রাখাইনে রোহিঙ্গাদের চাষাবাদ করে আসা ক্ষেতের ধান কাটা শুরু করেছে মিয়ানমার সরকার। বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা শ্রমিকদের পাশাপাশি দেশটির সেনাবাহিনীও ধান কাটছে ক্ষেত থেকে।
টেকনাফ ও উখিয়ায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এই তথ্য জানিয়েছেন। এমনকি মিয়ানমারও ঘোষণা দিয়ে রোহিঙ্গাদের ধান কাটার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
গত শনিবার (২৮ অক্টোবর) থেকে রাখাইনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের আবাদি জমি থেকে ধান কাটা শুরু করেছে মিয়ানমার সরকার। এজন্য সেনাবাহিনী দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাখাইনে শ্রমিক নিয়ে এসেছে।
গত আগস্টের শেষের দিকে শুরু হওয়া সহিংসতায় রাখাইন রাজ্য থেকে প্রায় ছয় লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ওই রাজ্যের ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সহিংসতা শুরুর আগে রোহিঙ্গারা আবাদি জমিতে ধান চাষ করেছিল। সেই ধান এখন পেকেছে। আর তা কেটে নিচ্ছে মিয়ানমার সরকার।
শনিবার রাখাইনের মংডু এলাকা থেকে ধানকাটা শুরু হয়। মংডুর মরিকং এলাকার রোহিঙ্গা চেয়ারম্যান জাফর আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জাফর আলম বর্তমানে উখিয়ার থ্যাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তার পরিবার নিয়ে রয়েছেন। তিনি খবর পেয়েছেন মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও মগরা মিলে পাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি জানান, রাখাইনের মংডুতে ৭১ হাজার একর জমির ধান কাটতে শুরু করেছে মিয়ানমান।
একইভাবে তমব্রু, বুচিদং, রাছিদংসহ অন্যান্য এলাকার ধানও কাটার ইঙ্গিত দিয়েছে মিয়ানমার। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের এক প্রতিবেদনে মংডু কৃষি বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা থেইন ওয়েই’র উদ্বৃতি দিয়ে ধান কাটার বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে সরকার এই ধান কী করবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ধান কাটার খবর পেয়ে টেকনাফ ও উখিয়ার ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
চেয়ারম্যান জাফর আলম জানান, রোহিঙ্গাদের আয়ের উৎস চাষাবাদ। সবাই ক্ষেত খামারে কাজ করে। গবাদি পশু পালন করে। সেনাবাহিনী ঘরবাড়ি, সহায় সম্পত্তি,মানুষ,গবাদি পশু পুড়িয়ে দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের দেশ ছাড়া করেছে। এখন আবার ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এসব তাদের পূর্ব পরিকল্পিত।
রোহিঙ্গা নিধনের অভিযোগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ তোয়াক্কা করছে না দেশটি। এখনও রাখাইন রাজ্য থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে। টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন পাহাড়ে আশ্রয় হচ্ছে এসব নিঃস্ব রোহিঙ্গাদের।