ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে চুল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ত্বকের যত্নে সময় খরচ করলেও চুলের সৌন্দর্য নিয়ে সেভাবে কেউই ভাবতে চান না। ফলে নতুন ড্রেসে সুন্দর দেখতে লাগলেও কোথাও যেন একটা খামতি থেকে যায়।
তাই এই সময় কেশসজ্জার দিকেও নজর ফেরাতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল কিভাবে বাড়াবেন চুলের সৌন্দর্য? চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই প্রশ্নের উত্তর- অনেকেই হয়তো জানেন যে পেঁয়াজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জীবাণুনাশক উপাদান থাকে। আর ঠিক এই কারণেই পেঁয়াজ আমাদের চুলের যাবতীয় সমস্যা সমাধান দারুনভাবে সাহায়তা করতে পারে। যেমন ধরুন…
১. স্কাল্পের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়: পেঁয়াজের রস চুলের গ্রন্থিতে পুষ্টি জোগাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো এই প্রকৃতিক উপাদানটি নিয়মিত মাথায় লাগালে স্কাল্পের স্বাস্থ্য ভাল হয়। ফলে নানাবিধ রোগের প্রকোপ কমে।
২. চুলের গোড়া শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে: পেঁয়াজে উপস্থিত সালফার চুলের আগা ফেটে যাওয়া এবং চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে চুল পরার হারও কমায়।
৩. সংক্রমণ ঠেকায়: পেঁয়াজের ভিতরে যে জীবাণুনাশক উপাদান থাকে, তা স্কাল্পের যে কোনও ধরনের সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে।
আর একবার সংক্রমণের আশঙ্কা কমে গেলে চুলের স্বাস্থ্য নিয়েও আর কোনও চিন্তা থাকে না। ৪. চুল সাদা হয় না: কম বয়সেই চুল রং বদলাচ্ছে নাকি? তাহলে আজ থেকেই পেঁয়াজের রস ব্যবহার শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ পেঁয়াজে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অকালপক্বতা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫.চুলের উজ্জলতা বৃদ্ধি পায়: একথা একাধিকবার প্রমাণিত হয়ে গেছে যে পেঁয়াজের রস নিয়মিত ব্যবহার করলে কম সময়েই চুলের জেল্লা বৃদ্ধি পায়।
৬.ক্যান্সার প্রতিরোধক: একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে পেঁয়াজের রস মাথা এবং গলার ক্যান্সার রোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে এই সবজিটিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৭. খুশকির বিরুদ্ধে লড়ে: পেঁয়াজ জীবাণুনাশক হওয়ায় এটি খুশকি রোধে সাহায়তা করে। তাই যারা হাজার হাজার টাকা শ্যাম্পুর পিছনে খরচ করে ড্যানড্রফের হাত থেকে রক্ষা পেতে তাইছেন, তাদের জন্য এই ঘরোয়া চিকিৎসাটি কিন্তু দারুন কাজে আসতে পারে।
৮. রক্ত সরবরাহে উন্নতি ঘটায়: বেশ কিছু কেস স্ট্যাডি করে দেখা গেছে নিয়মিত স্কাল্পে পেয়াজের রস দিয়ে মাসাজ করলে চুলের গোড়ায় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই চুলের বৃদ্ধি আরও দ্রুত হারে হতে থাকে।
কিভাবে বাড়িতেই বানাবেন পেঁয়াজের রস? প্রথমে পেঁয়াজের খোসা ছাড়িয়ে নিন। তারপর সেটিকে ৪ টুকরো করে কেটে নিন। এবার পেঁয়াজের টুকরোগুলো মিক্সারে বেঁটে নিন। বাটা হয়ে গেলে পেঁয়াজের রসটা ছেঁকে নিন। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে পেঁয়াজের রসটি স্কাল্পে লাগানোর সময় গোটা পেঁয়াজের টুকরো যেন চুলে আটকে না যায়।
পেঁয়াজের রস ব্যবহারের পদ্ধতি: এক্ষেত্রে কতগুলি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন-
১.স্কাল্পে ভালো করে পেঁয়াজের রস লাগাতে ভুলবেন না।
২.গোলাকার ছন্দে স্কাল্পে রসটা লাগাতে হবে।
৩. কম করে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করারা পর তবে গোসল করবেন। প্রসঙ্গত, টানা ১৫-৩০ দিন পেঁয়াজের রস মাথায় লাগালে দেখবেন কেমন বদলে যায়া চুলের ধরণ।
পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি তিনটি হেয়ার প্যাক:
১. পেঁয়াজ এবং মধু দিয়ে তৈরি হেয়ার প্যাক: এক কাপের এক তৃতীয়াংশ পেঁয়াজের রস নিন। তারপর এক টেবিল চামচ মধু মেশান। এবার মিশ্রণটি চুলের গোঁড়ায় ভাল করে মেখে নিন। ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
২.জলপাই তেল এবং পেঁয়াজের রস: অলিভ অয়েলের সঙ্গে ৩ টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস মেশান। এবার মিশ্রনটি হাতে নিয়ে গোলাকার পদ্ধতিতে চুলের গোঁড়ায় এবং স্কাল্পে লাগিয়ে নিন। দু’ঘণ্টা রেখে কম ক্ষারযুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। প্রসঙ্গত, চুলের শক্তি বৃদ্ধিতে এবং খুশকি কমাতে এই প্যাকটির জুড়ি মেলা ভার।
৩.পেঁয়াজ এবং কারিপাতার মিশ্রণ: কারি পাতা চুলকে নানারকম ভাবে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি চুলের শক্তি বৃদ্ধি করে, অকালপক্বতা কমায় এবং স্বাস্থ্য বজায় রাখে। তাই তো পেঁয়াজ এবং কারিপাতা একসঙ্গে স্কাল্পে লাগালে দারুন উপকার মেলে। এক্ষেত্রে কারিপাতা তাজা অবস্থায় বেঁটে নিন। এরপর দুই টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস কারি পাতা বাঁটার মধ্যে দিন। মিশ্রণটি চুলে এবং স্কাল্পে লাগাল। এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে কম ক্ষারযুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
পেঁয়াজের রস ব্যবহার করার আগে এগুলি মনে রাখুন: ১. পেঁয়াজ বাঁটার পর অবশ্যই ছেঁকে নেবেন। এতে চুলের গোড়ায় পেঁয়াজ আটকে থাকার সম্ভাবনা থাকবে না। ২. সব সময় কম ক্ষারযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। এতে চুলের ক্ষতি কম হবে। ৩. পেঁয়াজের রসের সঙ্গে রসুন এবং আপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। ৪. চুলের থেকে পেঁয়াজের দুর্গন্ধ দূর করতে নিজের পছন্দ অনুযায়ী এসেনশিয়াল অয়েল কয়েক ফোঁটা ব্যবহার করতে পারেন। ৫. পেঁয়াজের রস ব্যবহার করার আগে দেখে নিন এর থেকে অ্যালার্জি হওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা।