নিজস্ব প্রতিবেদক: তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নে সরকারের ফেয়ার প্রাইজ কর্মসূচির কার্ড বিতরণে চরম দুর্নীতি ও দলীয়করণের অভিযোগ উঠেছে। কার্ড দেওয়ার নামে অনেকের কাছ থেকেই নেওয়া হয়েছে টাকা। ওজনেও দেওয়া হচ্ছে কম। আবার, অযোগ্যরাও পেয়েছেন কার্ড। শুধু কি নগরঘাটা ইউনিয়ন, একইভাবে উপজেলার জালালপুর ও তেতুলিয়া ইউনিয়নেও দরিদ্রদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির এই চাল নিয়ে চালবাজি করছেন জনপ্রতিনিধিরা। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বর প্রফুল্ল মন্ডল ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বর ঝর্ণা বেগম একটি তালিকা তৈরি করে চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মোড়লের কাছে দেন। কিন্তু বিগত ইউপি নির্বাচনে তাকে সমর্থন না করায় চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মোড়ল ৯নং ওয়ার্ডের ৭২জনের তালিকা থেকে দিনমজুর অন্তত ২৪জনের নাম বাদ দিয়ে তার নিজের লোকজনের নাম বসিয়েছেন। শুধু ৯নং ওয়ার্ড নয়, ইউনিয়নের অন্যান্য ওয়ার্ডের ক্ষেত্রেও একইভাবে তালিকা পরিবর্তন করে নিজের লোকজনের নাম বসিয়েছেন চেয়ারম্যান। আর ট্যাগ অফিসার রফিকুল ইসলাম তাতে স্বাক্ষর করে অনুমোদন করেছেন। যদিও নিয়মানুযায়ী প্রকাশ্যে মাইকিং করে ফেয়ার প্রাইজ কার্ডের তালিকা তৈরির কথা। প্রথমে প্রস্তুতকৃত ৯নং ওয়ার্ডের তালিকা থেকে দেখা গেছে, ক্রম অনুযায়ী এক নম্বরে রয়েছেন অরুন বিশ্বাস। তার বাবার নাম ললিত বিশ্বাস, গ্রাম হরিখোলা। জাতীয় পরিচয়পত্র নং- ১৯৯৪৮৭১৯০৭১০০০০০১। দুই নম্বরে রয়েছেন শ্রী জগদীষ চন্দ্র মন্ডল। তার বাবার নাম দুলাল চন্দ্র মন্ডল, গ্রাম হরিখোলা। জাতীয় পরিচয়পত্র নং- ৮৭১৯০৭১৪৮৮৮০২। কিন্তু ভোট না দেওয়ায় চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান তাদের নাম বাদ দিয়ে ক্রম এক-এ পংকোজ মন্ডল ও দুই-এ সুধাংশর নাম বসিয়েছেন। শুধু দুটি নয়, ৯নং ওয়ার্ডের অন্তত ২৪জনের নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে নিজের লোকজনের নাম বসিয়েছেন তিনি। কারও কারও কাছ থেকে নিয়েছেন টাকা। আবার চাল দেওয়ার সময়ও ৩০ কেজির পরিবর্তে দিচ্ছেন ২৮ কেজি করে। আর এসব কিছুর প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কাজ করছে পরবর্তীতে চেয়ারম্যান কর্তৃক তৈরি করা নতুন তালিকা। নতুন তালিকায় নাম ও বাবার নাম বদলালেও তারা বদলাতে ভুলে গেছেন জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর। আর এটা খুবই স্বাভাবিক যে, একই পরিচয়পত্র নম্বর দু’জনের হওয়ার সুযোগ নেই। এলাকাবাসীর দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া গরীবের চাল নিয়ে চালবাজি করার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত হোক। যাতে আর কেউ কখনও গরীবের হক নিয়ে খেলা করতে না পারে। এ ব্যাপারে নগরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বলেন, তালিকা তৈরিতে অনিয়ম করা হয়নি। এখানে ডিলার দু’জন। তারা একই বাজারে ব্যবসা করে। তাদের নিয়ে প্রথমে একটু ঝামেলা হয়েছিল, পরে ইউএনও এসে ওয়ার্ড ভাগ করে দেওয়ায় তা নিষ্পত্তি হয়ে যায়। এখন আর কোন ঝামেলা নেই। ফেয়ারপ্রাইজ কর্মসূচির নগরঘাটা ইউনিয়ন সভাপতি ও ট্যাগ অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, তালিকা নিয়ে স্বজনপ্রীতির বিষয়টি তার জানা নেই। কিন্তু একই ওয়ার্ডের দুটি তালিকাতেই তার স্বাক্ষর আছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে বলে জানান। এদিকে, উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নে ফেয়ার প্রাইজ কর্মসূচির তালিকা তৈরি করতে গিয়ে একইভাবে দলীয়করণ ও স্বজন প্রীতির অভিযোগ উঠেছে। জালালপুর ইউনিয়নের তালিকায় এমন অন্তত ১৫০জনের নাম রয়েছে, যারা ফেয়ার প্রাইজের কার্ড পাওয়ার যোগ্য নন, ধনসম্পদের মালিক। আবার তেতুলিয়া ইউনিয়নে ফেয়ারপ্রাইজের কার্ড বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। যেনতেনভাবে তালিকা করে পরে সেই কার্ড বিক্রি করে দিয়েছেন ইউপি চেয়্যারম্যান। এদিকে, তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরিদ হোসেন জানান, তিনি সরুলিয়া ইউনিয়নের তিনজন কার্ডধারীর বিপক্ষে অভিযোগ পেয়েছিলেন। তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এছাড়া জালালপুরে কিছু কার্ডধারীর বিপক্ষে অভিযোগ উঠেছিল, সেটাও নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।