৫১ জনের মনোনয়ন চূড়ান্ত। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য (যিনি তার নাম প্রকাশ করতে চান না অথবা ভয় পাচ্ছেন) তিনি নাকি ১৫১ জনের মনোনয়ন চূড়ান্তকরণের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। অথচ একটি জাতীয় পত্রিকা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করার সংবাদ ছেপে দিল দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের রেফারেন্স ছাড়াই। একই দিন অর্থাৎ ২৭-১০-২০১৭ তারিখ সন্ধ্যায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ঐ সংবাদকে মিথ্যা অপপ্রচার হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তার এই বক্তব্য বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় বলে আসছেন, বারবার জরিপ করে গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠিতে মনোনয়ন দেয়া হবে, সেখানে নির্বাচনের ১৪ মাস আগে কেন তড়িঘড়ি করে এত জনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হলো তার যৌক্তিক কারণ কী, এর সত্যতাতো দলীয়ভাবে কেউ নিশ্চিত করেননি।

জাতীয়পর্যায়ের একটি নিউজ পোর্টাল একই দিনের প্রকাশনায় আওয়ামী লীগের ১৫১ জনের মনোনয়ন চূড়ান্ত সংবাদটি মিথ্যা ও বানোয়াট এবং এটি ৭১-এর পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্রের অংশ বলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য উদ্ধৃত করে একটি রাজনৈতিক আর্টিকেল প্রকাশ করেছে। অপরদিকে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ মনোনয়নসংক্রান্ত এ বিষয়টি পুরাপুরি অস্বীকার করে বলেছেন, এ বিষয়ে ঐ সংবাদ প্রকাশ করা পত্রিকার কোনো সাংবাদিকের সাথে তার কোনো কথায় হয়নি।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারাদেশে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রার্থীদের বিষয়ে গোয়েন্দারা কাজ করছেন। প্রতিটি এলাকার বিশ্বস্ত সংবাদকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকেও সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত ফরমের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ডাটা সংগ্রহ করা হচ্ছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ডাটা সংগ্রহের কাজ চলবে। এরপর ডাটাগুলো যাচাই বাছাই ও তদন্তপূর্বক যারা নির্বাচিত হতে পারবেন, এমন ব্যক্তিদের নামের তালিকা দলের নেত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর ওই তালিকাই আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই বা আওয়ামী লীগের নির্বাচনি বোর্ড নিয়ম মোতাবেক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে চূড়ান্ত করবেন।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ড. হাসান মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য আমাদের একটি বোর্ড আছে। সেই বোর্ড প্রার্থী চূড়ান্ত করে থাকেন। এরজন্য কিছু নিয়ম-কানন রয়েছে। তার মধ্যে নির্বাচনের আগে নির্ধারিত ফরম কিনতে হয়। ওই ফরম পূরণ করে প্রার্থীদের আবেদন করতে হয়। এরপর প্রার্থীদের বোর্ড সাক্ষাৎকার নেয়। তার পর তাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়ে থাকে। আর এত আগেই নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার কথা নয়। জাতীয় টাঙ্গাইল-৭ আসনের সংসদ সদস্য মো. একাববর হোসেন জানান, ‘আ.লীগের ১৫১ প্রার্থী চূড়ান্ত’ শিরোনামে একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ভুয়া, মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। ওই প্রত্রিকার সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার নিজের মনগড়া প্রতিবেদন করেছেন। যার সঙ্গে বাস্তবতার ন্যূনতম সত্যের লেশমাত্র নেই। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কাকে দেবে আর কাকে দেওয়া হবে না, এটা একমাত্র নেত্রীই সঠিক বলতে পারবেন।