সমকামী আশ্রয়প্রার্থী ও শরণার্থীদের জন্য বিশ্বের প্রথম সেফ হাউজ (নিরাপদ আশ্রয়) খোলা হয়েছে বৃটেনে। সেফ হাউজটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরুর আগেই অক্টোবরে। নতুন এই সেফ হাউজে সবার আগে বাংলাদেশি রশিদ ও এল সালভাদরের মারিয়া আশ্রয় পেয়েছেন। এ খবর দিয়েছে জি-সিন।
খবরে বলা হয়, সমকামী, উভকামী, ট্রান্সজেন্ডার ও উভলিঙ্গতাবিশিষ্ট মানুষদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান মাইক্রো রেইনবো ইন্টারন্যাশনাল (এমআরআই) সেফ হাউজটি তৈরি করেছে। নভেম্বরে আন্তর্জাতিক আইন সংস্থা ওয়েইল, গটশাল অ্যান্ড ম্যাঞ্জিস এলএলপির লন্ডন কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সেফ হাউজটির উদ্বোধন করা হয়।
উল্লেখ্য, আইন সংস্থাটি এমআরআইকে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত ২৩০ ঘণ্টার বেশি সময় প্রো-বোনো (কম খরচে বা বিনা খরচে দেয়া আইনি সেবা) সেবা দিয়েছে।
খবরে আরও বলা হয়, যুক্তরাজ্যে আসা অনেক সমকামী আশ্রয়প্রার্থী এখনো নিরাপদ নয়। বাংলাদেশি রশিদ যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর বেশ কয়েক মাস গৃহহীন অবস্থায় ঘুরে বেড়ায়। মারিয়াকেও সম্মুখীন হতে হয়েছে নানা দুর্ভোগের। মারিয়া বলেন, ‘আমাকে আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে থাকার জন্য যেই জায়গা দেয়া হয়েছিল, সেখানে আমি প্রায় প্রতিদিনই শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হতাম। একবার একজন আমার ওপর একটি পাত্র ছুড়ে মারে। আমি কখনোই নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারতাম না। কেউ আমাকে আঘাত করার চেষ্টা করছে কিনা এ নিয়ে আমি সব সময় উদ্বিগ্ন থাকতাম। ’
এমআরআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মী সেবাস্টিয়ান রক্কা বলেন, বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশে সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। ওইসব দেশ থেকে প্রতি বছর এক হাজারের বেশি সমকামী আশ্রয়প্রার্থী আসে যুক্তরাজ্যে।
এমআরআই প্রতি বছর ১৫০ জন এমন আশ্রয়প্রার্থী ও শরণার্থীকে সহায়তা দান করে থাকে। তাদের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়, বিভিন্ন সাপোর্ট গ্রুপে যোগ দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়, চাকরি পেতে সহায়ক এমন প্রোগ্রামের আয়োজন করে থাকে। এমআরআইয়ের এই পদক্ষেপগুলোকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে শুধু একটি সেফ হাউজের অভাব ছিল। আর আমরা এ বিষয়টি নিয়ে খুবই আনন্দিত যে, যুক্তরাজ্যে প্রথম সেফ হাউজটি কার্যকর হয়েছে। ’
এমআরআইয়ের সমকামীদের জন্য নির্মিত এই সেফ হাউজ নিয়ে মারিয়া বলেন, আমি এখানে আসার পর সবার আগে কিছুক্ষণ পরিত্রাণের কান্না করি। এরপর আমি আমার কাপড়-চোপড় ও হাই-হিল জুতাগুলো বের করি। আমি কয়েক মাস ধরে এগুলোর ওপর একবারও চোখ বুলাতে পারিনি।
এমআরআইয়ের হাউজিং প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মৌদ গোবা বলেন, মারিয়া এক বছরের বেশি সময় আগে আশ্রয় চায়। এখনো সে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। রশিদ দুই সপ্তাহ আগে তার আশ্রয়প্রার্থিতার জন্য সাক্ষাৎকার দিয়েছে। আশ্রয় পাওয়ার জন্য আবেদন করার তারিখ নির্ধারণ করতে তাকে এক বছরেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। তাদের আরো অনেক কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তবে এখন অন্তত তাদের আর ঘুমানোর জায়গা বা কারো নির্যাতনের শিকার হওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। এমআরআইতে তারা এমন কাউকে পেয়েছে যারা তাদের সঙ্গে আশ্রয়ের এই যাত্রার সঙ্গী হবে। ’
ওয়েইল এর প্রো বোনো অ্যান্ড সিএসআর বিভাগের প্রধান রবার্ট পওয়েল বলেন, এমআরআইকে তাদের এই অসাধারণ প্রকল্পে প্রো বোনো আইনি পরামর্শ দেয়াটা আমাদের জন্য একটি আনন্দময় অভিজ্ঞতা ছিল। এটা নিশ্চিত যে, আমাদের আইনজীবীরা সমকামীদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় তৈরিতে বাস্তব ও ইতিবাচক একটি সামাজিক কর্মকা-ে সহায়তা করেছে। আমরা এমআরআইকে ২০১৮ সালে এমন আরো সেফ হাউজ নির্মাণে সহায়তা করবো।
প্রথম সেফ হাউজটিতে মাত্র চারজন মানুষের থাকার জায়গা আছে। একটি দ্বিতীয় সেফ হাউজও নির্ধারিত করা হয়েছে। এটি আগামী ডিসেম্বরে খোলা হবে। ২০১৯ সালের আগে কমপক্ষে ১৫০ জন সমকামী আশ্রয়প্রার্থীকে এমআরআইয়ের এরকম বিভিন্ন সেফ হাউজ প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে।