অনলাইন ডেস্ক: সত্যিই যেন নরকের দরজা! বিশাল বড় দরজার মুখে জ্বলছে গনগনে আগুন। কোনো বিরতি নেই। জ্বলছে তো জ্বলছে। আর ভয়ঙ্কর সেই আগুনের লেলিহান শিখাই যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে নরকের কথা। সে কারণে এর নাম দেয়া হয়েছে ‘Door to hell’ তথা নরকের দরজা। নরকের দরজা (ইংরেজিতেঃ Door to hell) তুর্কমেনিস্তানের ড্রাভা শহরের একটি প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র। কারাকুম মরুভূমিতে অবস্থিত অগ্নিমুখটির ব্যাস ৭০ মিটার ও গভীরতা ২০ মিটার। আসলে সেখানে এক বিশাল গোলাকার গর্তের ভেতরে এই আগুন জ্বলছে। নরকের দরজা নামের গর্তটির অবস্থান তুর্কমেনিস্থানের কারাকুম মরুভূমির দারওয়েজা নামের এক গ্রামের কাছে। এই আগুনের উত্তাপ এত বেশি যে হাজার চেষ্টা করেও কেউ এর কাছাকাছি পাঁচ মিনিটের বেশি থাকতে পারে না। রাতে ভয়ংকর সুন্দর লাগে এ নরকের দরজাকে। অন্ধকারে অনেক দূর থেকেও জায়গাটা দেখা যায়। তখন এর শিখার উজ্জ্বলতাও বোঝা যায় ভালোমতো। বিশাল আকারের এ গর্তটা কিভাবে তৈরি হয়েছে তা নিয়ে রয়েছে নানা মত। কেউ বলেন, এটা একেবারেই প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়েছে। আবার কারো মতে, এটা তৈরির পেছনে রয়েছে মানুষের হাত। তবে ইতিহাস থেকে জানা যায়, এটি কোন প্রাকৃতিক গর্ত নয়। ১৯৭১ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রাকৃতিক গ্যাসসমৃদ্ধ দারউয়িজি এলাকায় অনুসন্ধানের সময় ক্ষেত্রটি আবিষ্কার করে। প্রথমে তারা মনে করেছিল এটি একটি তেল ক্ষেত্র তাই ড্রিলিং মেশিন দিয়ে তেল উত্তলনের জন্য সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে। কিন্তু পরে তারা সেখান থেকে বিষাক্ত গ্যাস বের হতে দেখে। গ্যাস অনুসন্ধানের সময় অনুসন্ধানকারীরা গ্যাসবহুল গুহার মধ্যে মৃদু স্পর্শ করলে দুর্ঘটনাক্রমে মাটি ধসে পুরো ড্রিলিং রিগসহ পড়ে যায়। যদিও এই দুর্ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। প্রাথমিকভাবে গবেষণা করে বিষাক্ত মিথেন গ্যাসের ব্যাপারে গবেষকরা নিশ্চিত হন। পরিবেশে বিষাক্ত গ্যাস প্রতিরোধ করার জন্য ভূতত্ত্ববিদরা তখন গ্যাস উদ্গিরণ মুখটি জ্বালিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের ধারণা ছিল এখানে সীমিত পরিমাণ গ্যাস থাকতে পারে। কিন্তু তাদের ধারণা ভুল প্রমান করে এটি ১৯৭১ সাল থেকে অনবরত জ্বলছে। ২০১০ সালের এপ্রিলে তুর্কমেনিস্তানের রাষ্ট্রপতি গ্যাসক্ষেত্রটি পরিদর্শন করে এটি বন্ধের কথা বলেন। তিনি বলেন তা না হলে ওই এলাকার অন্যন্য প্রকৃতিক গ্যাস উত্তলনের উপর এর প্রভাব পড়তে পারে। বর্তমানে তুর্কমেনিস্তান তার প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তলন বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করছে।