এক মাসের ছুটি নিয়ে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) দেশে ফিরবেন কি? যদি ফিরেন, তবে কবে ফিরবেন—এই প্রশ্ন বিভিন্ন মহলে ঘুরে ফিরে উপস্থাপিত হচ্ছে। সর্বশেষ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রধান বিচারপতির ছুটি শেষে দায়িত্ব গ্রহণকে ‘সুদূরপরাহত’ বলে আবারও মন্তব্য করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছুটি শেষে দায়িত্বে ফিরছেন না এস কে সিনহা। তিনি নতুন করে ছুটির আবেদন পাঠাতে পারেন। অথবা পদত্যাগপত্রও পাঠিয়ে দিতে পারেন। তার পারিবারিক সূত্রও এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সরকারের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এক মাসের ছুটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যান। বর্তমানে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত তার ছুটি আছে। ছুটি শেষে তার দায়িত্ব পালন করা না করা নিয়ে জনমনে ব্যাপক কৌতূহল আছে। কানাডাভিত্তিক একটি বাংলা অনলাইনের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারপতি সিনহা সরকারকে পদত্যাগ পত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন। ছুটি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার পদত্যাগ কার্যকর করার অনুরোধ জানাবেন তিনি। এদিকে রবিবার সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ সাক্ষাৎ করেন। তারা বেলা সোয়া ৩টায় বঙ্গভবনে যান এবং বিকাল পৌনে ৫টার দিকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। তিনি আগামী ২ ডিসেম্বর জুডিশিয়াল সম্মেলনে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানান। তিনি আগামী ২ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট দিবসের অনুষ্ঠানেও রাষ্ট্রপতিকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানান।
এ সময় রাষ্ট্রপতি বলেন, বিচার বিভাগ জনগণের বিচার পাওয়ার শেষ আশ্রয়স্থল। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্টসহ বিচার বিভাগের সব কর্মকর্তা ন্যায়নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে রবিবার সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, দেশে ফিরে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দায়িত্ব গ্রহণ সুদূরপরাহত। অন্য বিচারপতিরা যদি উনার (এস কে সিনহা) সঙ্গে না বসতে চান, তাহলে তিনি কীভাবে বিচার করবেন? তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউর সঙ্গে প্রধান বিচারপতির আসা না আসার কোনো সম্পর্ক নেই। এর আগে গত ১৪ অক্টোবরও এক ব্রিফিংয়ে মাহবুবে আলম প্রধান বিচারপতির পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণ সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছিলেন।
গত ২ অক্টোবর এক মাসের ছুটির কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। পরে ১৩ অক্টোবর বা তার কাছাকাছি সময়ে তার বিদেশ যাওয়া এবং ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে অবস্থান করার ইচ্ছা পোষণের বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় ১২ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে। সে হিসেবে আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ছুটি আছে।
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর অর্পণ করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয় হাই কোর্ট। আপিল বিভাগ হাই কোর্টের সে রায় বহাল রাখেন। গত ১ আগস্ট আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার লেখা রায়ে গণতন্ত্র, রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, সুশাসন, দুর্নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেন। এ পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন সরকারের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা ও সরকারপন্থি আইনজীবীরা। কেউ কেউ প্রধান বিচারপতির পদত্যাগও দাবি করেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং তার কিছু পর্যবেক্ষণ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব পাস হয়।
আপিল বিভাগের এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ। এরইমধ্যে আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, চলতি মাসেই রিভিউ আবেদন করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তার চাকরির মেয়াদ আছে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। তিনি গত ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।