নিজস্ব প্রতিবেদক : “সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান হিসাবে পরিচালনা করছেন একজন ভারতীয় নাগরিক। অপরদিকে ইউপি চেয়ারম্যান ইমাদুল ইসলাম দিনের পর দিন কুয়েতে অননুমোদিতভাবে বসবাস করছেন। তার অনুপস্থিতিতে তার ভাই ইউপি সদস্য আসাদুল ইসলাম ও প্যানেল চেয়ারম্যান বিকাশ সরকার দুইজনে পরিষদে নানা জালজালিয়াতিও করছেন।” মঙ্গলবার কুলিয়া ইউনিয়নের জনগণের পক্ষে সাতক্ষীরায় এক সংবাদ সম্মেলন করে লিখিতভাবে এসকল অভিযোগ করেন, একই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মোশাররফ হোসেন। এ সময় পরিষদের সাবেক সদস্য আবদুল গফফার, বর্তমান সদস্য রবিউল ইসলাম এবং গ্রামবাসী আবদুল হামিদ, শফিকুল ইসলাম, আবদার হোসেন, আবুল কাসেম, রমজান আলি, আবদুর রহিম, কৌশিক সরকার, মোমিন খাঁ, ক্ষিতীশ সরকার, গোষ্ঠ দাস, মুজিবর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, প্যানেল চেয়ারম্যান ভারতীয় নাগরিক বিকাশ সরকার একজন ফেনসিডিল চোরাচালান মামলার আসামি। বাংলাদেশে তার কোনো ভিটেমাটি নেইÑ জানিয়ে তিনি বলেন তিনি একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। সত্য গোপন করে তিনি ইউপি সদস্য হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তার দাবি- বিকাশের ভারতীয় নাম দেবাশীষ সরকার। বাবার নাম নির্মল চন্দ্র সরকার, মা ভগবতী সরকার। পশ্চিমবাংলার বাদুড়িয়া বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তারা। তাদের বাড়ি নং ০১৮৭, সেখানে বিকাশ ওরফে দেবাশীষের ভোটার নম্বর ৯৮৩। সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল চেয়ারম্যান বিকাশ এবং চেয়ারম্যান ইমাদুল ইসলামের অপসারণ দাবি করেন তারা। তবে প্যানেল চেয়ারম্যান বিকাশ সরকার এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “আমি জন্মগতভাবে বাংলাদেশের নাগরিক। আমার সাত পুরুষের বসবাস এখানে। আমি এখানকার একজন নির্বাচিত সদস্য। কে কিভাবে আমাকে ভারতীয় নাগরিক বানালো তা আমার জানবার বিষয় নয়।” সংবাদ সম্মেলনে মোশাররফ হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান ইমাদুল ইসলাম দীর্ঘদিন যাবত সপরিবারে কুয়েত প্রবাসী। এতে পরিষদ যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, নির্বাচিত হবার পর তিনি ২৪ মে মিটিং করে ইউপি সদস্য বিকাশ সরকারকে প্যানেল চেয়ারম্যান করেন। এরপর তিনি কুয়েত যান এবং সেখানে সফটরক নামের একটি নিজস্ব গার্মেন্টস ব্যবসা পরিচালনা করেন। চেয়ারম্যান ইমাদুল নিজ গ্রামের ঠিকানা ব্যবহার না করে ঢাকার উত্তরার ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান এভাবে সত্য গোপন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে মোশাররফ হোসেন বলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আইন অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যান ও মেম্বর বছরে ৯০ দিনের বেশি ছুটি নিতে পারেন না। অথচ চেয়ারম্যান ইমাদুল ইসলাম ২০১৬ সালে তিন দফায় ১১১ দিন ছুটি নিয়েছেন। তিনি পরপর ৩বার মাসিক মিটিংয়ে থাকেননি। এমনকি উপজেলা পরিষদের মিটিংয়ে বছরে একবারের বেশি থাকেন নি। এসবই আইনের লংঘন বলে উল্লেখ করেন তিনি। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির কারণে পরিষদের সামাজিক ও আইনশৃংখলা বিষয়ক ক্ষতি হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই সুযোগে প্যানেল চেয়ারম্যান বিকাশ ও চেয়ারম্যানের ভাই আসাদুল ইসলাম তার স্বাক্ষর জাল করছেন। এমন কি ভুয়া রেজুলেশনও করছেন। তারা ভুয়া প্রকল্পও পাঠাচ্ছেন।” এদিকে, প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালনকারী ইউপি সদস্য বিকাশ সরকার বলেন, চেয়ারম্যান বিভাগীয় কমিশনারের অনুমতি নিয়ে দেশের বাইরে গেছেন। নিয়মিত ছুটিও নিয়েছেন তিনি। জালজালিয়াতির অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান ও তার বিরুদ্ধে একটি মহল মিথ্যা প্রচার দিচ্ছে’। জানতে চাইলে চেয়ারম্যান ভ্রাতা ইউপি সদস্য আসাদুল ইসলাম বলেন, তার ভাই সরকারের অনুমতি নিয়ে স্টেশন ত্যাগ করেছেন। তিনি এখন কুয়েতে নন ঢাকাতে আছেন বলে দাবি করেন তিনি। তার এই বক্তব্য খন্ডন করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “ইমাদুল ইসলামের পাসপোর্ট পরীক্ষা করলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। ইমাদুল ইসলাম বছরের ১০ মাস থাকেন কুয়েতে।”