আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের হাস্যকর অভিযোগ

By Daily Satkhira

November 01, 2017

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে ঢাকার বিরুদ্ধে এবার হাস্যকর ও গুরুতর এক অভিযোগ করেছে মিয়ানমার। তারা বলেছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে বাংলাদেশ বিলম্ব করছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য হিসেবে মাল্টি-মিলিয়ন ডলার বা শত শত কোটি ডলার সহায়তা না পাওয়া পর্যন্ত ঢাকা এ প্রক্রিয়া থামিয়ে রাখবে বলে আশঙ্কা করছে মিয়ানমার। দেশটির মূল নেত্রী অং সান সুচির মুখপাত্র জাওয়া হতাই এ অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন,  এর আগে সম্পাদিত দু’দেশের মধ্যে চুক্তির অধীনে মিয়ানমার ‘শরণার্থীদের’ ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া যেকোনো সময় শুরু করতে প্রস্তুত। তবে এখনও বাংলাদেশ সেসব টার্ম বা শর্ত মেনে নিতে সম্মত হয় নি।

এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এখানে উল্লেখ্য, নিজ দেশে নৃশংস নির্যাতন করে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক দেশ থেকে বিতাড়িত করে তারাই এখন হাস্যকর এ অভিযোগ করছে। বাংলাদেশ আন্তরিকতার সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চায়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সমর্থন করছে বাংলাদেশকে। কিন্তু উল্টো বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উত্থাপন করছে মিয়ানমার। ২৫ শে আগস্ট আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) চালানো হামলার জবাবে সেনাবাহিনী ও অন্য নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বাহিনী ক্লিয়ারেন্স অপারেশন্স চালাচ্ছে। এ সময়ে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংস নির্যাতন করে তারা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে অকথ্য নির্যাতন চালায় তার অনেকটাই উঠে আসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। তাতে দেখা যায়, যুবতীদেরকে একেবারে বিবস্ত্র করে তাদের হাত, পা কেটে দেয়া হচ্ছে কুপিয়ে কুপিয়ে। এরপর গলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে কেটে শিরñেদ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, অনেক যুবতীকে ধর্ষণের পর তাদের স্তন কেটে নিয়েছে সেনাবাহিনী। পিতার সামনে মেয়েকে, সন্তানের সামনে মাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে পুরুষদের। রক্তের এক হোলি উৎসব যেন শুরু হয় রাখাইনে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত করা হয় রোহিঙ্গাদের। এসব বিষয়ে বিদেশী বিভিন্ন দেশ, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো সাক্ষ্য দিলেও মিয়ানমারের নীতিনির্ধারকরা, ‘বিবেকবান’ রাজনীতিকরা নিন্দা পর্যন্ত করেন নি। নির্যাতিত রোহিঙ্গারা যখন শুধু জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন তখন তাদেরকে ঠাঁই দিয়েছে বাংলাদেশ। এখন সেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই উল্টো অভিযোগ দাঁড় করাচ্ছে তারা। এটা হাস্যকর ছাড়া আর কি!

নির্যাতনে বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন কমপক্ষে ৬ লাখ রোহিঙ্গা। এ ঘটনাকে জাতিসংঘ জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। বিশ্ব নিন্দায় জর্জরিত হচ্ছেন অং সান সুচি। তাকে দেয়া সম্মানজনক পদক, সম্মাননা কেড়ে নিচ্ছে বা নিয়েছে বৃটেনের একাধিক প্রতিষ্ঠান। কূটনৈতিক চাপ তীব্র হয়েছে মিয়ানমারের ওপর। এ অবস্থায় সম্প্রতি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মিয়ানমার সফর করেন। তিনি সাক্ষাত করেন অং সান সুচি ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে। বলা হয়, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি হয়েছে। দু’দেশ এ জন্য জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মাধ্যমে এ লক্ষ্যে কাজ করবে। তবে মিয়ানমারের দ্য ইরাবতী এক রিপোর্টে বলেছে, মিয়ানমারের সঙ্গে ঢাকার আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। পরে আরেক রিপোর্টে বলা হয়, এর আগে দু’দেশের মধ্যে সম্পাদিত রোহিঙ্গা ফেরত নেয়া সংক্রান্ত চুক্তির কিছু অংশের সংশোধন চায় বাংলাদেশ। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ওই চুক্তির মূল চারটি মূলনীতিতে হাত দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ নিয়ে আলোচনা চলছে দু’দেশের মধ্যে। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির অফিস সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জাও হতাই মঙ্গলবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, আমরা তো (শরণার্থীদের ফেরত নেয়ার) প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রস্তুত। কিন্তা অন্যপক্ষ (বাংলাদেশ) তা এখনও মেনে নিচ্ছে না। এতে (শরণার্থী) ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। এটা এক্ষেত্রে এক নম্বর ফ্যাক্ট। মিয়ানমার সফরে যাওয়া বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সঙ্গে আলোচার পর মিয়ানমারের রাজধানী ন্যাপিডতে গত সপ্তাহে সীমান্ত বিষয়ক একটি সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু পুরনো চুক্তিটি পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয় নি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে অর্থ তোলার জন্য বিলম্ব করছে বলে মন্তব্য করেন জাওয়া হতাই। মিয়ানমারের মতে, রোহিঙ্গাদের জন্য বিশাল আকারের শরণার্থী শিবির তৈরি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করতে চায় বাংলাদেশ। বুধবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত পত্রিকা গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জাওয়া হতাইকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। এতে তিনি বলেছেন, এখন পর্যন্ত তারা (বাংলাদেশ) এ খাতে পেয়েছে ৪০ কোটি ডলার। তাদের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রাপ্তিতে আমরা তো শঙ্কিত। শঙ্কিত এ কারণে যে, এ জন্যই শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম বিলম্বিত করা হচ্ছে। তারা (বাংলাদেশ) আন্তর্জাতিক মহল থেকে ভর্তুকি পেয়েছে। আমরা শঙ্কিত, (শরণার্থীদের) ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে তারা (বাংলাদেশ) আবার নতুন করে কিছু বিবেচনা করতে বলতে পারে।

ওদিকে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সরকার একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহের আলোচনায় বাংলাদেশের মন্ত্রী ১০ দফা তুলে ধরেছেন। তাতে সম্মত হয় নি মিয়ানমার। এর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত এডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট-এর সুপারিশের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন। শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরার ক্ষেত্রে একটি স্থিতিশীলতার জন্য এর বাস্তবায়ন দাবি করা হয়েছে। শুক্রবার বাংলাদেশের সাংবাদিকদের কাছে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, দু’দেশ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে সক্ষম হচ্ছে না। আগামী ৩০ শে নভেম্বর মিয়ানমার সফরে যাবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সে সময় এ বিষয়ে ঐক্যমত হতে পারে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমার এরই মধ্যে সাফ জানিয়ে দিয়েছে মিয়ানমারে বসবাস করতেন যেসব রোহিঙ্গা এমনটা প্রমাণ করতে পারবেন তাদেরকে গ্রহণ করবে মিয়ানমার সরকার। এ বিষয়ে জাওয়া হতাই বলেছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘শরণার্থীদের’ (রোহিঙ্গা)  একটি তালিকার জন্য অপেক্ষা করছে মিয়ানমা