সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ পদত্যাগ করার পরিকল্পনা করছেন। আগামী সপ্তাহে তিনি পদত্যাগ করে তাঁর ছেলে ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানকে নতুন বাদশাহ ঘোষণা করবেন। ছেলেকে ক্ষমতা দিয়ে ৮২ বছর বয়সী সালমান আলংকারিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং পবিত্র স্থানগুলোর (মক্কা-মদিনা) তত্ত্বাবধায়ক থেকে যাবেন। রাজপরিবারটির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইল অনলাইন এ দাবি করেছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ডেইলি মেইলের ‘এক্সক্লুসিভ’ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, চলতি মাসের শুরুতে রাজপরিবারের ৪০ জন যুবরাজ ও মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার নির্দেশ দিয়ে ক্ষমতা গ্রহণের চূড়ান্ত পদক্ষেপটি নেন ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান। আর বাদশাহর দায়িত্ব নিয়েই প্রথমে শত্রুরাষ্ট্র ইরানের মনোনিবেশ করবেন তিনি। শিয়া দেশটিকে শায়েস্তা করতে এরই মধ্যে ইসরায়েলকে জোট বাঁধার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন সম্ভাব্য বাদশাহ মুহাম্মদ বিন সালমান, যাঁকে পশ্চিমা গণমাধ্যম সংক্ষেপে ‘এমবিএস’ লিখে থাকে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘যদি নাটকীয় কিছু না ঘটে, তাহলে বাদশাহ সালমান আগামী সপ্তাহে এমবিএসকে সৌদি আরবের বাদশাহ হিসেবে নিয়োগের ঘোষণা দেবেন। আর পদত্যাগের পর বাদশাহ সালমান ইংল্যান্ডের রানির মতো (আলংকারিক রাষ্ট্রপ্রধানের) দায়িত্ব পালন করবেন। তবে তিনি বর্তমান উপাধি ‘পবিত্র স্থানগুলোর জিম্মাদার’ পদে থেকে যাবেন।
৩২ বছর বয়সী মুকুটধারী যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) চলতি মাসের শুরুতে সিংহাসনে বসার পথে চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে ৪০ জন যুবরাজ ও মন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলছে। গ্রেপ্তারের পর তাঁদের রাজধানী রিয়াদের বিলাসবহুল পাঁচতারা হোটেল রিজ কার্লটন হোটেলে রাখা হয়েছে। প্রকাশিত একটি স্থিরচিত্রে দেখা গেছে, ওই হোটেলের মেঝেতে বিছানার চাদরহীন খালি তোশকে ঘুমিয়ে আছেন বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত রাজপরিবারের সদস্যরা।
রাজপরিবারের শীর্ষস্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল দাবি করেছে, ‘যুবরাজ মুহাম্মদ বাদশাহর দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি মনোযোগ ঘুরিয়ে দেবেন ইরানের দিকে। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসাম্রাজ্যে সৌদি আরবের দীর্ঘদিনের শত্রু ইরানকে তিনি শায়েস্তা করতে চান। আশঙ্কা রয়েছে, তিনি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। ’ মুহাম্মদ এ জন্য ইসরায়েলকে নিজেদের পক্ষভুক্ত করতে চান। তাঁর ইচ্ছা ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সহায়তায় ইরান সমর্থিত লেবাননি মিলিশিয়া হিজবুল্লাহকে ধ্বংস করা।
রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রটি ডেইলি মেইলকে বলেছে, “এমবিএস মনে করেন, তাঁকে অবশ্যই ইরান ও হিজবুল্লাহর ওপর আঘাত হানতে হবে। আর এমবিএস তাঁর এই পরবর্তী টার্গেটের জন্য রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের পরামর্শও উপেক্ষা করছেন। তাঁর এই চরিত্রের কারণেই কুয়েতের শাসক একবার তাঁকে ‘অদম্য ষাঁড়’ বলেছিলেন। ”
এমবিএস লেবাননে হামলার পরিকল্পনা করছেন। তবে এ জন্য তিনি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সহায়তা নিতে চান। এরই মধ্যে তিনি ইসরায়েলকে কয়েক কোটি ডলারের একটি প্রস্তাব দিয়েছেন, যদি রাজি হয়। কারণ এমবিএস ইসরায়েল ছাড়া লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ করতে রাজি নন। আর তাঁর প্ল্যান বি (দ্বিতীয় পরিকল্পনা) হচ্ছে সিরিয়ায় হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ করা।
গত সপ্তাহে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সৌদি টেলিভিশনে বিবৃতির মাধ্যমে পদত্যাগ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, যুবরাজ মুহাম্মদ ডেকে এনে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন। সৌদি টেলিভিশনে সাদ আল হারিরি ওই পদত্যাগী ভাষণে বলেছিলেন, তিনি গুপ্তহত্যার আশঙ্কায় রয়েছেন। এ জন্য তিনি ইরান ও হিজবুল্লাহকে অভিযুক্ত করেন। গত ৪ নভেম্বর রাজধানী রিয়াদে একটি ব্যর্থ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়; যদিও ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়েনি।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১২ নভেম্বর ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সৌদি বাদশাহ সালমানের সিংহাসন ত্যাগের গুজব সত্য নয়। সৌদি সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ব্লুমবার্গে একটি চিঠির জবাবে বলেছিলেন, ৮২ বছর বয়সী বাদশাহ সালমান ‘যথাযথ’ শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ করছেন। তিনি বলেন, যারা এ ধরনের কথা বলে তারা রাজকীয় রীতি-নীতি বোঝে না।
অর্থের বিনিময়ে মুক্তি পাচ্ছেন যুবরাজরা : সৌদি সরকারের একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সৌদি কর্তৃপক্ষ দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত যুবরাজ, মন্ত্রী, ব্যবসায়ী ও ধনকুবেরদের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছতে কাজ করছে। সৌদি সরকার তাঁদের কাছে মুক্তির বিনিময়ে সম্পদ ও নগদ অর্থ চেয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে যুবরাজ আলওয়ালিদ বিন তালালও রয়েছেন। তিনি রাজপরিবারের সুপরিচিত ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের একজন।
সূত্র মতে, এরই মধ্যে একজন ব্যবসায়ীর চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পর তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক লাখ সৌদি রিয়াল উত্তোলন করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও ব্যবসার কয়েক বিলিয়ন রিয়ালের শেয়ারের মালিকানা ছেড়ে দিতে সম্মত হয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে তাত্ক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া সমঝোতা চুক্তির কথাটি প্রকাশও করা হয়নি। এরই মধ্যে সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগে এ পর্যন্ত ২০৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।