নিজস্ব প্রতিবেদক : নামে তাল পুকুর কিন্তু ঘটি ডোবে না। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য স্থানীয় সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োজিত রয়েছেন মাত্র ৬ জন ডাক্তার। পর্যাপ্ত ওষুধ বরাদ্দ থাকলেও তা ঠিকমত বন্টন হয়না রোগীদের মাঝে। খাদ্য তালিকাতেও রয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। অফিস টাইমেও হাসপাতাল কোয়ার্টারে বসে প্রাইভেট রোগী দেখেন একাধিক ডাক্তার। ফলে উপজেলা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন আগত শত শত রোগী চিকিৎসা সেবা না নিয়েই ফিরে যান বাড়িতে। পক্ষান্তরে দীর্ঘ দিন একই স্থানে কর্মরত কর্মচারীরা বস্ স্টাইলে থাকেন পুরনো স্টাইলে, চড়েন ভিআইপি গাড়ি, খবরদারী করেন বহিরাগত কর্মকর্তা-কমচারীদের উপর। সব মিলিয়ে তালা হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থায় চলে এসেছে হ-য-র-ব-ল অবস্থা। হাসপাতাল সূত্র জানায়, তালা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটির জন্য ৩৪ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও পোস্টিং রয়েছে মাত্র ৬ জনের। ২৩১ জন কর্মচারীর পদ থাকলেও আছে ১৫৫ জন। হাসপাতালে নেই কোন অভিজ্ঞ ডাক্তার, নেই কোন সার্জন, এ্যানেসথেসিয়া, গাইনি, চক্ষু, কনসালটেন্ট ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ পোস্টিং নেই। এক্সরে মেশিনটিও বিকল রয়েছে মাসাধিককাল। এই অসংখ্য নেই এর ভিড়ে ভাল নেই জনপদের লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ। যে কারণে হাসপাতালে কোন জটিল রোগী আসলেই খুলনা মেডিকেল অথবা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে চরম ডাক্তার সংকট ও অসংখ্য নেই এর কারণে চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানান সেখানকার ডাক্তাররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডাক্তার থেকে শুরু করে ভূক্তভোগী রোগী সাধারণের একটি বড় অংশের অভিযোগ, তালা হাসপাতালের ক্যশিয়ার হাফিজুর রহমান (বর্তমানে প্রধান সহকারী) চাকরির শুরু থেকে অদ্যবধি প্রায় ৩০ বছর যাবৎ কর্মরত রয়েছেন হাসপাতালটিতেই। প্রতিমাসে নানা অজুহাতে ডাক্তার থেকে শুরু করে কর্মচারীদের বেতনের বড় একটি অংশ চলে যায় তার পকেটে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ক্যাশিয়ার হাফিজুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে দাম্ভিকতার সাথে বলেন, ৩০ বছর চাকুরী জীবনে মাত্র ৯ মাসের জন্য শ্যামনগর বদলি হয়েছিলাম বাকি জীবন তালা হাসপাতালেই আছেন, কেউ তাকে কিছু করতে পারেননি। তালা হাসপাতালের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কুদরত-ই-খূদা জানান, প্রায় সকল হাসপাতালে একই রকম ডাক্তার সংকট চলছে। ডাক্তার স্বল্পতার কারণে চিকিৎসা সেবা কিছুটা হলেও বিঘিতœ হচ্ছে, তবে তারা যথাসাধ্য চেষ্ট চালিয়ে যাচ্ছেন মানিয়ে নিতে। স্থানীয় প্রভাবশালী কর্মচারীদের প্রসঙ্গে তিনি জানান, অন্যান্য দপ্তরে স্ব-স্ব এলাকায় পোস্টিংয়ের নিয়ম না থাকলেও তাদের দপ্তরে এনিয়ে কোন বিধি নিষেধ নেই। এলাকাবাসী ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডাক্তার কর্মচারীরা জানান, নিয়োজিত ডাক্তারদের মধ্যে একমাত্র রাজীব সরদারই সারাক্ষণ ডিউটি করেন। বাকিদের মধ্যে ডাঃ আবু সাঈদ রিপন সপ্তাহে ৩ দিন ডিউটি করেন তালায় বাকি ৩ দিন অন্যত্র ডিউটি করেন। ডাঃ সাহারুল ইসলাম ও তার স্ত্রী রাবেয়া ও সপ্তাহের সব দিন হাসপাতালে থাকেননা। ডাঃ বন্যা দাশের পোস্টিং তালা হাসপাতালে থাকলেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালেই আসেননা। এছাড়া ডাঃ পুষ্পাঞ্জলী রায় সপ্তাহে ১/২ দিন হাসপাতালে আসলেও বাকী দিন গুলি তিনি কাটান অন্যত্র। কি এমন যাদু জানেন ঐ ডাক্তাররা? এছাড়া তাদের খুঁটির জোরটাই বা কোথায়? এমন প্রশ্ন এখন তালাবাসীর মুখে মুখে। তালা হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট বিকাশ কুমার পাল ওষুধ বন্টনে অনিয়মের ব্যাপারটি কৌশলে এড়িয়ে যান। এ প্রসঙ্গে কথা হয়, তালা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেবুন্নেছা খানমের সাথে। তিনি জানান, ডাক্তার সংকট থেকে শুর করে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে উপজেলাবাসী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এটা নিতান্তই দুঃখজনক ব্যাপার। এসব ব্যাপারে তিনি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার জানান, আমরা বারংবার বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি কিন্তু কাজ নাহওয়ায় তিনি নিজেও হতাশ। ভুক্তভোগী এলাবাসী সকল সংকট কাটিয়ে তালা হাসপাতালে গতিশীলতা ফেরাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।